ফেরাউনের আত্মকথা ঃ

ফেরাউনের আত্মকথা ঃ

((গত কাল ইবলিশের মহা মুল্যবান আফসুসের কথা শুনেছেন আর এই কথাও সে বলেছে তারপরে ফেরাউন কথা বলবে তাই তার মহামুল্যবান কথাগুলি তুলে ধরলাম তারআগে গতকালের ইবলিশের বয়ান টা দেখে নেয়া যেতে পারে))

হে বাঙ্গালী বঙ্গালবৃন্দ ! তোমাদের সাথে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাঁধছে। তোমরা যে কেবল বাঙ্গালী-মানুষ নও তা আমি জেনেছি তোমাদের কবি গুরুর নিকট থেকে। তোমাদের মতো শংকর অর্থাৎ বহু রং চং, আকার- আকৃতি এবং ত্যাড়া ব্যাড়া জাতি পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলে নেই। সেই অনাদী কাল থেকে – অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে যখন সবে কলি যুগ আরম্ভ হয়েছে ঃ বঙ্গে তখন একজন রাজা ছিলো। নাম জগদত্ত। সম্ভবত তিনিই তোমাদের প্রথম রাজা। রাজা জগদত্তের আমলেই মহা ভারতের যুদ্ধ শুরু হয় এবং রাজা সদলবলে সে যুদ্ধে গেলেন কৌরবদের পক্ষ অবলম্বন করার জন্য। যুদ্ধে কৌরবরা পরাজিত হলে পঞ্চ পান্ডবদের সৈন্য সামন্তরা জগদত্তসহ তোমাদের সকল যোদ্ধার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়। এরপর তোমাদের নারীদেরকে বান্দী বানিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে থাকে। ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যে জীবন তোমরা শুরু করেছিলে তা আজ অবধি একই ধারায় চলছে।
সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শক্তিশালী রাজা মহারাজা, সম্রাট কিংবা ফেরাউনদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে আর্য, অনার্য, শাক, হুন, সোমটিক, মঙ্গোলীয়, তুর্কী, ডাচ, পর্তূগীজ, ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক তোমাদের এখানে এসে তোমাদের দূর্বলতা, কলহ, বিবাদ আর ভীরুতার সুযোগ নিয়ে রাতারাতি তোমাদের মালিক হয়ে বসেছিলো। তারা এসেই তোমাদের মহিলাদেরকে কব্জা করতো। ফলে যুগে যুগে তোমাদের ভূমিতে যে শংকর প্রজাতির শিশু পয়দা হয়েছে তা অন্য কোথাও হয়নি। এ কারনে তোমরা প্রচন্ড অস্থির! কেউ কাউকে বিশ্বাস করোনা, এমনকি নিজেকেও না। তা ছাড়া অর্ন্তদ্বন্দ্ব, হানাহানি, নীচুতা, অসততা, অপরকে ছোট করা, কাজের চেয়ে বেশী কথা বলা, ভীরু মন, দূর্বল স্বাস্থ্য ইত্যাদি তোমাদের জাতীয় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভূখন্ডে তোমরা একটি পরিবার দেখাতে পারবে না যারা একাদিক্রমে শত শত বছর ধরে সম্মান, মর্যাদা এবং দাপটের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করেছে। তোমরাই একমাত্র জাতি যারা পথের ফকিরকে ধরে এনে রাজা বানাও- আবার কয়দিন পর সেই রাজাকে কান ধরে বের করে দাও। কোন কিছুই তোমাদের বেশী দিন ভালো লাগেনা। তোমরা যত পদের খাবার টক, ঝাল, মিষ্টি এবং লবন দিয়ে মাখিয়ে খাও তা অন্য কোন দেশে খাওয়া হয় না। ফলে সারা বছর তোমাদের পেট খারাপ থাকে। প্রাকৃতিক কর্মাদি সারার সময় তোমরা যেভাবে কোতাকুতি এবং হা হুতাস কর তা অন্য কোন জাতি করেনা। তোমাদের বেশিরভাগ লোকের শরীরে গুড়া কৃমির সংক্রমন রয়েছে। অথচ সেগুলো ধ্বংশের জন্য আল্লাহ যে তোমাদেরকে বিচিকলা দিয়েছেন তা তোমরা খাওনা। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে- রাত বিরেতে, জায়গা-বেজায়গায় তোমরা হঠাৎ হঠাৎ অস্থির হয়ে লাফালাফি শুরু কর।
