হক্কানী উলামায়ে কেরাম পীরমাশায়ীখ দের ও আহলে সুন্নাত অয়াল জামাত এর উপর মিথ্যারুপ ভণ্ডামির জবাব

 ভণ্ডামির অন্তরালে কি?
 আজ হকপন্থীদের যারা বিরুধী করছে বা তাদের ব্যাপারে যে মিথ্যারুপ করছে সেই তথাকতিত আহলে হাদিস ও বিদাতীরা ইল্‌মহীন বা মূর্খ । যদি এদের কে বলা হয় যে অভিযোগ আপনারা করেছেন তার দলিলের আয়াত বা হাদীসের মতন বা আরবী লিখতেন ? বাস ছু
প......আর কোন জবাব মেলে না !!!তারা কথায় কথায় কুরআন হাদিসের কোন জায়গায় আছে এটা বলে তারা এত হাদিস যানে, নিরব কেন ? এর রহস্য কি ? শুধু বলে হাদিস ও আয়াত নং লেখেন ? কেন এসব করে ?এই ভণ্ডামির অন্তরালে কি? এর উত্তর- এরা মতন মুল ইবারাত লেখবে না কারন তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা প্রকাশ হয়ে যাবে ।এরা ত বাঙ্গালা বা ইংরেজী তরজমা পড়ে আল্লামা সেজে বসেছে !এদের কয়েক জন লোক ইয়াহুদী- খৃষ্টান ও পাশ্চাত্যের নুন খেয়ে হকপন্থী মুসলিমদের বিরুধি প্রচার করছে কিছু ব্লগ আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে । ইয়াহুদী আর বিজাতীরা চায় মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে ফিতনায় লিপ্ত এবং তাদের ব্যাপারে চুপ হয়ে নিজেদের দন্দ হরসময় থাকুক। লক্ষ্য করে থাকবেন তাদের সব স্ট্যাটাস এর মন্তব্য একি রকম হয় একি ব্লগারদের একি লেখকের ।
তথাকতিত আহলে হাদিস বা ফিতনাবাজরা কথায় কথায় গালিগালাজ কফির মুশরিক বিদাতী বলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে । তারা তাদের ব্লগারদের মনগড়া আয়াতের ও হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে নাবুজে মন্তব্য করে ! হায়রে কতই না নিরবুধ এরা !!আর তারা যদি আয়াত হাদিস এর মুল ইবারাত উল্ল্যেখ করে তাহলে তাদের ভণ্ডামির রুপ উম্মচন হয়ে যাবে তাই তা করে না ।এদের বিরুধ্যে যখনি কোন কোন জবাব দেই তখন ত আমারা তাদের কে মুশরিক বা কাফের বলিনা । আমরা এ কথা যানি যে কাফের কাদের বলা যায় । তারা ত মূর্খ বা বুকামি অজ্ঞ্যতা জাহিলিয়্যাত ছাড়া আর কিছু নয় ।
আমি তাদের কে বলব এতই কুরআন হাদিস জানেন ত হাদিস নং বা আয়াত নং কেন চান ? আমরা ত হাদীস বা আয়াত পূর্ণ লেখে দেওয়ার সাথে সাথে হাওলা দেই কোন কিতাবের কত পৃষ্টায় আছে !একটু মুল কিতাবের পৃষ্টা উল্টিয়ে দেখেন না ? কি আছে তাতে ?
পরিশেষে আমি বলতে চাই অতিসত্বর আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তাবলীগের ও হক্কানী উলামায়ে কেরামের উপর মিথ্যারুপ অপবাদ আর ভণ্ডামির জবাব এক সঙ্গে সব গুলি বিষয়ের একত্রে প্রকাশ করব ইনশাল্লাহ ।তার কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি । সবার কাছে দোয়া প্রত্যাশা করছি ।আমিন

মুল আলোচনার আগে কিছু পরিচয় জানা প্রয়োজন তা নিম্নে দেওয়া হল ।
১ নং 

“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” নামের উৎস

                                                          
উক্ত নামটি গ্রহণ করা হয়েছে রাসূল স. এর একটি হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকে, তা হলো:-
ان بني اسرائيل تفرقت علي ثنتين وسبعين ملة وتتفرق امتي علي ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار الا واحدة قالوا من هي يارسول الله قال ما انا عليه واصحابي (رواه الترمذي)
অর্থাৎ “বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিলো এবং আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। তারমধ্যে একটি দল ছাড়া সবই জাহান্নামী।(উপস্থিত সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দলটির পরিচয় কী? উত্তরে রাসূল স. বললেন: যারা আমার “সুন্নাত ও আমার সাহাবাগণের মতাদর্শে অটল থাকবে”।
দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক নন্দিত মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়ব রহ. তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘আকীদাতু তহাবী’র ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন-
وفي رواية احمد وابي داؤد : وهي الجماعة وفي رواية من كان علي السنة والجماعة ففيه اشارة الي أن لقب اهل الحق باهل السنة والجماعة مأخوذ من قول النبي صلي الله عليه وسلم……..وهذا اللقب مركب من جزئين منهاج السنة المراد من ما,والذوات القدسية المراد من الجماعة , فمعيار الحق السنة واهلها لا احدهما فقط……فالسنة و اهلها متلازمان …..
(عقيدة الطحاوي مع الحواشي)
অর্থাৎ- উক্ত হাদীসের শেষাংশে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় উল্লেখ আছে: ‘জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জামা‘আত। অন্য বিবরণে উল্লেখ আছে, যারা সুন্নাত এবং জামা‘আতের উপর প্রতিষ্ঠিত’ তারাই জান্নাতী দল। সুতরাং এ বিবরণ মতে রাসূলের হাদিসের মর্মই শুধু ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ নামের উৎস নয় বরং হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকেই এ নাম গৃহীত। এ নামের দু’টি অংশ রয়েছে, প্রথমাংশ হচ্ছে সুন্নাতের পথ বা তরিকা। যা আলোচ্য হাদীসে “ما” শব্দটির মর্ম । আর দ্বিতীয়াংশ হচ্ছে সাহাবাগণের পবিত্র আত্মাসমুহ যা “الجماعة” এর মর্ম। সুতরাং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সত্যপন্থী দলটির মানদণ্ড বা মাপকাঠি একটি নয়;বরং দু’টি। রাসূলের সুন্নাত ও সুন্নাতের অনুসারী সাহাবাগণের জামা‘আত। তাই সুন্নাত এবং জামা‘আত একটি অপরটি থেকে অবিচ্ছেদ্য ।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলো, রাসুল স.এর প্রসিদ্ধ একটি হাদীসের ভিত্তিতে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” এর নামকরণ করা হয়েছে।
ইসলামী আকীদার ইমামগণও ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত’এর নামকরণের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে,রাসূল স.এর সুন্নাত ও সাহাবাগণের জামা‘আত দ্বারা যেসব আকীদা-বিশ্বাস প্রমাণিত, তার উপর যারা অটল থাকবে তারাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” বলে অভিহিত হবে।
এ মর্মে ‘শরহে আকাইদে নাসাফী’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ماورد به السنة ومضي عليه الجماعة فسموا اهل السنة والجماعة- “রাসূলের সুন্নাত ও সাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত দ্বারা প্রমাণিত আকীদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই দলটি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” নামে অভিহিত হয়েছে”।
 ২ নং

