ইবলিসের আত্নকথা : ১

ইবলিসের আত্মকথা ঃ

 হে বঙ্গ দেশের অধিবাসীগন! আমার শয়তানী শুভেচ্ছা গ্রহন কর। তোমরা হয়তো ভাবতে পারো কেনো আমি তোমাদেরকে তুমি বলে সম্বোধন করলাম! আসলে বয়স হয়েছে তো- অনেক অনেক বয়েস। হয়তো লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর কিংবা তার চেয়েও বেশী। তোমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) থেকেই লক্ষ কোটি বছরের বড় আমি। তোমরা হয়তো অনেকেই জানো-আমি নুরের তৈরী জ্বিন জাতির অন্তভূর্ক্ত। পরে ফেরেশতাদের গোত্রভূক্ত হই এবং একসময় তাদের নেতা নির্বাচিত হই। তোমাদের অতি পরিচিত জিবরাইল, আজরাইল কিংবা মিকাইল-আমারই অধীনস্ত শিষ্য ছিলো এক সময়। আদম (আঃ) কে নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় আমি আল্লাহ পাকের সামনে যে অহংকার প্রদর্শন করেছিলাম তা ব্যতিত আমার জীবনে কোন গুনাহ নেই। বরং ইবাদত কিংবা বন্দেগীতে কোন সৃষ্টি এযাবৎকাল আমাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আসমান, জমিন, আরশ কিংবা জান্নাতের এমন এক তিল যায়গাও খুঁজে পাবে না যেখানে এই ইবলিশ মিয়ার সেজদা পড়েনি।
তোমাদের হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে- আজ এতো বছর পর আমি কেনো পত্র লিখতে বসলাম আর কেনই বা দুনিয়ার এত্তোসব হাজার হাজার জাতি গোষ্ঠী, বর্ন, সম্প্রদায় বাদ দিয়ে তোমাদেরকে বেছে নিলাম? আসল কথা হলো তোমাদের আাচার আচরন এবং ব্যবহারে আমার ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আমি ইদানিং খুবই অপমানিত বোধ করছি তোমাদের কারনে- মনে হচ্ছে তোমরা আমার সব ইজ্জত পাংচার করে দিয়েছো। আমি সময় পেলেই এখন শয়তানী বাদ দিয়ে একা একা ঘুরি। বড় কোন বট গাছ কিংবা রেনডি গাছ দেখলে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর আমার নূরানী চোখ বিস্ফোরিত করে তোমাদের শয়তানী দেখি আর মনে মনে বলি- ইয়া আল্লাহ- এই সব কুলাঙ্গার এত্তোসব হারামীপনা শিখলো কোত্থেকে! বিশ্বাস করো তোমাদের ইতরামি দেখে মাঝে মাঝে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ওটা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারন আল্লাহর হুকুমে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতেই হবে!
আচ্ছা তোমরা কি একবারও ভেবে দেখেছো যে, কিভাবে সকাল-সন্ধা-রাত বিরাতে তোমরা আমার ওপর জুলুম করছো? তোমরা না জেনেই আমার ওপর মিথ্যারোপ করছো। তোমাদের সকল কুকর্মের জন্যই তোমরা আমাকে দায়ী করো-অথচ অনেক কিছু আমি এখন পর্যন্ত জানিনা এবং কিয়ামত পর্যন্ত জানতেও পারবো না। কারন আমার মন মস্তিষ্ক মুলত জ্বীন জাতির মতো। আমার জ্ঞান গরিমা ফেরেশতাদের মতো। আমাকে আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান এবং ক্ষমতা দিয়েছেন আমি ইচ্ছে করলেই সেই জ্ঞান ও ক্ষমতার আওতা অতিক্রম করতে পারবো না। কিন্তু তোমাদের জ্ঞান অসীম। ৪টি বিষয় অর্থাৎ হায়াত, মউত,রিজিক ও দৌলত ছাড়া তাবৎ দুনিয়ার সবকিছু তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। ফলে তোমাদের ক্ষমতাও অসীম। তোমাদের সেই অসীম জ্ঞান এবং অসীম ক্ষমতা এক যোগে প্রয়োগ করে যেসব কুকর্ম কর তা আমি ইবলিস কিংবা অন্য কোন ফেরেশতা অথবা জ্বীন জাতি কল্পনাও করতে পারে না। এই যেমন ধরো-জেনা, ব্যভিচার, বিকৃত যৌনাচার, বলাৎকার কিংবা নারী – নারী, পুরুষ-পুরুষের বিকৃত মেলামেশার প্রসঙ্গ আসলে তোমরা আমাকে দায়ী করে বলো শয়তানের প্ররোচনায় এসব হয়! ছি ছি ছি! আামি তোমাদের নির্বুদ্ধিতা দেখে আপন মনে হাসাহাসি করি আর বলি-কি বোকারারে বাবা! পাজী লোক গুলো বলে কি-শয়তান তো ওসব জানেই না- না জানলে বুদ্ধি দেবে কিভাবে ? তোমরা বোধ হয় ফাঁপড়ে পড়ে গেলে! আচ্ছা – একটু ব্যাখ্যা করে বললেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