তোমাদের সম্পর্কে আমি এতো কথা বললাম এ কারনে যে-গত বেশ কয়েক দশক ধরে লক্ষ্য করছি-তোমরা তোমাদের জাতির ক্ষমতাশালী লোকদের কাউকে কাউকে আমার সঙ্গে তুলনা করছো। কত বড় স্পর্ধা- যারা আমার অধীনে কর্মচারী হওয়া তো দুরের কথা- আমার রাজধানীতে নাগরিক হিসেবে বসবাস করার যোগ্যতা সম্পন্ন নয়- তাদেরকে তুলনা করছো আমার সঙ্গে? তোমরা কি জানো আমি কে? কোথায় আমার বাড়ী! কে আমার পিতা? কেমন রক্ত আমি ধারন করি-আমার শিক্ষা দীক্ষা কিরুপ ? আমার আমলে প্রজারা কেমন ছিলো? কেনো আমাকে মিশরের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফেরাউন রামেসীস দি গ্রেট বলা হয়? কেনোই বা আমার পতন হলো ? আমি নিশ্চিত! তোমরা জানোনা। জানলে আমার সঙ্গে তোমাদের ওসব মানুষদের তুলনা করতে না। তাই তোমাদের প্রতি আমার খুব রাগ হচ্ছে- কথা বলতে রুচিতে বাঁধছে। একবার মনে হচ্ছে আমার সিংহ শার্দূল সেনাপতি মেরিতামেনকে পাঠিয়ে দেই তোমাদের মাঝে এবং দেখি তোমরা কতটুকু কুতাকুতি করতে পারো!
হাঁ শোনো- মনোযোগ সহকারে শোনো। আমিই ফেরাউন রামেসীস দ্যা সেকেন্ড। আমার সম্রাজ্ঞী হলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অনন্যা প্রতিভাধর সুন্দরী রমনী- নাম তার নেফারতারী। আমার বাবা সম্রাট প্রথম সেটি এবং মা মহারানী তুয়ার-প্রসিদ্ধি সারা দুনিয়াব্যাপি-এবং তা থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। আমার বংশ আমার পূর্বে সুদীর্ঘ একহাজার বছর ধরে মিশর শাসন করে আসছিলো। আমার রাজ রক্তের শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে তুলনা করা যায় এমন রাজবংশ পৃথিবীতে একটিও নেই। সিংহাসনে আরোহনের পূর্বে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় গমন করে সবচেয়ে জ্ঞানী পন্ডিতদের নিকট সামরিক ও বেসামরিক জ্ঞান অর্জন করেছি ৩০ বছর ধরে। ১২৭৯ খ্রীঃ পূর্বাব্দে সিংহাসনে আরোহনের পর এক নাগাড়ে ৬৬ বছর ২ মাস রাজত্ব করেছি। এশিয়া, আফ্রিকা জুড়ে এতোবড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছি যে আজ পর্যন্ত সেই সাম্রাজ্যের বিশালত্বের সীমা কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। শুধু কি তাই? আমার সাম্রাজ্যে যে সুশাসন, গনতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নিকট আজও বিস্ময়-তাইতো তারা আমার উপাধি দিয়েছেন রামেসীস দ্যা গ্রেট হিসেবে। কাজেই এতোবড় একজন মানুষের সঙ্গে যদি তোমরা লেদু- গেদু-ধলাদের তুলনা করে কথায় কথায় ’তুই ফেরাউন’ বলে গালি দাও তবে তোমাদের রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কি খুব অস্বাভাবিক!