আহলে সুন্নাত বনাম আহলে বিদ‘আত


হাদীস শরীফে একটি দলকে নাজীয়া (নাজাতপ্রাপ্ত বা সুপথপ্রাপ্ত) বলা হয়েছে। আর বাহাত্তর দলকে জাহান্নামী বলা হয়েছে। এ দু’টির মাপকাঠি জানা থাকলেই উভয়ের মাঝে পার্থক্য জানা যাবে। উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনায় প্রতিয়মান হয় যে, “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর মানদণ্ড দু’টি বস্তু।
প্রথমতটি: সুন্নাতে রাসূল স. যা ’ما انا عليه ‘ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। দ্বিতীয়টি: জামা‘আতে সাহাবার আদর্শ যা ’اصحابي‘ দ্বারা বুঝানো হয়েছে।
এ মানদণ্ডে আসল নীতিমালা কী, পূর্বে তা উপমাসহ আলোচনা করা হয়েছে।
অতএব “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর উক্ত নীতিমালার আলোকেই সর্বযুগের সব ধরনের মতানৈক্য,বিভেদ, কোন্দলের মীমাংসা সম্ভব। এর দ্বারাই প্রমাণিত হবে কারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর অন্তর্ভুক্ত এবং কারা এর বহির্ভুক্ত। তাই এ বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা করার দাবী রাখে। অন্যথায় সবাই নিজকে নাজাতপ্রাপ্ত দল বা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” বলে দাবী করার সুযোগ পাবে। তবে এ আলোচনার পূর্বে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক। যথা-
১. উক্ত হাদীসে তিয়াত্তর দলে বিভক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ আকীদাগত ব্যাপার। ইমাম তহাবী র.বলেন,
والمراد بالاختلاف بين الفرق اختلاف الاصول‘ لااختلاف الفروع والا لازداد عدد الفرق علي ثلاث و سبعين
“আলোচ্য হাদীসে বিভেদ বলতে আকীদাগত বিভেদ বুঝানো হয়েছে। কেননা আমলের মতভেদ গণ্য করলে দল সমূহের সংখ্যা তিয়াত্তরের উর্ধ্বে চলে যায়”।
২. এ ভ্রান্তদলগুলোর আকীদাগত গোমরাহী যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট কুফরীর পর্যায়ে না পৌঁছবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এদেরকে ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী মুসলমান বলা হবে। কিন্তু এদের কোনো আকীদাগত ভ্রান্তি যখন সুস্পষ্ট কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, তখন মুসলমান বলে গণ্য হবে না।
৩. পূর্বে বাহাত্তর দলের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে তারা আপন আপন যুগে আবির্ভূত হলেও বর্তমানে এদের অনেক দলের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের অনেক আকীদা বিশ্বাসের অনুসারী হয়ে বর্তমানে নতুন নতুন বহু বাতিল দল উদ্ভাবিত হয়েছে, যারা আমাদের দেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদের জাহান্নামের পথে টেনে নিচ্ছে ।
৪. পূর্বের বাহাত্তরটি বাতিল দলের আবির্ভাবের পর আরো যে সব নতুন নতুন ভ্রান্ত দলের উদ্ভব হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে, সেগুলো গণনা করলে বাহাত্তর সংখ্যাটি ঠিক থাকে না। তাই এর মর্ম হচ্ছে,এ সংখ্যাটি সীমাবদ্ধ নয়; বরং সর্বনিম্ন পরিমাণ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ কমপক্ষে বাহাত্তর দল হবে যেমনটি হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী র. বলেছেন-
والاولي ان يقال ان هذا العدد لابد ان يوفي ويبلغ بهذا القدر ولاينقص منه ولكن لوزاد علي هذا العددفلامضائقة فيه -
এটা বলা উত্তম যে, এ সংখ্যাটি অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে এবং তার থেকে কম হবে না। কিন্তু বাতিল দলের সংখ্যা যদি এর থেকে বেড়ে যায়, তাহলে কোন সমস্যা নেই”। (আল্-কাওকাবুদ্ দুররী খ:২পৃ:৬৩)
এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, চার মাযহাবের সকলেই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর অর্ন্তভুক্ত। চার মাযহাবের সবাই যেহেতু আকাইদের বেলায় ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ, শুধু আমলের ক্ষেত্রে তাদের মতভেদ। তাদের আকীদা,নীতি-আদর্শ সবই সুন্নাতে রাসূল স. ও জামা‘আতে সাহাবা দ্বারা সমর্থিত। তাই চার মাযহাবের সবাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর
অর্ন্তভুক্ত।
আল্লামা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী র. বলেন,
المراد في هذا التفرق التفرق المذموم الواقع في اصول الدين واما اختلاف الامة في الفروع فليس بمذموم بل هومن رحمة الله سبحانه فانك ترى أن الفرق المختلفة في الفروع كلها متحدة في الاصول ولايضل بعضهم بعضا واما المتفرقون في الاصول فيكفر بعضهم بعضا
“আলোচ্য হাদীসে মুসলমানদের মতভেদ বলতে আকীদাগত মতভেদকে বুঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে মাযহাবের ইমামগণ আমলের ব্যাপারে যে মতভেদ করেছেন তা নিন্দনীয় নয়, বরং আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত। তাই আপনি দেখবেন, তারা আকীদার ব্যাপারে একমত হওয়ায় এক মাযহাবের অনুসারীগণ অন্য মাযহাবের অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট বলেন না। অথচ আকীদার ব্যাপারে মতানৈক্যকারীরা একদল অপর দলকে কাফিরও বলে”।(আল্-কাওকাবুদ্ দুররী খ:২পৃ:১২৮)
মোটকথা, চার মাযহাবের মতভেদটা “ইফতিরাকে উম্মত” সম্বলিত হাদীসের অর্ন্তভুক্ত নয়। তাই চার মাযহাবের ইজতিহাদগত মতভেদের কারণে এর অনুসারীগণ আকীদাগত কারণে জাহান্নামে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
সুন্নাতে রাসূল স. ও সুন্নাতে সাহাবার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
উপরোক্ত প্রাথমিক চারটি কথা উল্লেখ করার পর এবার আসা যাক সুন্নাত ও আহলে সুন্নাত,বিদআত ও আহলে বিদআতের পরিচিতির আলোচনায়। “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর পরিচয়ের পূর্বে সুন্নাতে রাসূল ও সুন্নাতে সাহাবার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বুঝে নেয়া দরকার। কারণ আহলে সুন্নাতের মর্ম হচ্ছে, সুন্নাতের অনুসারী,বা বহনকারী। এ ব্যাখ্যার মধ্যে “সুন্নাহ” শব্দটি হল মূল। তাই আহলে সুন্নাত বুঝা সুন্নাত বুঝার উপর নির্ভরশীল। কাজেই এখানে সুন্নাত নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো।
সুন্নাতের অর্থ-
“সুন্নাহ” আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ- স্বভাব ও নিয়মনীতি।
শরীয়তের পরিভাষায় “সুন্নাহ”-এর একাধিক অর্থ রয়েছে।
যেমন: (ক) “সুন্নাহ” অর্থ রাসূলের হাদীস। (খ) রাসূল স. এর তরীকা বা পন্থা। (গ) যে আমলের গুরুত্ত্ব ওয়াজিব ও মুস্তাহাবের মাঝামাঝি অর্থাৎ আমলী সুন্নাত। উক্ত তিন অর্থের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল।
১.“সুন্নাহ”হাদীসের অর্থে ব্যবহৃত হলে অর্থ হবে, রাসূল স. এর কথা, কাজ, মৌন সমর্থন ও তার গুন, এমনকি জাগ্রত ও নিদ্রাবস্থায় তার গতিবিধিও এর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল মুগিছ পৃ: ১২)
একটু ব্যাপক করে এভাবেও অর্থ করা যায় যে, রাসূল স. এর মুখনিঃসৃত বানী,কর্ম ও সমর্থন, অনুরূপভাবে সাহাবী এবং তাবেঈর কথা, কাজ ও সমর্থনকেও “সুন্নাহ” বা হাদীস নামে অভিহিত করা হয়। তাই হাদীস বিশারদগণ বিষয়টি এভাবে প্রকাশ করেছেন-
الحديث هو ما اضيف الي النبي صلي الله عليه وسلم او الي صحابي أو الي من دونه ممن يقتدي بهم في الدين قولا او فعلا او صفة او تقريرا
‘সুন্নাহ’ যা হাদীসের সমার্থক, রাসূল স.ও তার সাহাবার বাণী,কাজ, গুণ ও সমর্থন ইত্যাদিকে বলা হয়। এমনিভাবে তাদের অনুসারী তাবেঈন,তাবে-তাবেঈন, সালফে সালেহীনের কথা, কাজ ইত্যাদিকেও “সুন্নাহ” বলা হয়”। (দরসে তিরমিযী-২২)
২. নবীর সুন্নাতের আরেক অর্থ নবীর তরীকা,নিয়ম, নবীর শিক্ষা
এ মর্মে ইরবায বিন সারিয়া রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূল স. বলেছেন-
من يعش منكم بعدي فسيري اختلافا كثيرافعليكم بسنتي وسنة الخلافاء الراشدين المهديين
“আমার পরে তোমরা যারা বেঁচে থাকবে,তারা বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের ঈমান রক্ষার একমাত্র উপায় হবে আমার সুন্নাহ ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার পথকে সর্বশক্তি দিয়ে আকড়ে ধরা”।
এখানে সুন্নাত শব্দটি ত্বরীকা, নিয়ম, নবীর শিক্ষার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. লিখেন-
فانهم لايعملوا الابسنتي فالاضافة اليه اما بعملهم او لاستنباطهم واختيارهم اياها-
খোলাফায়ে রাশেদীন মূলত রাসূল স. এর সুন্নাতের উপরই আমল করেছেন।“সুন্নাহ” শব্দ তাদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে,সুন্নাতের উপর তাদের আমলের কারণে। অথবা তারা নিজেরা কিয়াস ও ইস্তিম্বাত করে “সুন্নাহ”কে গ্রহণ করার কারণে। (মিরকাত শরহে মিশকাত খ:১ পৃ:৩৭৩)
 হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী রহ. লিখেন,
والسنة هي الطريق المسلوك فيشمل ذالك التمسك مما كان عليه هو والخلفاء الراشدون من الاعتقادات والاعمال والاقوال وهذه هي السنة الكاملة
“ অনুসরণীয় পথের নামই “সুন্নাহ”। সুতরাং একে আঁকড়ে ধরা মানে রাসূল স. ও তার খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্মপন্থা আঁকড়ে ধরা। তাদের আকীদা বিশ্বাস, আমল ও বাণীসমূহ সবই এর অন্তর্ভুক্ত, আর এটাই হচেছ পরিপূর্ণ “সুন্নাহ”। (জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম খ:১ পৃ: ১৯১)
 আল্লামা সারফরাজ সফদর রহ. উক্ত বক্তব্যের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, “যদিও সুন্নাত শব্দের সাধারণ ব্যবহার সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনের কথা ও কর্মের ক্ষেত্রে হয়, কিন্তু আলোচ্য সুন্নাত অর্থাৎ খোলাফায়ে রাশেদীনের কথা, কাজ ও ইচ্ছা পরিপূর্ণ সুন্নাত”।
 বিশিষ্ট মুহাক্কিক ইবনে হুমাম রহ. বলেন,
وسنته الطريقة الدينية منه صلي الله عليه وسلم أو الخلفاء الراشدين-
 রাসূল স. অথবা তার খোলাফায়ে রাশেদীনের বর্ণিত দীনী কর্মপন্থাই সুন্নাতে রাসূল।
অর্থাৎ রাসূল স. এবং তার পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্মনীতিই হচ্ছে সুন্নাতে রাসূল। (শামী খ:১ পৃ:৭০)
উপরোক্ত মনীষীগণ যা বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে, রাসূল স.ও খোলাফায়ে রাশেদীনের কথা,কর্ম ও নীতিকেই সুন্নাত বলা হয়।
আল্লামা আব্দুল হাই ফিরিঙ্গী রহ. রাসূলের সুন্নাতের সাথে অন্যান্য সাহাবার কথা, কর্মনীতিকেও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত করে মত ব্যক্ত করেছেন । তার ভাষায়-
ان السنة تطلق علي قول الرسول وفعله وسكوته وطريقة الصحابة-
রাসূল স.এর কথা, কাজ, মৌন-সম্মতি এবং সাহাবীর অনুসৃত পথের উপর সুন্নাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
 ‘তাহতাবী’ নামক গ্রন্থে সুন্নাতের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবে-
مافعله النبي أو واحد من الصحابة‘ فان سنة اصحابه امر عليه السلام باتباعها‘ যা রাসূল স. অথবা কোনো একজন সাহাবা রা. করেছেন,সেটাই সুন্নাত। কারণ রাসূল স. তার সাহাবীদের সুন্নাত অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ”।
মোটকথা:সুন্নাত শব্দটির ব্যবহার যেমনিভাবে রাসূল স.এর মুখনিঃসৃত বাণী,কর্ম (আমল) অবস্থা, স্বভাব ও চরিত্রের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ চার খলীফার কথা,কর্ম,নীতি এমনকি তাদের কিয়াস ও ইস্তিম্বাতের মাধ্যমে নির্দেশিত বিধানের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমাণিত ফয়সালাকেও সুন্নাত বলা হয়। আর এ জাতীয় সুন্নাতকে সাধারণত: সুন্নাতে কামিলা তথা পরিপূর্ণ সুন্নাত নামে অভিহিত করা হয়। তেমনিভাবে অন্যান্য সাহাবা ও তাবেঈন যারা দ্বীনের ব্যাপারে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তাদের কথা এবং কর্মকেও সুন্নাত বলা হয়। তবে এ সুন্নাত সুন্নাতে কামিলা নয়।
৩. সুন্নাতের তৃতীয় অর্থ রাসূল স.-এর ঐ আমল যার গুরুত্ব ওয়াজিবের নিচে
ও মুস্তাহাবের উপরে। একে সুন্নাতে আমলীও বলে। এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। আল্লামা আব্দুল ওয়াহহাব খাল্লাফ রহ. লিখেন,
المندوب ينقسم الي ثلاثة اقسام: مندوب مطلوب فعله علي وجه التاكيد‘ مندوب مشروع فعله ‘ مندوب زائد أي يعد من الكماليات للمكلف ومن هذا الاقتداء بالرسول في الامور العادية.. الخ
সারকথা- সুন্নাত তিন প্রকার, ১.সুন্নাতে হুদা (মোয়াক্কাদা)। ২. সুন্নাতে হুদা (যায়েদা)। ৩. সুন্নাতে আদিয়া, যাকে আদব বা মুস্তাহাবও বলে। (দেখুন: ইলমে উসূলে ফিকহ-১১২)
উপরোক্ত বিষয়টি হলো সুন্নাতে আমলী । যা মূলত মোয়াক্কাদা ও যায়েদা নামে অভিহিত। অতি সংক্ষিপ্তভাবে সুন্নাতের তিনটি অর্থ নিয়ে আলোচনা করার পর এবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নিয়ে আলোচনা করবো।
৩ নং

“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর সংজ্ঞা


সুন্নাতের বিশ্লেষণ বুঝার পর বুঝতে হবে “আহলে সুন্নাত” এবং “ওয়াল জামাআত” এ দু’টি শব্দের মাহাত্ম্য ও মর্মার্থ।
ক. এ মর্মে শাইখে তরীকত আব্দুল কাদের জিলানী রহ. ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’ নামক কিতাবে লিখেন,
فعلي المؤمن اتباع السنة والجماعة فالسنة ما سن رسول الله صلي الله عليه وسلم والجماعة مااتفق عليه الصحابة في خلافة الائمة الاربعة رضي الله تعالي عنهم
“সকল মুমিন মুসলমানের কর্তব্য, তারা যেন “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর অনুসরণ করে। “সুন্নাত” রাসূল স.এর কথা ও কর্ম ইত্যাদিকে বলা হয়। আর “জামাআত” ঐ সকল শরয়ী বিধান বা আহকামকে বলে, যার উপর চার খলিফার যুগে সাহাবারা একমত ছিলেন”। (সূত্র-রাহে সুন্নাত-পৃ:৩১)
খ. “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
ومن العجب ان الرافضة تثبت اصولا علي ما تدعيه من النص والاجماع وهم ابعد من معرفة النصوص والاجماعات والاستدلال بها بخلاف السنة والجماعة فان السنة تتضمن النص والجماعة تتضمن الاجماع فاهل السنة والجماعة هم المتبعون للنص والاجماع
“আশ্চর্যের কথা, রাফেযীরা নস,সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা নিজেদের নীতিমালা প্রমাণ করার দাবী করে। অথচ তারা এগুলো বুঝতে ও এর মাধ্যমে দাবী প্রমাণে অক্ষম। পক্ষান্তরে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” হচ্ছে নস,সুন্নাহ ও ইজমার পূর্ণ অনুসারী। “সুন্নাহ” নসকে ধারণ করে। আর “জামাআত” ধারণ করে ইজমাকে। (মিনহাজুস সুন্নাহ খ:৩ পৃ:৭৩)
গ. ইরবায বিন সারিয়া রা.এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে,নবীজীর স্পষ্ট বাক্যটি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” প্রসঙ্গে এভাবে এসেছে
من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ
“তোমাদের যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে তারা বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের ঈমান রক্ষার একমাত্র উপায় হবে,আমার সুন্নাহ ও হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার পথকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরা”। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭১৪৫)
ঘ. ‘হাদীসে ইফতিরাকেউম্মত’ যা নিয়ে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, সেখানে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর বিবরণ এভাবে এসেছে-
وتتفرق امتي علي ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار الا واحدة قالوا من هي يارسول الله قال ما انا عليه واصحابي (رواه الترمذي)
-আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। তারমধ্যে একটি দল ছাড়া সবাই হবে জাহান্নামী ।(উপস্থিত সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন) হে আল্লাহর রাসূল ! এ দলটির পরিচয় কী ? উত্তরে রাসূল স. বললেন, যারা আমার “সুন্নাত” ও আমার সাহাবাগণের মতাদর্শে অটল থাকবে”।(তিরমিযী খ:২ পৃ:৯২)
উক্ত হাদীসটির মধ্যে নাজাতপ্রাপ্ত দলটি ماانا عليه واصحابي শব্দ দ্বারা বুঝিয়েছেন।
(ঙ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শাহ ওয়ালী উল্লাহ র. বলেন,
اقول الفرقة الناجية هم الاخذون في العقيدة والعمل جميعا بما ظهر من الكتاب والسنة وجري عليه جمهور الصحابة والتابعين……وغير الناجية كل فرقة انتحلت عقيدة خلاف عقيدة السلف أو عملا دون اعمالهم.(حجة الله البالغة:১/১৭০)
“আমি বলি নাজাতপ্রাপ্ত একমাত্র জান্নাতী দল তারা, যারা আকীদা-বিশ্বাসে ও আমলের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ এবং সাহাবা ও তাবেঈনের আদর্শ আঁকড়ে থাকবে। আর ঐ সমস্ত দলই এর বহির্ভূত, যারা আসলাফের পরিপন্থী আকীদা ও আমলে বিশ্বাসী হবে”। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ খ: ১ পৃ: ১৭০)
তারপর শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ র. বলেন,
فأخذوا يتبعون احاديث النبي واثار الصحابة والتابعين والمجتهدين
“হক পন্থী একমাত্র তারা, যারা রাসূলের হাদীস, সাহাবা ও তাবেঈনের কথা, কর্ম এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের অনুকরণ ও অনুসরণ করে”। (আল-ইনসাফ পৃ:৩৬)
(চ) ‘শরহে আকাইদে নাসাফী’ নামক কিতাবে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর সংজ্ঞা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
ماورد به السنة ومضي عليه الجماعة فسموا اهل السنة والجماعة-
“রাসূলের সুন্নাত ও সাহাবায়ে কেরামের জামাআত দ্বারা প্রমাণিত আকীদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই দলটি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” নামে অভিহিত হয়েছে”।

 ৪নং

উপমহাদেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমামগণ

 সুন্নাতে রাসূল ও জামা‘আতে সাহাবাকে আদর্শ ও মাপকাঠিরূপে গ্রহণ করে যারা ভারত উপমহাদেশে ‘ইমামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন তাদের কয়েকজনের নাম:
১. ইমাম শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী রহ. মৃত্যু : ১১৭৬ হি:
২. ইমাম শাহ্ আব্দুল আযীয রহ. মৃত্যু: ১২৩৯ হি:
৩. শহীদে বালাকোট শাহ্ সায়্যিদ আহমাদ রহ. মৃত্যু : ১২৪৬ হি:
৪. শাহ্ ইসমাঈল শহীদ রহ. মৃত্যু: ১২৪৬ হি:
৫. হযরত শাহ্ ইসহাক রহ. মৃত্যু: ১২৬২ হি:
৬. হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. মৃত্যু : ১২৯৭ হি:
৭. হযরত শাহ্ রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ. মৃত্যু: ১৩২৩ হিঃ
৮. হযরত আব্দুল হাই লাখনভী রহ. মৃত্যু: ১৩০৪ হিঃ
৯. সায়্যিদ আহমাদ সিরহিন্দী (মুজাদ্দিসে আলফে সানী) রহ.
১০. শাইখুল হিন্দ শাহ্ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.
১১. মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ.
১২. খাতেমুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী রহ.
১৩. বানিয়ে তাবলীগ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.
১৪. শাহ্ সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.
১৫. শাইখুল হাদীস হযরত যাকারিয়া রহ.
১৬. মুফতিয়ে আ‘জম মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ.
১৭. মুহিউস সুন্নাহ মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ.
১৮. ইমামে তরীকত মুফতি আযিযুল হক রহ.
১৯. মুজাহিদে আ‘জম শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.
২০. ফখরে বাঙাল মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব রহ.
২১. রাহবারে শরীয়ত হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
২২. ইমামে তরীকত ক্বারী মুহাম্মদ ইবরাহীম সাহেব উজানী রহ.
২৩. পীরে তরীকত শাহ্ মুহাম্মদ ইসহাক চরমোনাই রহ.
২৪.শাইখুল হাদিস আল্লামা নুরুদ্দীন গাওহারপুরী রহ.
২৫.শাইখুল হাদিস আল্লামা আযীযুল হক রহ.
৫ নং