মানুষ, জানোয়ার, পক্ষীকুল কিংবা উদ্ভিদ জগতে বংশ বিস্তার হয় যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এই জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক ধরনের আকর্ষন তোমাদের শরীর মনও মানষিকতায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যৌন সঙ্গমে তোমরা তৃপ্তি লাভ করো। ফলে পার্থিব অন্যান্য তৃপ্তির জন্য তোমরা যেরুপ অনাচার ও অনাসৃষ্টি কর তদ্রুপ এই ক্ষেত্রেও করো- তবে বাড়াবাড়িটা হয়ে যায় অন্য যেকোন কিছুর চাইতে বেশি। আমি বাপু ওসব একদম বুঝিনা-কারন জীবনে যৌন উত্তেজনা বোধ করার মতো দেহ কিংবা রক্ত, মাংশ আমার নেই। যখন ফেরেশতা ছিলাম তখন আমাদের কোন লিঙ্গ ছিলো না। অর্থাৎ কোন পুরুষ বা মহিলা শ্রেনীর ফেরেশতা ছিলোনা। লিঙ্গ বিহীন হবার কারনে লিঙ্গ সংক্রান্ত লোভ, লালসা, কাম, উদ্দীপনা, ক্রোধ কিংবা জ্ঞান-বুদ্ধি কিছুই আমার ছিলো না। পরবর্তীতে অভিশপ্ত শয়তানে পরিনত হবার পরও আল্লাহ আমার জন্য মহিলা শয়তান পয়দা করেননি। কিংবা বংশ বিস্তারের কোন বিকল্প ব্যবস্থা করেননি। ফলে শয়তান হিসেবে আমি এক অনন্য সৃষ্টি। আল্লাহর দেয়া জ্ঞান এবং ক্ষমতাবলে আমি একক অবস্থানে থেকেও সকল প্রানীর অন্তরে একই সঙ্গে হানা দেবার ক্ষমতা রাখি।
এই দুনিয়ায় নারী পুরেুষের যৌন সম্পর্ক নিয়ে যতো অনাসৃষ্টি হয়েছে-যতো যুদ্ধ কিংবা প্রানহানি অথবা যত সম্পদ নষ্ট হয়েছে তা মানুষের অন্যান্য সকল অপরাধ একত্র করলেও হবে না। অথচ কাজটি তোমরা কর একান্তই তোমাদের নফসের কারনে- এর সঙ্গে শয়তানের কোন যোগসাজস নেই-শয়তান ওসব জানেও না বুঝেও না। তোমরা যদি কাউকে দায়ী করতে চাও তবে করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমাদের মধ্যকার এক মস্তবড় হারামী যে কিনা জন্মেছিলো আজ থেকে প্রায় সাড়ে চব্বিশ শত বছর আগে। ওর নাম বৎসায়ন। কামসূত্র নামে একটি বই রচনা করে শয়তানটা ১২৫০ প্রকারের রতিক্রিয়া তোমাদেরকে শিখিয়ে গেছে। আর তোমরা সারা দুনিয়ার মানুষেরা সেই বই গত প্রায় চব্বিশ শত বছর ধরে মাথায় করে নাচছো। আর যায়গা বেজায়গায় রতিক্রিয়া করছো- এবং এই নিরপরাধ ইবলিশ বেটাকে দায়ী করছো। একবার বুকে হাত দিয়ে বলোতো- কাজটা ঠিক হচ্ছে কি না ?
তোমরা ঘুষ খাও-মদ খাও। ইদানিং আবার ফেন্সিডিলও খাচ্ছ। তোমরা তাস, পাশা জুয়া খেলো। তালের রসকে তাড়ি বানিয়ে নেশা করো। ভাত পচিয়ে বাংলা মদ বা চোলাই মদ বানাও। দুধের সাথে পানি মেশাও। মাছ তরকারীতে ফরমালিন দাও; ওজনে কম দিয়ে বেশী মুনাফা কর । এত্তোসব কান্ড কারখানা করার মতো বুদ্ধি আল্লাহ ইবলিসকে দেননি। এসবই তোমাদের আবিস্কার। তোমরা কথায় কথায় অহংকার করো এবং নিজেকে খোদা বলে জাহির করো। আমার বন্ধু ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসীস মুসা নবীর সঙ্গে জিদ করে কিভাবে খোদা দাবী করেছিলেন সেই কাহিনী তোমরা তার মুখ থেকে শুনলে বুঝতে পারবে তার আর তোমাদের মধ্যে কতটুকু মিল-অমিল রয়েছে। আগামীতে সময় সুযোগ পেলে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলবো। এবার বন্ধু ফেরাউনকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে আমি বিদেয় নিচ্ছি।

 ইতি-
তোমাদের দ্বারা অপমানিত, লাঞ্চিত এবং বঞ্চিত এক হতভাগ্য বান্দা-ইবলিস।

সংগ্রহীত 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হক্কানী উলামায়ে কেরাম পীরমাশায়ীখ দের ও আহলে সুন্নাত অয়াল জামাত এর উপর মিথ্যারুপ ভণ্ডামির জবাব

তথাকথিত আহলে হাদীসদের ভন্ডামী

আখেরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু'আ মনির হুসাইনের বিশ্ব ইজতেমা বিরুধী পোস্টের জবাব ০১