তোমরা কি জানো যে, আমার রাজ্যে-মোট কতজন সংসদ সদস্য ছিলো? যদি না জানো তবে শুনো-তাদের সংখ্যা ছিলো ৯০০। আমি এসকল সংসদ সদস্যগনের মতামতের বাইরে নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতাম না। আমরা যখন একসঙ্গে বসতাম তখন সংসদ সদস্যগনের মর্যাদার ব্যাপারে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতাম। তোমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এসবের প্রমান আছে ভুরি ভুরি। মুসা এবং তার ভাই হারুন একদিন হঠাৎ রাজদরবারে উপস্থিত হয়ে এমন ভাবে কথাবার্তা বলা শুরু করলো যাতে মনে হলো আমি তার চাকর। সে আমার সঙ্গে তুই তুমি বলে সম্বোধন করে বললো-হে ফেরাউন! তুমি আমার কওমের ১২ লক্ষ লোককে মুক্ত করে দাও। মুসার বংশের লোকেরা সবাই ছিলো বংশানুক্রমে ক্রীতদাস এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে তারা বিভিন্ন পরিবারে, শিল্প কারখানা, অফিস আদালত বা কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করে আসছিলো। জনগনের ক্রীতদাসদেরকে মুক্ত করার অধিকার রাজার ছিলোনা। আমি যদি রাতারাতি কোন শাহী ফরমান জারি করে দাসদেরকে মুক্ত করার হুকুম দিতাম তবে সাম্রাজ্যে গন অভ্যূত্থান দেখা দিতো। মুসা যখন একের পর এক চাপ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি সংসদ সদস্যদেরকে বললাম- মুসা স্পষ্টতই আমাদের জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী ফেতনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমার ভয় হচ্ছে- তাকে যদি হত্যা না করি তবে সে জমিনে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে যে, আমার সংসদ সদস্যগন আমার প্রস্তাবকে তুড়ি মেরে নাকচ করে দিলো। শুধু তাই নয়-তারা পরামর্শ দিলো মুসার সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য। ইতিহাস খুঁজে দেখো- আমি সেদিন সৈরাচারী হইনি। আমি মুসাকে হত্যা না করে তার সঙ্গে সমঝোতা করেছিলাম।
একথা সত্য যে আমি অহংকার করে নিজেকে খোদা দাবী করেছিলাম। কিন্তু আমি খুব ভালো করেই জানতাম যে আমি খোদা নই। সম্রাট হিসেবে আমি জনগনের সামনে জিদ করে নিজেকে খোদা বললেও একান্তে এ নিয়ে আমি মর্মাহত হতাম। একদিন খোদার রহমত পাবার জন্য আমি জঙ্গলে চলে গেলাম। কারন নীল নদের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো আর লোকজন এসে আমাকে বললো হে খোদা ! নদীতে পানি এনে দাও। আমি পড়ে গেলাম ভারী বিপদে। জঙ্গলে গিয়ে গাছের সঙ্গে দু’পা বেঁধে নীচে মাথা ঝুলিয়ে আসল খোদার দরবারে শুরু করলাম ফরিয়াদ। বললাম-হে আল্লাহ আমি জানি তুমিই খোদা। আমি কেউ নই কেবল তোমার বান্দা ছাড়া। আল্লাহ তুমি আমায় সম্মান দিয়েছো। আজ তোমার সম্মানীত বান্দার সম্মান রক্ষা কর- নীল নদীতে পানি এনে দাও। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করলেন।
আমার জীবনের আরো অনেক চমকপ্রদ কাহিনী আছে যা আগামীতে সময়ও সুযোগ পেলে তোমাদেরকে বলবো। আজ বিদেয় নিচ্ছি। তবে বিদেয় বেলায় অনুরোধ- দোহাই আল্লাহর! তোমরা আমার সঙ্গে যার তার তুলনা করো না। যাকে তাকে ফেরাউন বলে গালি দিও না !

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হক্কানী উলামায়ে কেরাম পীরমাশায়ীখ দের ও আহলে সুন্নাত অয়াল জামাত এর উপর মিথ্যারুপ ভণ্ডামির জবাব

তথাকথিত আহলে হাদীসদের ভন্ডামী

আখেরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু'আ মনির হুসাইনের বিশ্ব ইজতেমা বিরুধী পোস্টের জবাব ০১