আহলে হাদীস বা গায়রে মুকাল্লিদ প্রসঙ্গ

প্রথমে এ দলটির নাম ছিলো “মুওয়াহহিদীন” (مؤحدين)। অতঃপর তারা “মুহাম্মদী” (محمدي) নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮১৮ ঈসায়ী সালে সর্বপ্রথম তারা নিজেদেরকে “আহলে হাদীস” নামে পরিচয় দিতে শুরু করে। তাদেরকে অনেকে “ওয়াহাবী” নামে আখ্যায়িত করায় তারা ইংরেজ সরকার থেকে নিজেদেরকে “আহলে হাদীস” নামে রেজিস্টেশন করে নেয়। অদ্যাবধি তারা এ নামেই পরিচিত। তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তারা শরীয়তের চার দলীল যথাক্রমে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস-এর মধ্যে ইজমা ও কিয়াসকে অস্বীকার করে। একমাত্র কুরআন, হাদীস মানার দাবী করে। কারণ, ইমামদের কিয়াস মানার অর্থ তাদের তাকলীদ করা। আর তাকলীদ করা তাদের দৃষ্টিতে শিরক। ইমামগণ কিয়াস ও ইস্তিম্বাত করে ঐক্যমতে পৌঁছার নামই হচ্ছে ইজমা। তাই ইজমা মানলেও ইমামের তাকলীদ করা হয়। একই কারণে তারা সাহাবাদের কিয়াস ও ইজমাকে অমান্য করে। উল্লেখ্য, মূলত যারা ইজমা-কিয়াস মানে না তারা “যাহেরীয়া” নামে পরিচিত। দাউদে যাহেরী, ইবনে হাযম, শাওকানী, ইবনে তাইমিয়া এ শ্রেণীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মজার কথা হল, বর্তমানে আমাদের দেশের “আহলে হাদীস” তাকলীদের বিরুদ্ধে কথা বললেও কার্যত তারা উপরোক্ত আলেমদেরই তাকলীদ করে থাকে ন। মূলত তাকলীদ কুরআন, হাদীস, ইজমা,কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত বিধান। কুরআন-সুন্নাহ থেকে সরাসরি আমল করতে সক্ষম নয় এমন মুসলমানদের তাকলীদ করা ওয়াজিব। যেমন, পবিত্র কুরআনে যারা অনবিজ্ঞ তাদের বিজ্ঞদের মেনে নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون “জ্ঞানীদের থেকে জেনে নাও যদি তোমরা না জানো”।(সূরা নহল-৪৩) আর এরই নাম তাকলীদ।
এ তাকলীদ সাহাবাদের যুগেও ছিল। যেসব সাহাবী কুরআন-সুন্নাহ থেকে ইজতিহাদ করতে সক্ষম ছিলেন না, তারা ফকীহ সাহাবীদের তাকলীদ করতেন। হযরত মু‘আয রা. কিয়াস ও ইজতিহাদ করে ইয়ামানবাসীর সমস্যা সমাধান করবেন বলায় নবীজী স. খুশি মনে সমর্থন করেন। বনু-কুরাইযা যাওয়ার পথে দু’দল সাহাবী ভিন্নভিন্ন ইজতিহাদ করলে উভয়কে রাসূল স. হকপন্থী হওয়ার সনদ দেন।
ইবনে আব্বাস রা.’র তাকলীদ করতেন মক্কা’র অধিকাংশ সাহাবী। মদিনার অধিকাংশ সাহাবী যায়েদ বিন সাবেত রা.এর তাকলীদ করার কথা বুখারী শরীফের হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। কুফাবাসী ইবনে মাসউদ রা.এর, ইয়ামান বাসী মু‘আয রা.এর ও সিরিয়া বাসী আমরুনিল বুকায়ী এর তাকলীদ করার প্রমাণও হাদীসে রয়েছে।
রাসূল স. বলেছেন, “আমার সাহাবীদের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরো”। এর মর্ম হচ্ছে,উমর রা. বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়েন তাও আমার সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত,সকলের জন্য সুন্নাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাহলে যারা আট রাকআত মেনে বিশ রাকা‘আতকে বিদ‘আত বলবে, তারা সাহাবা ও রাসূল উভয়কে বিদআতী বললো। সুতরাং হাদীস মানার দাবী মিথ্যা।
এ জাতীয় বিস্তর দলীল-প্রমাণ থাকার পরও যারা শুধু কুরআন-হাদীস মানার দাবী করে, তারা কার্যত কুরআন এবং কুরআনওয়ালা নবীকেই অমান্য করলো। পরিতাপের বিষয়,এ সহজ-সরল বিষয়টিও লা-মাযহাবীরা বুঝে না।
‘আহলে হাদীস’ আহলে সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণ
‘আহলে হাদীস’ দাবীদার বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাপকাঠির বিচারে বেশ কয়েকটি চিন্তাধারা, আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহ মানে না ।
কারণ, তারা উল্লিখিত নাজাতপ্রাপ্ত জামা‘আত তথা সুন্নাতে রাসূল ও জামা‘আতে সাহাবার নীতি ও আদর্শ ত্যাগ করে, কুরআন ও হাদীসের মনগড়া ভুল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুপাতে পথ-পন্থা গ্রহণ করেছে। তাই এ দলটিও আহলে সুন্নাতের বহির্ভূত।

৬ নং

আহলে হাদীসের সাথে যেসব ক্ষেত্রে মতবিরোধ

 ১. তাকলীদ প্রসঙ্গ সাহাবা,তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন অর্থাৎ চার মাযহাবের ইমামগণের তাকলীদ করাকে তারা বিদ‘আত বা শিরক বলে। অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’-এর নীতি-আদর্শ হলো, যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করার যোগ্যতা, তার জন্য ইজতিহাদ করা জরুরী। তাকলীদ করা অবৈধ। আর যার মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই, তার জন্য কোনো এক মুজতাহিদ ইমামের মাযহাবের তাকলীদ করা ওয়াজিব।
২. আল্লাহর গুনাবলী প্রসঙ্গ কুরআন, হাদীসে এমন কিছু শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার গুনাবলির বিবরণ আছে, যেগুলোর বাহ্যিক অর্থে আল্লাহর আকৃতি,দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রমাণিত হয়। এধরনের আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মতাদর্শ হলো, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা হবে না। কারণ বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করলে কুরআনের আয়াতليس كمثله شيئ وهو السميع البصير অর্থাৎ “আল্লাহর সমতুল্য কিছুই নেই, তিনি শুনেন ও দেখেন”।(সূরা শুয়ারা-১১) এর পরিপন্থী হয়ে কুরআন অমান্য করার নামান্তর হয়। কিন্তু আমাদের দেশের আহলে হাদীস এ নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারা এমন মতাদর্শের অনুসারী যা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” এর মাপকাঠিতে পড়ে না। বরং তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর ইমামদ্বয় যথাক্রমে আবুল হাসান আশআরী ও আবু মানসুর মাতুরীদিকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ বলে প্রচার করে।
৩. দোয়ার মধ্যে উসিলা প্রসঙ্গ
কুরআন-হাদীসের যেসব অবস্থায় উসিলা দিয়ে দোয়া করার ফযিলত ও বৈধতা প্রমাণিত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”সে উসিলাকে যথাযথ স্থানে বৈধ বা মুস্তাহাব মনে করেন। সারকথা হল, জীবিত বা মৃতব্যক্তি নিজের আমল ও অন্যের আমল দ্বারা উসিলা গ্রহণ সর্বাবস্থায় জায়েয। কারণ এ সবগুলোর মূলকথা হলো, আল্লাহ তা‘য়ালার উসিলা ধারণ। অথচ লা-মাযহাবীরা এ বিষয়ে গোঁড়ামির পথ অবলম্বন করে, বৈধকে অবৈধ সাব্যস্ত করে। যা বহু আয়াত ও হাদীসের অপব্যাখ্যার শামিল।
৪.ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ প্রসঙ্গ
কুরআনের আয়াত,আল্লাহর নাম এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর নীতি-আদর্শে বৈধ। তবে লা-মাযহাবীরা এ নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি ও একগুঁয়েমীর নীতি অবলম্বন করে তাবিজ-কবজকে কুফর আখ্যায়িত করে।
‘আল-লুমআত শরহে মিশকাত’-এ উল্লেখ আছে ,
وهي جائزة بالقرآن والاسماء الالهية ومافي معناها بالاتفاق
ঝাড়-ফুঁক কুরআন, আসমায়ে হুসনা ও অনুরূপ অর্থ বিশিষ্ট বাক্য দ্বারা জায়েয ও বৈধ। তবে যে কালামের অর্থ জানা যায় না, অনারবী ভাষায় শিরকযুক্ত কালাম দ্বারা তাবিজ-কবজ,ঝাড়-ফুঁক করলে এবং এগুলোর নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত কারণ পাওয়া যাওয়ার শর্তে বলা হয়েছে।
৫. রাসূলের রওযা যিয়ারতের নিয়তে মদিনা যাওয়া প্রসঙ্গ
আমাদের দেশের আহলে হাদীসগণ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া ও কাজী ইয়াজ রহ.-এর ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে সাহাবা, তাবেঈনের আমল ও আদর্শের বিপরীতে এ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও ফিতনার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হল, মুসলমান মদিনা শরীফে যাবে একমাত্র মসজিদে নববীতে নামায পড়ার নিয়তে। রওযা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে মদিনা গমন অবৈধ, কারণ হাদীস শরীফে এসেছে- لاتشدوا الرحال الا الي ثلثة مساجد…الخ “মসজিদে নববী, হারাম শরীফ ও মসজিদে আকসা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না”।
হাদীসের উক্ত ব্যাখ্যা নিতান্ত ইবনে তাইমিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা। অথচ সকল মুহাদ্দিসগণ এর ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, উক্ত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। অর্থাৎ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য স্থানে সফর করার বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্তই নয়। এটাই সঠিক ব্যাখ্যা। তাহলে রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন কিভাবে অবৈধ। কারণ এর অনুকূলে হাদীস পাওয়া যায়। তাছাড়া আল্লামা আইনী ও আসকালানী রহ.সহ সকল মুহাদ্দিস এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলেছেন। তাই রাসূলের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদিনা গমন করা শরীয়তসম্মত।
৬. জুম‘আর খুতবা অনারবীতে পড়া প্রসঙ্গ
সম্প্রতি আহলে হাদীসরা জুম‘আর খুতবা অনারবীতে ও আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার কথা বলে থাকে। এ প্রসঙ্গে তাদের কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। কারণ রাসূল স. ও সাহাবাদের যুগে কখনো অনারবীতে খুতবা দেয়ার প্রমাণ মেলে না। সাহাবিদের মধ্যে যারা ভিন্ন ভাষাভাষী ছিলেন, তারাও নিজেদের দেশে মাতৃভাষায় খুতবা পড়েননি। একারণেই ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত, পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বহু ভাষার মুসলমান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা পড়ার নিয়ম চালু হয়ে আসছে।
হ্যাঁ, লা-মাযহাবীদের নিকট শুধু যুক্তি ও কিয়াস আছে। অথচ তারা যুক্তি কিয়াসের বিরোধী। তারা শুধু কুরআন,হাদীস মানার দাবী করে থাকে। এ বিষয়ে কুরআন,হাদিস বাদ দিয়ে মনগড়া যুক্তির ভিত্তিতে অনারবী ভাষায় খুতবা পড়ার প্রথা চালু করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মৌলিক আদর্শ ও মাপকাঠি বিরোধী। তাই তারা এ বিষয়েও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”থেকে বহির্ভূত।
৭. নামাযে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া,জোরে আমীন বলা,
বার বার হাত উঠানো প্রসঙ্গ
এ বিষয়গুলো এমন যে, রাসূল স. থেকে এসব বিষয়ে বিভিন্ন রকম বিবরণ পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যাখ্যায় মাযহাবের ইমামগণ মতবিরোধ করেছেন। মুজতাহিদগণের মতামত দেয়ার অধিকার কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক প্রমাণিত। যারা মুজতাহিদ নন, তারা যে ইমামের তাকলীদ করেন সে ইমামের মতানুসারে আমল করাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর আদর্শ। যেমন, মুক্তাদি নামাযে ফাতেহা পড়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকম আয়াত ও হাদীস রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রহ. ফাতেহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন, তাই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর আদর্শ। ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াকে নাজায়েয বলেছেন, তাই হানাফিদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা না পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ।
পক্ষান্তরে লা-মাযহাবীরা মুজতাহিদও নন যে, নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র মত উদ্ভাবন করবেন। আবার কোন মাযহাবের অনুসারীও নন যে, ইমামের মাযহাব মতে আমল করবেন। তাহলে মুক্তাদি হয়ে ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়াও তাদের জন্য সুন্নাত হবেনা, না পড়াও সুন্নাত বলে গণ্য হবে না। তা সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত মুজতাহিদের ইজতিহাদকে ভুল আখ্যা দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়ার উপর চেঁচামেচি করা আহলে সুন্নাতের আদর্শ পরিপন্থী, যা তারা করে থাকেন।
মুজতাহিদ না হয়ে কোন মুজতাহিদের তাকলীদ না করে নামাযে বার বার হাত উঠানো বা না উঠানো কোনোটিই সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আমীন জোরে বললেও সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আস্তে বললেও হবে না। তাই এসব বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ পরিপন্থী। তাই তারা এসব ব্যাপারেও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”বিরোধী।
৮. তাসাওফ ও আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
শরীয়ত ও তরীকত উভয়ই ইসলামের অঙ্গ,একটি অপরটির পরিপূরক। ইসলামে শরীয়তবিহীন তরীকতের যেমন অনুমোদন নেই, তেমনি তরীকতবিহীন শরীয়তেরও কোনো মূল্য নেই। মানুষের বিবেক যেন পাহারা দিচ্ছে শরীয়তকে, আর অন্তর পাহারা দিচ্ছে তরীকতকে। সাহাবায়ে কিরাম, আসলাফ এ আদর্শের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ হলো, যেভাবে শরীয়তের যাহেরী বিধানের উপর আমল করা জরুরী। তদ্রুপ ইখলাস, তাকওয়া,সবর, শোকর প্রভৃতি আত্মার গুনাবলি অর্জন এবং রিয়া, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধিগুলো দূর করাও মুমিনের উপর ওয়াজিব। ইরশাদ হয়েছে, قد افلح من زكها وقد خاب من دسها অর্থাৎ “সফলকাম সে, যে নিজের তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি করে” আর আত্মশুদ্ধির এ সাধনাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক সাধনা। হাদীসের ভাষায় এর নাম ইহসান। যা বুখারী শরীফের ঐতিহাসিক ‘হাদীসে জিবরাঈল’-এ উল্লেখ হয়েছে। কুরআন-হাদিস এবং সাহাবাদের অনুকরণে তাসাওফকে জরুরী মনে করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ। তবে এতে অতিমাত্রায় আসক্তি কুরআন-সুন্নাহ বিকৃতির শামিল, যা ভণ্ডপীরের স্বভাব। এটা যেমন হারাম ও বাতিল বলে গণ্য, তেমনি ভাবে হাদীসের ইহসানের ব্যাখ্যা না মেনে আধ্যাত্মিক সাধনাকে শিরক বা বিদ‘আত বলা, যা লা-মাযহাবীদের আদর্শ তাও বাতিল ও ভ্রষ্টতা এবং কুরআন-হাদীস বিকৃতি।
!!!  তথাকতিত আহলে হাদিস ও বাতিল ফিরকার অভিযোগ এবং তার জবাব ।

বাতিলের আতংক হাকীমুল উম্মত আশরাফ থানবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কথিত আহলে হাদীস ও বেদআতিদের জঘন্য মিথ্যাচারের জবাব


ইন্টারনেটে ও আহলে হাদীসরা এবং রাজারবাগী, দেওয়ানবাগীসহ কিছু ভন্ড পীরের অনুসারীরা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করছে। দয়া করে যদি এসবের জবাব জানাতেন তাহলে খুবই ভাল হতো। নিম্নে তাদের ভাষায় অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হল-
অভিযোগ-১-
বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপের পক্ষ থেকে এবং কথিত আহলে হাদীস গ্রুপের পক্ষ থেকে হযরত হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর উপর অভিযোগ করা হয় যে, হযরতের মুরীদ তার নামের কালিমা ও দরূদ পড়েছে, তখন হাকীমুল উম্মত রহঃ লোকটিকে ধমকি দেওয়ার বদলে তাকে সুন্নাতের অনুসারী বলে মন্তব্য করেছেন। যে কারণে তিনি কাফের। নাউজুবিল্লাহ! তাই কয়েকটি অভিযোগ দাঁড়ায়। যথা
-হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন? নাউজুবিল্লাহ!
-যার ঘটনাটি ঘটেছে, তাকে ধমকি সতর্ক করা হয়নি, অথচ তাকে তা করা দরকার ছিল। সেই সাথে লোকটি নতুন করে মুসলমান বানানো প্রয়োজন ছিল। ছিল তার বিবাহকে পুনরায় দেওয়ার। কিন্তু হাকীমুল উম্মত রহঃ এমনটি করেন নি, বরং তিনি কুফরীর উপরই সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। আর কুফরীর উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ কুফরী। তাই হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কাফের। নাউজুবিল্লাহ।
-এরকম শয়তানী ওয়াসওয়াসাকে কেন প্রশংসা করা হল? কেন এর তাবীর তথা ব্যাখ্যা করা হল?
বেদআতি গ্রুপ ও কথিত আহলে হাদীস গ্রুপ এটাকে মূল প্রতিপাদ্য বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে যে, “দেওবন্দীদের কালিমা মুসলমানদের কালিমা থেকে ভিন্ন”। নাউজুবিল্লাহ।
জবাব
প্রথমেই আমরা দেখে নেই আসলে উক্ত কিতাবে লোকটির বক্তব্যটি কিভাবে আছে-
একদা স্বপ্নে আমি কালিমা পড়ছিলাম। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এ স্থলে হযরতের নাম নিচ্ছিলাম। তখনি আমার মনে উদয় হয় যে, আমি ভুল করছি কালিমা পড়ার ক্ষেত্রে। সঠিকভাবে পড়া উচিত। এ খেয়ালে দ্বিতীয়বার কালিমা শরীফ পড়লাম। মনেতো এটা আছে যে, সঠিকভাবে পড়বো, কিন্তু অনিচ্ছা সত্বেও মুখ থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর স্থলে আশরাফ আলী বেরিয়ে যায়। অথচ আমার একথা জানা আছে যে, এমনটি জায়েজ নয়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে এটাই বেরিয়ে যায়। দুই তিনবার যখন এমনি হল। তখন হুজুর সাঃ কে আমার সামনে দেখতে লাগলাম। হুজুর সাঃ এর পাশে আরো মানুষ ছিলেন। আমি এমনটি করতে ছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। তখন আমার উপর কান্না প্রবলতা এত বেড়ে গেল যে, আমি দাঁড়ানো থেকে পড়ে গেলাম। সাথে অত্যান্ত জোরে চিৎকার দিলাম। আর আমার মনে হচ্ছিল যে, আমার ভিতর কোন শক্তি নেই। এমন অবস্থায় আমি ঘুম থেকে জেগে গেলাম। কিন্তু তখনো শরীরে ছিল অনুভূতিহীনতা। ছিল উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়াও। অথচ ঘুমন্ত ও জাগ্রত উভয় অবস্থায় রাসূল সাঃ এরই খিয়াল ছিল। কিন্তু জাগ্রত হওয়ার পর যখন কালিমা ভুল পড়ার কথা স্মরণ হল-তখন মন থেকে এ ধারণাটি দূর করার জন্য, এবং কখনো যেন এমন ভুল না হয়, তাই এ চিন্তায় বসে গেলাম। তারপর এক পাশে কাত হয়ে কালিমা শরীফের ভুল পড়ার ক্ষতিপূরণার্থে রাসূল সাঃ এর উপর দরুদ পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু তারপরও মুখ থেকে বের হচ্ছিল-আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সায়্যিদানা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া মাওলানা আশরাফ আলী, অথচ আমি সজাগ। ঘুমন্ত নই। কিন্তু আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি। আরো অনেক কারণ আছে, যা হুজুর [আশরাফ আলী থানবী রহঃ] এর সাথে মোহাব্বাতের কারণ। কত আর বলবো? [আল ইমদাদ-৩৫, মাহে সফর, ১৩৩৬ হিজরী]
প্রিয় পাঠকেরা! এ লিখায় একথা স্পষ্ট যে, কালিমায়ে তায়্যিবার ভুল স্বপ্নে হয়েছিল। আর যিনি স্বপ্ন দেখেছেন তিনি এতে যথেষ্ঠ পেরেশান হয়েছেন। আর স্বপ্নেই নিজের ভুল বুঝতে ছিলেন। তারপরও অনিচ্ছায় মুখ থেকে ভুল কালিমা বেরিয়ে যাচ্ছিল।
আর ঘুম থেকে জাগার পর যখন দরুদ শরীফ ভুল পড়ছিলেন তখনও তিনি বলছেন যে, আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি তার ভুলের কারণে খুব কেঁদেছেনও।
এখানে কয়েকটি ভাবার বিষয় রয়েছে। ঠান্ডা মস্তিস্কে তা বুঝতে হবে।
১-
কালিমা ভুল পড়া সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল স্বপ্নে। আর স্বপ্নের একটি বাস্তব ব্যাখ্যা আছে। যার নাম হল তাবীর। স্বপ্নের তাবীর দুই ধরণের হয়। স্বপ্ন হয় বাহ্যিকভাবে অনেক খারাপ হয় কিন্তু এর তাবীর হয় ভাল। আবার কখনো স্বপ্ন হয় ভাল কিন্তু এর তাবীর হয় খারাপ।
প্রথম প্রকার স্বপ্নের উদাহরণ হল-
ক-
রাসূল সাঃ এর চাচি উম্মুল ফজল বিনতুল হারেস রাঃ এক স্বপ্ন দেখলেন। তারপর তিনি হুজুর সাঃ এর দরবারে এসে বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাতে আমি একটি খুবই খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। রাসূল সাঃ বললেন-তুমি কি দেখেছো? বল। তিনি বললেন-এটা খুবই শক্ত সন্দিহান স্বপ্ন। রাসূল সাঃ বললেন-বলনা শুনি কী দেখেছো? হযরত উম্মুল ফজল বললেন-আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর থেকে এক খন্ড গোস্ত কেটে আমার কোলে এসে পড়েছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন-তুমি অনেক সু্ন্দর স্বপ্ন দেখেছো। এ স্বপ্নে ব্যাখ্যা হল- আমার মেয়ের [ফাতিমা রাঃ] ঘরে যে বাচ্চা হবে সে তোমার কোলে খেলবে। তো হযরত হুসাইন রাঃ জন্ম নিলেন। আর তিনি আমার কোলে খেলেছেন, যেমনটি রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। {মেশকাতুল মাসাবিহ-২/৫৭২}
লক্ষ্য করুন-বাহ্যিকভাবে স্বপ্ন কতটা খারাপ ছিল, উম্মুল ফজল রাঃ যা বলতেই দ্বিধা করছিলেন। অথচ এর তাবীর কত সুন্দর।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা উদ্ধৃতি করাটা উপযোগী মনে করছি। যাতে করে বেদআতি ভন্ড হানাফীদের অন্ধ চোখ খুলে। যারা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদের উপর বিভিন্ন ধরণের অভিযোগের আঙ্গুল তুলে।

হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ একদা স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি রাসূল সাঃ এর মাযারে পৌছলেন। সেখানে পৌছে তিনি রাসুল সাৰ এর কবর মুবারক ভেঙ্গে ফেললেন। [আল্লাহ হিফাযত করুন]।
এ মারাত্মক ও পেরেশানী উদ্দীপক স্বপ্নটি তিনি তার উস্তাদকে জানালেন। সে সময় ইমাম সাহেব রহঃ মক্তবে পড়ছিলেন। তখন তার উস্তাদ বললেন-যদি সত্যিই তুমি এ স্বপ্ন দেখে থাক, তাহলে এর ব্যাখ্যা হল-তুমি রাসুল সাঃ এর হাদীসের অনুসরণ করবে। আর শরীয়তে মুহাম্মদী সাঃ কে পরিপূর্ণ তথ্য-তালাশ করে গবেষণা করবে। ব্যাস! যেভাবে উস্তাদ বলেছিলেন সে ব্যাখ্যাটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। {তাবীরুর রুউআ-১০৮, আকবর বুক ডিপো}
ভেবে দেখুন! কি রকম ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাবীর তথা ব্যাখ্যা কত সুন্দর।
বলুনতো-বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপেরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উপর কি ফাতওয়া দিবে?
একথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আজ যদি এ ঘটনার মাঝে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নামের স্থলে দেওবন্দী কোন আলেমের নাম থাকতো, তাহলে বেদআতি গ্রুপটি এ ফাতওয়া দেয়া শুরু করে দিত যে, দেওবন্দীরা রাসূলের দুশমনী করে রাসূল সাঃ কবর মুবারকও ভেঙ্গে দিচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ।
এ দু’টি স্বপ্ন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল-বাহ্যিকভাবে কোন স্বপ্ন ভয়ংকর হওয়া, এর তাবীরও ভয়াবহ হওয়া আবশ্যক নয়।
সুতরাং যে স্বপ্ন হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদ দেখেছিলেন, তা বাহ্যিকভাবে ভয়াবহ হলেও, এর দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে, এর ব্যাখ্যা তথা তাবীরও ভয়াবহ হবে। যেমন আমরা খোদ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রঃ এর বক্তব্য দ্বারা তা প্রমাণ করবো ইনশাআল্লাহ।

এটি একটি স্বপ্ন ছিল। আর স্বপ্ন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা হয়। স্বপ্নে মুখ থেকে যা বের হয় শরীয়তে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্বপ্নের কোন বিষয় শরয়ী দলিল নয়। স্বপ্নে কোন কিছু হলে সেটার মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণিত হয় না। এমনকি কেউ যদি ঘুমের মাঝে কুফরী কালাম বলে তাহলে সে কাফের হয়ে যায় না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হুকুমই আরোপিত হয় না। যেমন-
عن عائشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصغير حتى يكبر وعن المجنون حتى يعقل
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তিন ব্যক্তি থেকে [হিসাব-নিকাশের] কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১-ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, ২-না বালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, ৩-পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে সুস্থ্য হয়। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৩০২৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪০৫, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৪২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০০৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪০}
عن أبي قتادة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : ليس في النوم تفريط إنما التفريط في اليقظة
হযরত কাতাদা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঘুমন্ত অবস্থার কোন ভুল হলে এতে কোন গোনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গোনাহ হবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৯৪, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৮৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৬০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯০২, সুনানে সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৭৩৭, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৯৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৭৭, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২১০১, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৩০৭৫}
এ সকল বর্ণনা দ্বারা ফুক্বাহায়ে কিরাম এ উসূল ও মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন যে, ঘুমন্ত অবস্থায় যে কোন ধরণের কথাই কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। চাই কেউ মুসলমান হোক, বা কেউ নাউজুবিল্লাহ মুরদাত হয়ে যাক। চাই কেউ বিবাহ করে নিক, বা কেউ তালাক দিয়ে দেক।
তাইতো আল্লামা মুহাম্মদ আমীন বিন ওমর আশ শামী হানাফী রহঃ লিখেছেন-
ولذا لا يتصف بصدق أو كذب ولا خبر ولا إنشاء وفي التحرير : وتبطل عبارته من الإسلام والردة والطلاق ، ولم توصف بخبر وإنشاء وصدق وكذب كألحان الطيور
অনুবাদ-আর এ কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা, সত্য, মিথ্যা, সংবাদ, চুক্তি সম্পদান, ইত্যাদি গুণে গুনান্বিত হবে না। আর তাহরীরুল উসূলে রয়েছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কতা যেমন ইসলাম গ্রহণ, অথবা মুরতাদ হয়ে যাওয়া, স্ত্রীকে তালাক দেয়া, ইত্যাদি সবই নিরর্থক হবে। না এসবকে সংবাদ বলা যাবে। না ইনশা, না সত্য, না মিথ্যা। এসবই পাখির আওয়াজের মতই বেকার সাব্যস্ত হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৮৫৫, তালাক অধ্যায়, বেহুশ ব্যক্তির তালাক পরিচ্ছেদ, মিশরী ছাপা}
এর পর আরো লেখেন-
ومثله في التلويح ، فهذا صريح في أن كلام النائم لا يسمى كلاما لغة ولا شرعا بمنزلة المهمل
অনুবাদ-আর এমনিভাবে তালওয়ীহ এ আছে যে, এসব ইবারত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঘুমন্ত অবস্থার কথা না শাব্দিকভাবে কোন অর্থ আছে, না শরয়ীভাবে কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে। {প্রাগুক্ত}
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া স্বপ্নের ব্যাপারে লিখেন-
والرؤيا المحضة التى لا دليل يدل على صحتها لا يجوز أن يثبت بها شيئ بالإتفاق
অনুবাদ-স্বপ্ন, যার সহীহ হওয়ার উপর কোন দলিল নেই। তার দ্বারা কোন কিছু প্রমাণিত হয় না সর্বসম্মত মতানুসারে। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৭/৩৩৩}
হাদীস ও ফিক্বহের এসব স্পষ্ট ইবারত দ্বারা জানা যায় যে, ঘুম এবং স্বপ্ন অবস্থার কোন কথার উপর কোন ফাতওয়া দেয়া যায় না। যেহেতু মাসআলাটির বাস্তবতা এই, তাহলে হযরত থানবী রহঃ এরকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি করে ফাতওয়া দিতে পারতেন? তাকে কিভাবে কাফের বা মুরতাদ বলতে পারতেন? যেখানে হাদীসি ও ইসলামী ফিক্বহ বলছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা ধর্তব্য নয়। কোন গোনাহ নেই ঘুমন্ত ব্যক্তির কর্মকান্ড দ্বারা। সেখানে ঘুমিয়ে লোকটি কালিমা ভুল পড়ার কারণে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কী করে তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিতে পারেন? যেখানে লোকটি নিজেই বলছেন, যে তিনি এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণেও অনেক কেঁদেছেন। খুব ভয় পেয়েছেন। তারপরও কোন পাগল ছাড়া কেউ কি উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুফরীর ফাতওয়া দিতে পারে? হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ তো কথিত আহলে হাদীস আর আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী এবং তার বেদআতি গ্রুপের মত আহমক নয় যে, এতটুকু দ্বীনী সমঝও তার নেই যে, শরীয়ত যার ব্যাপারে বলেছে তার কোন গোনাহ হয়নি। হয়নি কোন অপরাধ। সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুট করে ফাতওয়া দিয়ে দিবেন যে, লোকটি কুফরী কাজ করেছে।
আল্লাহ তাআলা এসব মুর্খদের দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন।
অভিযোগ নং-২
আচ্ছা ঠিক আছে। স্বপ্নের কথা কোন দলিল নয়। তাই স্বপ্নে কালিমা ভুল পড়ার কারণে লোকটির বিরুদ্ধে কুফরীর ফাতওয়া দেয়া যাবে না। কিন্তু উক্ত মুরীদ আগে কী লিখেছেন সেটা কি নজরে পড়েনি? তিনি নিজেইতো লিখেছেন যে, যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছেন তখনো তার অবস্থা তাই ছিল। এটাতো নিদ্রা অবস্থায় ছিল না, তাহলে এটি কেন কুফরী নয়?
জবাব
এখানেও লক্ষ্যনীয় হল-জাগ্রত হওয়ার পর মুরীদ সাহেবের বক্তব্যটি কি ছিল? তিনি বলছেন যে,
“আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি”।
এর দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, মুরীদ সাহেব অনিচ্ছায় এসব কথা মুখ থেকে বেরিয়েছে। তিনি এর জন্য খুবই অনুতপ্ত। সেই সাথে এর জন্য কেদেছেনও খুব। এ ভুল কথাকে তিনি সঠিক মনে করেন নি। ভুল বলছেন বুঝতে পেরে পেরেশান হয়েছেন। আফসোস করেছেন। কেঁদেছেন।
এরকমভাবে অনিচ্ছাকৃত ভুল কথা মুখ থেকে বেরিয়ে গেলেও শরীয়তে কোন ধরপাকড় নেই। ইচ্ছেকৃত করলে অপরাধ তথা গোনাহ হয়। অনিচ্ছায় করলে কোন গোনাহ হয় না।
এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকে মুমিনদের এ দুআ পাঠ করতে শিখিয়েছেন যে,
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٢:٢٨٦]
হে আমাদের পালনকর্তা,যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। {সূরা বাকারা-২৮৬}
আর হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা এ দুআ কবুল করেছেন। অর্থাৎ অনিচ্ছায় ভুল করলে, বা ভুলে গেলে আল্লাহ তাআলা গোনাহ না লিখার দরখাস্ত আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেছেন। দেখুন-তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৩৪৩, মিশরী ছাপা, সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৩৪৪, ৩৪৫}
অন্যত্র হাদীসে এসেছে-
عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( إن الله وضع عن أمتي الخطأ والنسيان
অনুবাদ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার উম্মত থেকে ভুল ও ভুলে যাওয়াকে [হিসাব নিকাশ থেকে] বাদ দিয়ে দিয়েছেন। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১১২৩৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং- ৩৩, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭২১৯, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৭৯৪, মুশনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১০৯০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৮৩৪০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১১৪১৬}
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ভুলক্রমে যদি মুখ দিয়ে কোন কুফরী কালাম বলে ফেলে, তাহলে এর দ্বারা গোনাহ হবে না।
আরো স্পষ্ট প্রমাণ দেখুন-
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ – وَهُوَ عَمُّهُ – قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِى ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِى وَأَنَا رَبُّكَ.
أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা গোনাহগার বান্দার তওবার দ্বারা এর চেয়েও বেশি খুশি হন, যে কোন মুসাফিরের আরোহনের উষ্ট্রী কোন বিয়াবানে হয়। আর সে তা হারিয়ে ফেলে। যাতে ছিল খাদ্য ও পানি। তারপর নিরাশ হয়ে পরে। তারপর সে আসে কোন গাছের নিকট। এসে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে যায় উষ্ট্রীটির ব্যাপারে নৈরাশ্যতা নিয়ে। তারপর কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে উষ্ট্রীটি তার শিয়রে দাড়ানো। তারপর সে উষ্ট্রীটির লাগাম ধরে, তারপর প্রচন্ড খুশিতে বলে-হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা! আর আমি তোমার রব! প্রচন্ড খুশিতে ভুল বলে ফেলে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭১৩৬, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪২৫}
এখানে লোকটি বলতে চাচ্ছিল যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার রব! আর আমি তোমার বান্দা! অথচ খুশিতে বলে ফেলেছে উল্টোটা। একথা লোকটি বেহুশ অবস্থায়ও বলেনি, বলেনি ঘুমন্ত অবস্থায়ও। না অচেতন অবস্থায়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে কুফরী কথা। যে কথা বলতে সে ইচ্ছে করে নি।
এ বিষয়কে বদনাম করা হয়নি। বরঞ্চ প্রশংসাসূচক হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং হাকীমুল উম্মত রহঃ এর মুরীদের উপর কেন এ খরগ?
ফুক্বাহায়ে কেরাম খাতা তথা ভুলের সংজ্ঞা এ বিশ্লেষণে যথেষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন কাজীখান রহঃ বলেন-
الخاطى من يجرى على لسانه من غير قصد كلمة مكان كلمة
অনুবাদ-ভুলকারী বলা হয়, যার মুখ দিয়ে অনিচ্ছায় এক কথার স্থলে অন্য কথা বেরিয়ে যায়। {ফাতওয়া কাজীখান আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৪/৮৮৩}
তিনি আরো লিখেন-
الخاطى اذا جرى على لسانه كلمة الكفر خطاء بان اراد ان يتكلم بما ليس بكفر فجرى على لسانه كلمة الكفر خطاء لم يكن ذالك كفر عند الكل
অনুবাদ-আর ভুলকারী যদি ভুলে মুখ দিয়ে কুফরী কালিমা বলে ফেলে, অথচ এমন কালিমা বলতে চেয়েছিল যাতে কুফর নেই, কিন্তু ভুলে তার মুখ দিয়ে কুফরী কথা বেরিয়ে গেছে, তাহলে সকল ফুক্বাহায়ে কেরামের নিকট এটা কুফরী নয়। {প্রাগুক্ত}
আল্লাহ তাআলা ইয়ামিনে লগু তথা অযথা ইয়ামিনকে মাফ করে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ ইয়ামিনে লগু এর উপর কোন পাকড়াও হবে না। {সূরা বাকারা-২২৫}
আর ইয়ামিনে লগু এর অন্তর্ভূক্ত এমন কথাও যা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়, অনিচ্ছায় মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। {তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/২৬৭}
শাইখ ইবনে তাইমিয়া লিখেন-
اما القاتل خطأ فلا يؤخذ منه قصاص، لا فى الدنيا، ولا فى الآخرة،
অনুবাদ-ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলে তার উপর কেসাস জারি হয় না। দুনিয়াতেও না, আখেরাতেও না। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৪/১২০}
ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলেও কিসাস আসে না। আসে না ভুলে কসম করলে কোন জরিমানাও। সেখানে সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়, সেই সাথে কান্না ও অনুশোচনা সত্বেও ভুলক্রমে মুখ থেকে বের হওয়া কুফরী কথার কারণে কাফের সাব্যস্ত করাটা দ্বীন সম্পর্কে কতটা অজ্ঞতা একবার ভেবে দেখবেন কি?
শুধু তাই নয়, বেদআতিদের ইমাম আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী সাহেবের ফাতওয়াটিও দেখা যেতে পারে। যাতে করে বেদআতি গ্রুপটি নিজেদের স্ব-বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে অন্তত ধারণা পায়।
“শরীয়তে আহকামে এযতিরার তথা নিরূপায় হয়ে কোন কিছু করার বিধান আহকামে এখতিয়ার তথা ইচ্ছেকৃত কোন করার বিধান ভিন্ন। {মালফুযাত-১/৫৫, ফরীদ বুক স্টল}
সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাগণ এবার একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে বলুন তো, যেখানে মুরীদ ব্যক্তিটি নিজেই বলছেন যে,
আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি।
ইসলামি শরীয়ত যেখানে বলছে যে, অনিচ্ছায় কোন কিছু করলে শাস্তি হয় না। সেখানে লোকটি অনিচ্ছায় এমনটি করেছেন, ভুল করেছেন তিনি নিজেও জানেন, তাই আফসোস করেছেন, কেঁদেছেনও খুব। এমন ব্যক্তিকে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কি করে কাফের বলতে পারেন?
আর এখানে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নিজেই কি করে কাফের হয়ে গেলেন? বেদআতি গ্রুপ আর কথিত আহলে হাদীসরা হক্কানী আলেমদের কাফের বানাতে পারলেই মনে করে থাকে বিরাট বড় দ্বীনের খিদমাত করে ফেলেছে। অথচ রাসূল সাঃ এর এ হাদীসের কথা তাদের মনেই থাকে না যে, -
ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لأَخِيهِ يَا كَافِرُ. فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ وَإِلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা উভয়ের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা’ই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে, নতুবা উক্ত বিষয়টি যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫০৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৩৭}
অভিযোগ নং-৩
লোকটি উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখল। এটা স্বপ্নে হয়েছে। তারপর ভুলে দরূদ উল্টাপাল্টা বলেছে। এটা অনিচ্ছায় করেছে। তাই আইনত কোন অপরাধ হয়নি, ঠিক আছে। কিন্তু আশরাফ আলী থানবী রহঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কেন বললেন যে, “লোকটি যার সাথে সম্পর্ক করার ইচ্ছে করছে সে সুন্নাতের অনুসারী?”।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবুওয়াতেরই দাবি করার মুডেই ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ।
জবাব
এ উদ্ভট প্রশ্নটির জবাব আগেই গিয়েছে। স্বপ্ন খারাপ হওয়া মানেই তার তাবীরও খারাপ হওয়াকে আবশ্যক করে না। বরং অনেক সময় খারাপ স্বপ্নে তাবীর ভাল হয়। আর ভাল স্বপ্নে তাবীর খারাপ হয়।
আর সবচে’ বড় কথা হল-এ প্রশ্নটির জবাব খোদ আশরাফ আলী থানবী রহঃ আল ইমদাদের যে ঘটনা নিয়ে এত তোলপাড় করছে বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীসরা, সেটিতেই উল্লেখ আছে।
এ হক্কানী ওলামা বিদ্বেষী গ্রুপটা যদি হযরতের কিতাবটি ভাল করে পড়ে তারপর প্রশ্ন উত্থাপন করতো, তাহলে এ প্রশ্ন করারই আর কোন প্রয়োজন থাকতো না।
আল ইমদাদে উক্ত স্বপ্নের তাবীর করতে গিয়ে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ লিখেন-
“কখনো কখনো স্বপ্ন দ্বারা জানা যায় যে, রাসূল সাঃ আগমন করেছেন। আর মনও সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূল সাঃ ই এসেছেন। কিন্তু সাক্ষাতের সময় দেখা গেল চেহারা অন্য ব্যক্তির। এক্ষেত্রে আহলে তাবীর তথা স্বপ্ন ব্যাখ্যাতাগণ এটাই বলেন যে, এটা ইংগিত যে, এ ব্যক্তি মুত্তাবেয়ে সুন্নাত তথা সুন্নাতের অনুসারী। সুতরাং যেমন এখানে রাসূল সাঃ এর চেহারার বদলে অন্যের চেহারা দেখা স্বপ্নের তাবীর সুন্নাতের অনুসারী বলে দেয় হল, ঠিক এভাবেই রাসূল সাঃ এর নামের বদলে অন্য নাম মুখে আসার তাবীর যদি সুন্নাতের অনুসারী বলে করা হয় তাহলে এতে শরীয়তের কোন নিষিদ্ধ বিষয় আবশ্যক হল?” {আল ইমদাদ, মাহে জমাদিউস সানী ১৩৩৬ হিজরী, ১৯ নং পৃষ্ঠা}
আশা করি আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বক্তব্য দ্বারা স্বপ্ন ও তাবীর তথা স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যকার সম্পর্কও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়টিকে আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন বলা, কালিমা পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে প্রচার করাটা কতটা নীচ আর জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন হলে করা যায় একবার ভেবে দেখি।
সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি কি নবুওয়তের দাবি করে? যে ব্যক্তি বলছে এর মানে হল সুন্নাতের অনুসারী। যিনি সুন্নাতের অনুসারী তিনি তো রাসূল সাঃ এর পূর্ণাঙ্গ অনুগত। নবুওয়াতের দাবিতো হল রাসূল সাঃ এর সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা। তাহলে অনুগত দাবি করে বিদ্রোহ হয় কি করে?
এ রকম নীচ ও জঘন্য মিথ্যাচার প্রচারের নাম যদি মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান, আর বেদআতি গ্রুপের কাছে দ্বীন প্রচার হয়, তাহলে মিথ্যাচার আর ধোঁকাবাজী প্রচার কাকে বলে?
এরপরও যেসব অসৎ লোক দ্বীন প্রচারের নামে মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে এ পৃথিবী বিখ্যাত বুযুর্গ ও স্বীকৃত আলেমের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই পেশ করছি-
لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ } [آل عمران: 61]
অনুবাদ-মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}

তাবলীগী নেসাব ফাযায়েলে আমালের উপর উত্থাপিত কয়েকটি অহেতুক প্রশ্নের জবাব ।

 একজন তাবলীগের সমালোচক নিম্নের মন্তব্যটি করেছে ।


 তাব্লিগের বয়ানে বলা হয় কোনো মুসলমান ভাইয়ের দাওয়াতের জন্য তার ঘরের
সামনে কিছু সময় অবস্থান করা শব-এ-কদর এর রাতে হাজর-এ-আসওয়াদ পাথরকে সামনে নিয়ে এবাদত করার চেয়েও বেশি দামি এ কথার কোন ভিত্তি আছে কি?

আল্লাহর রাস্তায় একটা আমল করলে ৪৯ কোটি গুন আমলের সওয়াব হয়’ এর দলিল কি?

আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল/এক বিকাল বের হওয়া দুনিয়া এবং দুনিয়ার মাঝে যা আছে এর চেয়েও উত্তম নেকি’ এটা কোন হাদীস?

আল্লাহর রাস্তায় ধুলাবালি গায়ে লাগলে জাহান্নামের আগুন ত দুরের কথা জাহান্নামের ধুয়াও স্পর্শ করবে না’।
এটার দলিল কি?

রাহবার,মুতাকাল্লিম আর মামুর ভাইদের নিয়ে এক জামাত গাস্তে বের হয় আর এক জামাত মাসজিদ এ অবস্থান করে,যেখানে এক ভাই বয়ান করে,একজন জিকির এ থাকে আর একজন এস্তেগবাল এ থাকে।
এইটা কি নবীজি অথবা তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রচলন ছিলো নাকি নতুন প্রচলন????

৩ দিন,৪০দিন আর ১২০ দিনের হাদিসের দলিল কি???দাওয়াত দেওয়ার জন্য/ইমান শিক্ষা করার জন্য কি দিন নিদিষ্ট করা লাগে ???সাহাবিরা কি এইভাবে নির্দিষ্ট কিছু দিনকে ঠিক করে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছিলেন নাকি যখনি সময় হয়েছিলো তখনি আল্লাহর রাস্তায় হাজির হয়েছিলেন???

তাবলীগী ভাইয়েরা কুরআন হাদীসের আয়াত না বলে বয়ানে শুধু মুরুব্বীরা বলেন! মুরুব্বীরা বলেন! একথা বলে কেন?
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রারম্ভিকা
আজকাল আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ আলেম আর গায়রে আলেমের মাঝের পার্থক্য জানে না। হাস্যকর ব্যাপার হল-দু’ একটি বাংলা বা ইংরেজী ভাষায় হাদীসের কিতাব ও কুরআনের অনুবাদ পড়েই এখন অনেকে আল্লামা সেজে যাচ্ছেন। কিছু কিতাবের অনুবাদের রেফারেন্স মুখস্ত করে একের পর রেফারেন্স দিতে পারলেই আমাদের সমাজের সাধারণ লোকেরা বড় আল্লামা বানিয়ে দিচ্ছে লোকটিকে। লোকটির মাঝে আরবী বুঝার ক্ষমতা আছে কি না? অনুবাদ ছাড়াই মূল কিতাব থেকে মাসআলা বের করার যোগ্যতা আছে কি না? কুরআনের আয়াতের শানে নুজুল, শব্দের অলংকার, আরবী ব্যাকরণ, নাসেখ-মানসুখ, শানে ওরুদ, তাফসীর ইত্যাদী সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে কি না? ইত্যাদি যাচাই করা ছাড়াই অনুবাদের রেফারেন্সদাতাদের যে সমাজ আল্লামার মর্যাদা দিতে শিখে। সে সমাজের লোকেরা আলেমদের কাছে কেন যাবে?
আলেমদের কাছে না যাওয়ার কারণে। যারা কুরআন সুন্নাহকে মূল কিতাব থেকে, তার নাসেখ-মানসূখ, শানে ওরুদ ও শানে নুজুল, তাফসীর ইত্যাদিসহ মাসায়েল বর্ণনা করেন, ব্যাখ্যা দেন, তাদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ না করা আমাদের সমাজে বিভ্রান্তির মূল কারণ।
নিজে নিজেই কিছু অনুবাদ পড়ে আল্লামা সাজার প্রবণতা ইদানিংকালে বেড়ে গেছে। কোন কিতাবের অনুবাদ পড়ে বুঝতে না পারলে, বা কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে নিজে নিজেই এর সামাধান খুঁজে। না পেলে প্রচার করতে শুরু করে কিতাবটি ভুল। শিরকে পূর্ণ। আদৌ কি বিষয়টি এমন কিনা? কোন বিজ্ঞ আলেম থেকে তা জেনে নেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ না করায় গোমরাহ হচ্ছে এ সমাজের অনেক নতুন প্রজন্ম।
অষুখ হলে বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা করাকে কেউ নিরাপদ না মনে করলেও,
বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ইঞ্জিনিয়ারের কাছে না গিয়ে নিজে নিজেই নির্মাণ শুরু করাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলেও, আজকের সমাজের মানুষেরা কুরআন সুন্নাহের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের শরনাপন্ন হওয়া ছাড়া নিজে নিজেই সব শিখে নেবার মত দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আর গোমরাহীর অতলে যাচ্ছে তলিয়ে।
কোন কিতাবের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন জাগলে এ বিষয়ে প্রাজ্ঞদের কাছে এর জবাব জানতে চাইতে হবে। নিজে নিজে সমাধান খুঁজে না পেলে বদনাম ছড়ানোটা আহমকীর নিদর্শন। নিজের অজ্ঞতাকে দলিল নেইয়ের উপর প্রমাণ পেশ করাটা বোকামী ছাড়া আর কী হতে পারে?
ফাযায়েলে আমাল ও আকাবীরে দেওবন্দ এবং হক্কানী ওলামাদের উপর উত্থাপিত অভিযোগের অবস্থা তা’ই। কিছু অতি পন্ডিত লোক কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির তত্বাবধান ছাড়া নিজে নিজে কিতাবগুলো পড়ে। তারপর প্রশ্ন জাগে। নিজে নিজেই এর সমাধান খুঁজে। উত্তর না পেয়ে ছড়াতে শুরু করে এ কিতাব ভুল। শিরকে পূর্ণ।
ডাক্তারী বই নিজে নিজে পড়ে কোথাও প্রশ্ন জাগলে নিজে নিজে খুঁজে উত্তর না পেয়ে যদি উক্ত পাঠক ডাক্তারী ঐ বইকে ভুল সাব্যস্ত করে, তাহলে বিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে যেমন বিষয়টি চরম হাস্যকর হয়। তেমনি এ অতি পন্ডিত কুরআন সুন্নাহের অনুবাদ পাঠকদের অভিযোগের ধরণ দেখে হাসি পায় বিজ্ঞ আলেমদের।
ফাযায়েলে আমালের উপর উত্থাপিত এ প্রশ্নটিও তেমনি। যেভাবে প্রশ্নটি করা হয়েছে, মনে হচ্ছে প্রশ্নকারী বিশাল হাদীস বিশারদ। কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিরাট প্রাজ্ঞ লোক। নিম্নেই লক্ষ্য করে দেখুন প্রশ্নগুলো কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে কতটা অজ্ঞতা থাকলে করা হয়েছে।
১ এর উত্তর
عن أبي هريرة سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : ( موقف ساعة في سبيل الله خير من قيام ليلة القدر عند الحجر الأسود
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাঃ বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেছেন- আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা শবে কদরে হাজরে আসওয়াদের সামনে ইবাদত করা হইতে উত্তম।
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬০৩
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৯৮১
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৫৬০
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং- ২৪৩৪৮
২ এর উত্তর
আল্লাহর রাস্তায় বের হলে অনেক সওয়াব হবে। অনেক হাদীসে সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছে সওয়াবের। তবে নির্দিষ্ট করে ৪৯ কোটি বলাটা উচিত হবে না। তবে অগণীত সওয়াব হয় আল্লাহর রাস্তায় বের হলে এটা নিশ্চিত। নিম্নের ৩টি হাদীস থেকে তা স্পষ্ট হয়।
عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبعمائة ضعف
অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪
এবার দেখুন আল্লাহর রাস্তায় আমল করলে খরচের থেকে কত বেশিগুণ সওয়াবের কথা হাদীসে এসেছে-
عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ الصَّلاَةَ وَالصِّيَامَ وَالذِّكْرَ تُضَاعَفُ عَلَى النَّفَقَةِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ بِسَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় নামায, রোযা, এবং জিকিরের সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৫০০
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৮৩৫৫
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৮৯০৬
জামেউল আহাদীস নং-৬৪৮৮
অন্য হাদীসে এসেছে-
عن سهل بن معاذ عن أبيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الذكر في سبيل الله تعالى يضعف فوق النفقة بسبع مائة ضعف قال يحيى في حديثه بسبع مائة ألف ضعف
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৮৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮
৩ এর উত্তর
عن انس قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- غدوة في سبيل الله أو روحة خير من الدنيا وما فيها
অনুবাদ-আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার ভিতর যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬১৯৯,
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৯৮৫,
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬৪৮,
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭৩৯৮,
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩২৭,
আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৬৬৭,
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৫৮৩৫,
মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৭৩৫৪,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৬০২,
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৫৪৮,
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৪৬৬,
মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২২৫,
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৮২০,
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৯৫৪৩
৪ এর উত্তর
عن أبي هريرة أن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( لا يجتمع غبار في سبيل الله ودخان جهنم في جوف عبد مسلم
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি আর জাহান্নামের ধোঁয়া কোন মুসলিমের পেটে একত্র হতে পারে না।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৭৭৪
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৮২৮৯
আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-২৮১
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩২০
আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-১৯১১
সহীহ ইবেন হিব্বান, হাদীস নং-৩২৫১
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭২২
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৪৮০
মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-১০৯১
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩৫৬২
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৮৪৬
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৯৫২
৫ ও ৬ এর উত্তর
এ প্রশ্নটি একটি বোকামীসূলভ প্রশ্ন। দ্বীন প্রচারের পদ্ধতি ও মূলনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয়বাহী এসব প্রশ্নাবলী। তাবলীগের চিল্লা, তিন দিন, এক সাল। গাস্ত ইত্যাদীর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি যদি বেদআত হয়। তাহলে মাদরাসার একাডেমিক পদ্ধতি কেন বেদআত নয়? ক্লাসিক্যাল পদ্ধতিতে কেন মাদরাসাগুলোতে একের পর এক কিতাব পড়ানো হয়? এ পদ্ধতিতে কি রাসূল সাঃ দ্বীন শিখিয়েছেন? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আরবী বিশ্ববিদ্যাল, জামিয়াগুলোর পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সনদ প্রদানও একটি বিদআত সাব্যস্ত হবে। কারণ এমন পদ্ধতিতে রাসূল সাঃ কুরআন হাদীস শিক্ষা দেন নি। এগুলোকে বেদআত বলাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? না চূড়ান্ত পর্যায়ের আহমকীর নিদর্শন হবে এরকম প্রশ্ন করা?
তাবলীগ জামাআত কোন নতুন দল বা সংগঠনের নাম নয়, বরং নবী করীম সাঃ এর তিরোধানের পূর্ব থেকেই বিদায় হজ্বের পর থেকে ব্যাপক হারে সাহাবায়ে কিরাম রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক যুগেই কমবেশি সম্মিলিত ও বিচ্ছ্ন্নিভাবে দাওয়াতের এ দায়িত্ব পালিত হয়ে আসছিল।
হযরত ইলিয়াস রহঃ ব্যাপক আকারে ও সংগঠিতরূপে সেটির পুনঃজাগরণের চেষ্টা করেছেন মাত্র। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই যেমন কর্মধারা ও সূচি থাকে, তিনিও তেমনি এ জামাতের জন্য কিছু কর্মধারা তৈরী করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য প্রাথমিকভাবে অধিক উপকারী ও জরুরী বিষয় চিন্তা করে। পূর্ণ শরীয়তকে সামনে রেখে এর মাঝে কোন বিষয়গুলো প্রথমে আমলে আনতে পারলে পূর্ণ শরীয়তের উপর পাবন্দ হওয়া সহজ হয়ে যাবে তা চিন্তা করে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন। এরই অন্তর্ভূক্ত ৬ গুণ, ৩ দিন, এক চিল্লা, তিন চিল্লা, গাস্ত, ইত্যাদী। যা কোনভাবেই শরীয়তের গন্ডির বাহির থেকে নয়। সেই সাথে শরয়ী কোন হুকুমকে অস্বিকার করে নয়।
যেমন বর্তমান মাদরাসা শিক্ষা শরীয়তের মাঝে নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং সাহাবায়ে কিরামের মাঝে আসহাবে সুফফার যে জামাআত সার্বক্ষণিক দ্বীন চর্চায় নিমগ্ন থাকতেন সেটাই ছিল সর্ব প্রথম মাদরাসা। যদিও বর্তমান মাদরাসা পদ্ধতি আর আসহাবে সুফফার মাদরাসার মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। মৌলিকত্বে কোন পার্থক্য নেই। সে সময় কোন সিলেবাস ছিল না। ছিল না কোন ক্লাসিক্যাল অবকাঠামো। ছিল না সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি। ছিল না বিধিবদ্ধ শিক্ষক ষ্টাফের কোন মূলনীতি। কিন্তু পরবর্তীতে আম ফায়দার জন্য এবং দ্বীন চর্চায় অধিক উপকার অর্জনের নিমিত্তে একটি একাডেমিক পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়েছে। যে আবিস্কার কোন বিদআত নয় মর্মে সকল ওলামায়ে কিরাম একমত। তেমনি তাবলীগ জামাআতের বর্তমান সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে কিছু মূলনীতি নির্ধারণও কোন নতুন বিষয় নয়, বা বিদআত নয়। কারণ মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতিকে যেমন আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না, কিন্তু ইলমী দ্বীন চর্চাকে জানি সওয়াবের কাজ। তেমনি তাবলীগ জামাআতের পদ্ধতিটা মূলত সওয়াবের কারণ নয়, বরং এর দ্বারা যে কাজটি আঞ্জাম দেয়া হয় তথা তাবলীগ সেটি হল সওয়াবের কাজ। এ দু’টিতে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং তাবলীগ জামাআতকে দ্বীন এর মাঝে নতুন সংযোজন বলে বিদআত সাব্যস্ত করাটা বিদআতের সংজ্ঞা ও দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত পর্যায়ের অজ্ঞতার পরিচায়ক। কারণ বিদআত বলা হয়
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।
-সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।
-দ্বীনী বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয়। যেমন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়। কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।
-দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে। দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল এটা সওয়াবের কাজ। সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদী। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক। তেমনি তাবলীগের বর্তমান পদ্ধতিটি ইলিয়াস রহঃ আবিস্কার করেছেন দ্বীন প্রচারের সহায়ক হিসেবে। তথা দ্বীনের জন্য আবিস্কার। দ্বীন মাঝে আবিস্কার নয়। তাই এটি বিদআত হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
যারা বলেন এ পদ্ধতি বিদআত, তারা মূলত দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচয় দেন এসব কথা বলে।
তাবলীগ জামাআতের কাজ যেহেতু রাসূল সাঃ ও পরবর্তী সাহাবায়ে কিরামের প্রচার করা দ্বীন প্রচারেরই একটি সুসংহত রূপ মাত্র। তাই তাবলীগ জামাআতের কাজের সাথে সেসব ফযীলত শামিল হবে যা কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত দ্বীন প্রচারের ফযীলত। যেমন দ্বীন শিক্ষার ফযীলত প্রাপ্ত হবে বর্তমান একাডেমিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা মাদরাসা ছাত্ররা।
৭ নং এর উত্তর

তাবলীগী সাথি ভাইরা বয়ান বা দাওয়াত দেওয়ার সময় সরাসরি কুরআন সুন্নাহের সরাসরি উদ্ধৃতি না দিয়ে তারা মুরব্বীরা বলেছেন বলাটা একটি প্রশংসনীয় পদ্ধতি। এটাকে সমালোচনার প্লাটফর্ম বানানোটাও বিদ্বেষমূলক করা হয়েছে।
কুরআন হাদীস খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। যে ইচ্ছে সে, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তা বলাটা একদম অনুচিত। দু’ লাইন বাংলা অনুবাদ পড়ে শাইখ সাজার কুশিক্ষা তাবলীগে শিক্ষা দেয়া হয় না। কুরআন ও হাদীস বর্ণনায় আদব ও সতর্কতার প্রতি লক্ষ্য করেই এ পদ্ধতিতে কথা বলে থাকেন তাবলীগী ভাইয়েরা।
আর এ পদ্ধতি সাহাবাদের থেকেই প্রাপ্ত। এরকম অনেক সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন যারা রাসূল সাঃ বলেছেন একথা সরাসরি বলতে খুবই ভয় পেতেন। তাই এমনিতে মাসআলা বলে দিতেন কিন্তু একথা রাসূল সাঃ বলেছেন একথা সরাসরি বলতেন না। আল্লাহর নবীর দিকে মিথ্যার নিসবত হওয়ার ভয়ে। যেমন-
عبد الله بن الزبير عن أبيه قال قلت للزبير بن العوام ما لي لا أسمعك تحدث عن رسول الله صلى الله عليه و سلم كما أسمع ابن مسعود وفلانا وفلانا ؟ قال أما إني لم أفارقه منذ أسلمت . ولكني سمعت منه كلمة . يقول ( من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار )
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত জুবাইর বিন আওয়াম রাঃ কে একদা জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনার কি হল? আপনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ও অন্যান্যদের মত রাসূল সাঃ থেকে কোন হাদীস কেন বর্ণনা করেন না? তখন তিনি বললেন-শোন! আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূল সাঃ থেকে পৃথক হইনি। [অর্থাৎ রাসূল সাঃ থেকে আমি অনেক হাদীসই শুনেছি, কিন্তু আমি বর্ণনা করিনা কারণ হল] কিন্তু আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছেকৃত মিথ্যার নিসবত করবে সে তার বাসস্থান জাহান্নামকে বানিয়ে নিবে। [এ ভয়ে আমি হাদীস বর্ণনা করি না। ]
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৫৩
তো সাধারণ মানুষ সরাসরি কুরআন হাদীসের কথা না বলে মুরুব্বীরা বলেছেন বলাটা কি অধিক নিরাপদ বক্তব্য নয়? এটাতো প্রশংসনীয় পদ্ধতি। এটাকে সমালোচনা করার কি হল?
আল্লাহ তাআলা তাবলীগ জামাতের মত মকবুল জামাতের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এর দ্বারা সকল মানুষের আরো বেশি দ্বীনের খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।


ইসলামে লাগামহীন মুক্তচিন্তার কোন সুযোগ আছে কি? আল্লাহর অস্তিত্ব যুক্তি দিয়ে প্রমাণ কি জায়েজ?


১. ইসলামে কুরআন সুন্নাহ ছাড়াও লাগামহীন মুক্তচিন্তার কোন সুযোগ আছে কি?‎
২. কাউকে আল্লাহ তায়ালা একক এই কথার দাওয়াত দিতে ম্যাথ ও পদার্থবিদ্যা দিয়ে তা প্রমাণ করার ‎অনুমোদন শরীয়তে আছে কি?‎
১ম অংশের জবাব
ইসলামে শরয়ী সীমারেখা বহির্ভূত মুক্তচিন্তার কোন স্থান নেই। ইসলামকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে হবে। ‎সামগ্রিক জীবনে ইসলামের বেঁধে দেয়া চৌহদ্দির মাঝে থেকেই কালাতিপাত করতে হবে। যা মনে চায় ‎তা’ই করা যাবেনা। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা ‘দুনিয়া পরীক্ষাগার’ উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন যে, ‎الَّذِي ‏خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ (2)‏‎ যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন ‎তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাকারী (সূরা মুলক-২) পরীক্ষা কেন্দ্র যেমন ‎পরীক্ষক যা জানতে চেয়েছেন, যা করতে বলেছেন কেবল তা’ই করতে হয়, তেমন দুনিয়াতেও একজন ‎মুসলমান তা’ই করতে পারে যা তার স্রষ্টা করতে বলেছেন। যেভাবে করতে বলেছেন সেভাবেই করতে ‎হবে। ‎
নবীজী সা. দুনিয়াকে আখ্যা দিয়েছেন মুসলমানদের জন্য জেলখানা হিসেবে। ইরশাদ করেছেন যে, ‎عَنْ أَبِى ‏هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ‎ অর্থাৎ দুনিয়া মুসলমানদের ‎জন্য জেলখানা আর কাফেরদের জন্য জান্নাত। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৭৬০৬)‎
সুতরাং লাগামহীন উদার মুক্তচিন্তা কখনোই ইসলাম সাপোর্ট করেনা। এই জন্যই আল্লাহ তায়ালা এক ‎আয়াতে ইরশাদ করেন যে, ‎‏ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ‏‏(208)‏‎ অর্থাৎ হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও। আর তোমরা শয়তানের পদাংক ‎অনুসরণ করনা। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা-২০৮) ‎
অন্যত্র মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন যে, ‎وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (285)‏‎ ‎তোমরা বল যে, আমরা শুনলাম আর মানলাম। তুমিই আমাদের ক্ষমাকারী প্রতিপালক। আর তোমার ‎দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।(সূরা বাকারা-২৮৫) ‎
সুতরাং বুঝা গেল। ইসলামে লাগামহীনতার কোন দখল নেই। একজন মুসলিম তার পূর্ণ জীবনটাই আল্লাহ ‎এবং তার নবী সা. এর আদর্শের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কুরআন সুন্নাহর গন্ডির বাইরে কোন কিছু ‎করার তার কোন এখতিয়ার নেই। এর মানে এই নয় যে, দুনিয়া নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা করা ‎ইসলামে বৈধ নয়। বরং লাগামহীনতা ইসলাম সাপোর্ট করেনা। ইসলাম বরং চিন্তা-ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়। ‎করতে উৎসাহ প্রদান করে। এই জন্যই মহান রাব্বুল আলামীন এক আয়াতে ইরশাদ করেন যে, ‎‏ أَفَلاَ ‏يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ اخْتِلاَفًا كَثِيرًا (82)‏‎ তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা ‎করেনা? যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তাহলে তারা তাতে অসংখ্য মতভেদ ‎পেত।(সূরা নিসা-৮২)‎
তাই গবেষণা, উদ্ভাবন এটা নিন্দনীয় কোন বিষয় নয়। বরং প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে লাগামহীন হওয়া ‎যাবেনা। যদ্বারা নিজের ঈমানের উপর শংকা চলে আসে। ‎
২য় অংশের জবাব
দাওয়াত দেবার ক্ষেত্রে ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে তার মূলনীতি। ইরশাদ হয়েছে-‎ادْعُ إِلِى سَبِيلِ ‏رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ‏‏(125)‏
অর্থাৎ তোমরা ডাক আল্লাহর পথে হিকমতের সাথে (বুদ্ধিমত্বার সাথে)। আর সুন্দর নসিহত করে। আর ‎তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। তোমাদের রব জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হবে। আর তিনি ‎হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারেও ভাল জানেন (সূরা নাহল-১২৫)‎
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে হবে বুদ্ধিমত্বার সাথে। সুন্দরভাবে। ‎উত্তম পন্থায় বিতর্ক করে। তা’ই একজন যুক্তিবাদী মানুষকে দাওয়াত দিতে হলে তাকে বুদ্ধিমত্বার সাথে ‎তার যুক্তি দিয়েই তাকে আল্লাহর পথে আহবান করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সুতরাং যেকোন বিষয় দ্বারাই ‎আল্লাহর অস্তিত্ব ও দ্বীন প্রচার করা হোক তা বৈধ হবে। কিন্তু শর্ত হল এই যুক্তিতর্ক যেন কিছুতেই দ্বীনের ‎মৌলিকত্বের গন্ডির বাইরে না যায়। যেমন আল্লাহ এক বুঝাতে গিয়ে ভগবান ১০০ জন মেনে নেয়া। ‎এরকম কুফরী কথার মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া যাবেনা। গন্ডির মধ্যে থেকেই যতটুকু সম্ভব যুক্তিতর্ক ব্যবহার ‎করা যাবে। ‎
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দ্বীনের দায়ী হিসেবে কবুল করুন। ‎

কথিত আহলে হাদীসদের আমীন ও রফয়ে ইয়াদাইন করা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য}

  এটাতেও গায়রে মুকাল্লিদরা তাদের প্রতিদিনকার আমলের উপর দস্তখত করতে অস্বিকৃতি জানালো।
১- সবাই জানে যে, অধিকাংশ নামায [যেমন সুন্নাত ও নফল] একাকি পড়া হয়। সে সময় গায়রে মুকাল্লিদরা আমীন আস্তে আস্তে বলে।
২-জামাতের সাথে নামাযে ইমাম একজন হয়, আর মুক্তাদী হয় বাকিরা। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার থাকা দরকার যে, গায়রে মুকাল্লিদ মুসল্লি প্রতিদিন এগার সিররী [আস্তে কেরাত পড়া নামায] রাকাতের পিছনে আস্তে আস্তে আমীন বলে। আর ছয় রাকাতে পড়ে জোরে জোরে।
এখানে দেখুন ছয় রাকাতের চেয়ে এগার রাকাত বেশি। অর্থাৎ জোরের চেয়ে আস্তে আমীন বলে বেশি। তাই আগে প্রথমে ১১ রাকাতের বিষয়টি পরিস্কার হওয়া দরকার। তারপর ছয় রাকাতের বিষয়।
৩- কোন কোন মুসল্লি এমন সময় শরীক হয় যে, ইমাম সাহেব ফাতিহার অর্ধেক পড়ে ফেলেছে। এমতাবস্থায় মুক্তাদী ফাতিহা শেষ করার পূর্বেই ইমামের ফাতিহা শেষ হয়ে যায়। তাই সে সময়ও তার জোরে সবার সাথে আমীন বলতে হয়। তাহলে কী দাঁড়াল? মুক্তাদী সূরা ফাতিহা শেষ না করেই আমীন বলে দিল।
এভাবে সূরা ফাতিহা শেষ করার আগেই আমীন বলা কোন আয়াত বা হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত?
৪- গায়রে মুকাল্লিদদের ইমামরাও ১১ সিররী রাকাতে সর্বদা আস্তে আমীন বলে। একাজটির প্রমাণ সর্বপ্রথম সাব্যস্ত হওয়া উচিত। তারপর যে ৬ রাকাতে জোরে জোরে আমীন বলা হয়, সেটার প্রমাণ সর্বদার শর্তের সাথে ইবারত দ্বিতীয় দফা দেখাতে হবে।
আমি লিখে দিলাম- এ মাসআলাটিও গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক সর্ব প্রথম কুরআনে কারীমের দ্বারা প্রমাণিত করবে। যদি না করতে পারে, তাহলে লিখে দিবে যে, “কুরআনে কারীম এ মাসআলায় তাদের উপর হাত রাখতে তৈরী নয়”।
তারপর পূর্ণ মাসআলাটি হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাবে। হাদীসও এমন কিতাব থেকে দেখাতে হবে, যার সংকলক না মুজতাহিদ না মুকাল্লিদ। বরং কোন গায়রে মুকাল্লিদ কিতাবটি সংকলন করেছেন। সেই সাথে হাদীসটিকে দলিল দ্বারা সহীহ সাব্যস্ত করতে হবে। আর একথা কিছুতেই ভুলবেন না যে, আপনাদের নিকট দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। তাই যদি গায়রে মুকল্লিদ বিতার্কিক সাহেব কোথাও কুরআন ও হাদীস ছাড়া কোন উম্মতী বা স্বীয় সিদ্ধান্ত জানায়, তাহলে তাকে সে মুনাজারা থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে। কারণ সে তখন আর আহলে হাদীস থাকবে না। আহলে রায় হয়ে যাবে।
তালেব জায়েদী নিজেদের এ কর্মকান্ডের উপরও দস্তখত করতে অস্বিকৃতি জানিয়ে দিল। তখন পরিচিত-অপরিচিত সবাই এক কথাই বারবার পুনঃরাবৃত্তি করতে ছিল যে, যে দল নিজেদের দস্তখতই করতে পারে না, তারা সেটা দলিল দিয়ে কিভাবে প্রমাণ করবে? তাদের এ দস্তখত না করাটাই দিবালোকের ন্যয় সুষ্পষ্ট প্রমাণ যে, ওরা নিজেদের পূর্ণ আমলকে কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাতে পারবে না।
মাসআলায়ে রফয়ে ইয়াদাইন
এটা ছিল মুনাজারার জন্য নির্ধারিত তৃতীয় মাসআলা।
এ মাসআলায় ওদের আমল হল- চার রাকাতওয়ালী নামাযে ১৮ স্থানে কখনো রফয়ে ইয়াদাইন করে না। আর ১০ স্থানে সর্বদা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। আর যারা এভাবে নামায পড়ে না, তাদের নামায বাতিল বলে প্রচার করে।
এমনকি তালেব জায়েদ তার রফয়ে ইয়াদাইন পুস্তিকায় এটাকে রুকন বলেছেন। [দ্রষ্টব্য-৯০]।
তাই তালেব জায়েজীকে লেখা হল যে, প্রথমে আপনি আপনার পূর্ণ আমল কুরআন কারীম দ্বারা প্রমাণ করে দেখান। যদি সক্ষম না হন। তাহলে লিখে দিন যে, আপনাদের এ মাসআলা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়।
এছাড়া তালেব জায়েদী তার রফয়ে ইয়াদাইন পুস্তিকায় নিজেদের রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে দাবি করেছে যে, ৩০জন সাহাবী থেকে তা প্রমাণিত। যাদের মাঝে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীরাও শামিল।
এ কারণে প্রথমে তালেব জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের হাদীস শুনাবেন। যাতে রাসূল সাঃ থেকে ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করতে নিষেধাজ্ঞা, ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করার নির্দেশ, সর্বদার শত, এবং যে এ পদ্ধতিতে নামায পড়ে না, তাদের নামায হয় না মর্মে উল্লেখ থাকতে হবে।
তারপর বাকি ২০ জন সাহাবী থেকে এভাবেই হাদীস দেখাতে হবে।
সেই সাথে এসব হাদীস এমন কিতাব থেকে দেখাতে হবে, যে কিতাবের সংকলক না মুজতাহিদ, না মুকাল্লিদ, বরং কোন গায়রে মুকাল্লিদের সংকলনকৃত হাদীসের কিতাব থেকে দেখাতে হবে। আর প্রতিটি হাদীস সহীহ হওয়া দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। এটা স্মরণ রাখার সাথে যে, আপনাদের কাছে দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। তাই যে সময়ই আপনারা কুরআন হাদীস রেখে কোন উম্মতীর রায়কে উপস্থাপন করবেন, তখনই আপনাদের মুনাজারা থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে। কেননা, তখন আর আপনারা আহলে হাদীস থাকবেন না।
তালেব জায়েদী এর উপরও দস্তখত করতে অস্বিকৃতি জানায়। তখন তার পার্টির লোকেরাও সন্দিহান হয়ে যায় যে, যে বিতার্কিক স্বীয় কৃত আমল ও মূলনীতির উপর দস্তখত করতে পারে না, এ লোক নিঃসন্দেহে স্বীয় আমল কখনোই কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণ করে দেখাতে পারবে না। এরা মিথ্যুক আহলে হাদীস হওয়ার মাঝে কোন সন্দেহ নেই।
একথা স্মর্তব্য যে, যত স্থানে গায়রে মুকাল্লিদরা রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে তা নেতিবাচক, ইতিবাচক এবং সনদের দিক থেকে তা শাজ তথা বিরল। সেই সাথে আমলের দিক থেকেও বিরল। এটা না সাহাবী থেকে প্রমাণিত। না তাবেয়ী থেকে প্রমাণিত। না তাবে তাবেয়ী থেকে। না মুজতাহিদীন থেকে।
এদের মাঝে এ ভুলে নিমজ্জিত যে, গায়রে মুকাল্লিদধারী রফয়ে ইয়াদাইন আশারায়ে মুবাশশরা এবং খুলাফায়ে রাশেদীনরা করেছেন। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা।
আবার কখনো মানুষকে ধোঁকা দেয় যে, এটা নাকি সনদ ও আমলের দিক থেকে মুতাওয়াতির। বরং এটা সনদ ও আমল উভয় দিক থেকে বিরল বিষয়।
মোটকথা- লাড়কানা ও তার আশেপাশের সকল মানুষের একথা দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, যে ফেরক্বা নিজের পূর্ণ আমল লিখেও দিতে পারে না, আর একারণেই লিখতে পারে না যে, যেহেতু তার কাছে এর কোন দলিল নেই।
এখনো যদি কোন গায়রে মুকাল্লিদের যদি বুকের পাটা থাকে, তাহলে নিজেদের পূর্ণ নামায ধারাবাহিক এবং উপরোল্লিখ শর্তসহ কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাক।
ইনশাআল্লাহ কিয়ামতের প্রভাত পর্যন্ত তারা এটা করে দেখাতে পারবে না।
না উঠবে খঞ্জর না উঠবে তলোয়ার।
এ হাতের পরীক্ষা নিয়েছি অনেকবার।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় জনৈক কথিত আহলে হাদীস


কয়েক মাস আগে এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হল। সে তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলে-“আমি আহলে হাদীস! আর শুনেছি আপনি নাকি আহলে হাদীসদের খুব বিরোধী?”
আমি তাকে বললাম-“আমিতো বর্তমান সময়ের আহলে কুরআনেরও শক্ত বিরোধী”।
- ঠিক আছে। আহলে কুরআনের আমি নিজেওতো খুব বিরোধী। আচ্ছা, হাদীস কোন খারাপ বিষয় নাকি যে, আপনি এর বিরোধীতা করেন?
- কুরআন কি কোন খারাপ বিষয় নাকি যে, আপনি এর বিরোধীতা করেন।
- আহলে হাদীসতো সে দিন থেকেই, যেদিন থেকে হাদীস এসেছে।
- আহলে কুরআনও একথাই বলে যে, যেদিন থেকে কুরআন, সেদিন থেকেই আহলে কুরআন। তারা এটাও বলে যে, কুরআন প্রাচীন তথা কাদীম তাই আহলে কুরআন ও কাদীম আহলে হাদীসের তুলনায়।
- আরে ওরাতো ইংরেজদের আসার পর সৃষ্টি হয়েছে।
- “একথার দলিল কি”? তড়িৎ আমি তাকে বললাম।
- “আরে এটাতে দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতই স্পষ্ট যে, ইংরেজরা আসার আগে আহলে কুরআনের না আছে কোন তরজমায়ে কুরআন, না কুরআনের কোন টিকা টিপ্পনী, না তাফসীর, না সারা পৃথিবীতে কোন আহলে কুরআন মসজিদ ছিল”। খুবই সাবলীল ভঙ্গিমায় বলল লোকটি।
আমি বললাম- এ দলিল দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়ে যায় যে, বর্তমান বিদ্যমান ফিরক্বায়ে আহলে হাদীসও ইংরেজ সৃষ্ট। কেননা, ইংরেজদের আমলের পূর্বে না আহলে হাদীসের কোন কুরআনের অনুবাদ আছে, না হাদীসের অনুবাদ, না কোন তাফসীর, না টিকা টিপ্পনী, না সারা পৃথিবীতে ছিল কোন আহলে হাদীস মসজিদ।
পক্ষান্তরে ইংরেজদের আমলের পূর্বেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে লিখেন কুরআনের ফার্সি অনুবাদ শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ, শাহ আব্দুল কাদীর মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ লিখেন কুরানের উর্দু অনুবাদ। শাহ রফীউদ্দীন মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ ও লিখেন উর্দু অনুবাদ। এসব অনুবাদ ইংরেজদের আসার আগে থেকেই সর্বসাধরণের কাছে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ।
মেশকাতের উর্দু অনুবাদ মাজাহেরে হক, ফার্সী অনুবাদ ইশাআতুল লামআত, আরবী ব্যাখ্যগ্রন্থ আল লামআতুত তানক্বীহ বিদ্যমান আছে। আজো ইংরেজদের আগমণের পূর্বের কুরআনের অনুবাদ, হাদীসের অনুবাদ দেখাতে পারবো।
তাছাড়া লাহোরের শাহি মসজিদ, চিনুটের শাহি মসজিদ, দ্বীপালপুরের শাহি মসজিদ, দিল্লির শাহি মসজিদ, আগ্রার শাহি মসজিদ, ঠাঠার শাহি মসজিদ সুনিশ্চিতভাবে ইংরেজদের আগমনের পূর্বের মসজিদ।
আর স্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য হল- এ সকল মসজিদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হানাফীদের। নামধারী আহলে হাদীসদের কোন মসজিদ, কোন মাদরাসা, কোন কবরস্থান ও বিদ্যমান ছিল না ইংরেজদের আগমনের আগে।
সে বলতে লাগল-“সিহাহ সিত্তা আমাদের কিতাব। কারণ এসব হাদীসের কিতাব। আর আমরা আহলে হাদীস। তাই এসব আমাদের কিতাব।
আমি বললাম- আপনারা কুরআনকে কেন মানেন না?
-আমরা মানিতো।
-তাহলে আপনার দলিল অনুযায়ীতো আহলে কুরআনদের হল কুরআনে কারীম। আপনাদের নয়।
-আরে ওরাতো ধোঁকা দেয়। শুধুমাত্র আহলে কুরআন নাম রেখে কিভাবে কুরআনের উপর ছিনতাইকারীর মত দখল নেয়া যায়?
-তাহলে আপনারা কেন আহলে হাদীস নাম রেখে হাদীসের উপর ছিনতাইকারীর মত দখল নিতে চান?
-সকল মুহাদ্দিসীনরা শুধু কুরআন ও হাদীসকে মানতেন, কিয়াসকে তারা শয়তানের কাজ ও তাক্বলীদকে শিরক মনে করতেন।
-আপনার কথাটি সম্পূর্ণই মিথ্যাচার। আপনার এ বক্তব্যটির রেফারেন্স দিন। প্রথমে একটি কথা বুঝে নিন। সেটা হল-তাক্বলীদের সম্পর্ক ইজতিহাদী মাসায়েলের সাথে। ইজতিহাদী মাসায়েলে যে ব্যক্তি নিজেই ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখেন, তাকে মুজতাহিদ, আর যিনি ইজতিহাদ করতে জানে না, আর ইজতিহাদী মাসায়েলের মাঝে যে মাসআলা মুজতাহিদ কুরআন ও হাদীসের আলোকে উদ্ভাবন করেছেন তার উপর আমল করে তাকে বলা হয় মুকাল্লিদ। আর যে ব্যক্তি ইজতিহাদের যোগ্যতাও রাখে না, আবার মুজতাহিদের তাক্বলীদও করে না, তাকে বলা হয় গায়রে মুকাল্লিদ।
আমরা এ ঐতিহাসিক সত্যকে মানি যে, হাদীসের কিতাবের সংকলকগণ অনেকে ছিলেন মুজতাহিদ, যা আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী শয়তান করে। আর অনেকে ছিলেন মুকাল্লিদ, যারা আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মুশরিক ছিল। নাউজুবিল্লাহ।
হযারাত মুহাদ্দিসীনে কেরামের ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ যেসব কিতাব লিখেছেন সেসবের নামই এরকম টাইপের যে,-
# তাবাক্বাতে হানাফিয়্যাহ, # তাবাক্বাতে মালেকিয়্যাহ, # তাবাক্বাতে শাফিয়িয়্যাহ, # তাবাক্বাতে হানাবেলা।
পক্ষান্তরে তাবাক্বাতে গায়রে মুকাল্লিদীন নামে কোন কিতাব কোন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস বা ঐতিহাসিক লিখেছেন বলে পাওয়া যায় না। আপনি কোন কিতাব থেকে সিহাহ সিত্তার সংকলকের ব্যাপারে একথা প্রমাণিত করে দেখাতে পারবেন না যে, তাদের মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতাও ছিল না, আবার তারা কারো তাক্বলীদও করেন নি, বরং তারা ছিলেন গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন?
হযরত আক্বদাস মাওলানা খায়র মুহাম্মদ সাহেব জালান্ধরী রহঃ খাইরুল উসুল গ্রন্থে লিখেছেন- ইমাম বুখারী মুজতাহিদ ছিলেন। {নাফেউল কাবীর, কাশফুল মাহবুব}। অথবা তিনি শাফেয়ী ছিলেন। [দ্রষ্টব্য-তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১}
ইমাম মুসলিম রহঃ শাফেয়ী ছিলেন। {আল ইয়াফেউল জিনা-৪৯}
ইমাম আবু দাউদ রহঃ হাম্বলী ছিলেন। {আল হিত্তাহ-১২৫} অথবা শাফেয়ী ছিলেন। {তাবাক্বাতে শাফেয়িয়্যাহ-৬/৪৮}
ইমাম নাসায়ী রহঃ শাফেয়ী ছিলেন। [আল হিত্তাহ-১২৭}
ইমাম তিরমিযী ও ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ শাফেয়ী ছিলেন। {আরফুশ শাজী, খাইরুল উসুল-৯}
লোকটি বলল-“আমরা এসব কিতাব মানি না, আমরা শুধু কুরআন ও হাদীস মানি।
আমি বললাম- “আচ্ছা! মজার ব্যাপারতো! তাহলে বিসমিল্লাহ বলে আপনি কুরআন ও হাদীসে দেখিয়ে দিন যে, সিহাহ সিত্তার সংকলকগণ না ইজতিহাদের যোগ্যতা রাখতেন, না তাক্বলীদ করতেন, বরং ইজতিহাদকে ইবলীসের কাজ, আর তাক্বলীদকে শিরক বলেন, এ কারনে তারা গায়রে মুকাল্লিদ”।
আমি আরো বললাম-“কুরআন ও হাদীস দ্বারা এটাওতো প্রমাণিত হয় না যে, তারা দুনিয়াতে জন্ম নিয়েছিলেন কি না? তারা মুসলমান ছিলেন নাকি না?”
সে বলল- “ঐতিহাসিকগণ ও মুহাদ্দিসীনরা তাদের মুকাল্লিদদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন দলিল ছাড়াই। তাদের স্বীকারোক্তি দেখান। যাতে তারা বলেছেন যে, তারা মুকাল্লিদ।
আমি বললাম- “কোন বিষয়ের সত্যতা যেমন স্বীকারোক্তির দ্বারা প্রমানিত হয়, তেমনি সাক্ষ্যর দ্বারাও প্রমাণিত হয়। এটা মুহাদ্দিসীন ও ঐতিহাসিকদের ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন সাক্ষ্যর দ্বারা প্রমাণিত বিষয়। যখন তাদের উল্লেখ সে বিষয়ে অভিজ্ঞরা তাবাক্বাতে মুকাল্লিদীনদের মাঝে করেছেন। আর অন্য মুহাদ্দিসীন ও ঐতিহাসিকগণ এটাকে অস্বিকার করেন নি, তাহলে এটি সর্বসম্মত সাক্ষ্য হয়ে গেছে।
কুরআন ও হাদীসে কি এ মূলনীতি নেই যে, সাক্ষ্যর দ্বারাও প্রমাণ সাব্যস্ত হয়?
লোকটি বলল- সাক্ষ্যর দ্বারাতো প্রমাণ হয়, কিন্তু আমার মন মানছে না। আপনি তাদের স্বীকারোক্তি দেখান।
আমি বললাম- “আপনার মন কি একথাটি মানছে যে, সিহাহ সিত্তার সংকলক মুসলমান ছিলেন?
-অবশ্যই।
-তাদের স্বীকারোক্তি বা সাক্ষ্য পাওয়া গেছে নাকি যে, তারা মুসলমান?
-স্বীকারোক্তিতো পাওয়া যায়নি, কিন্তু সুনিশ্চিত নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সাক্ষ্যতো আছে।
-আপনার মন একথা মানছে যে, সিহাহ সিত্তার সংকলক আলেম ছিলেন। তারা মুহাদ্দিস ছিলেন। নামাযী ছিলেন। হাজী ছিলেন। রোযাদার ছিলেন?
-অবশ্যই। অবশ্যই।
-তাদের কোন স্বীকারোক্তি আছে যে, তারা আলেম? তারা নামাযী? তারা হাজী? তারা রোযাদার? নাকি সাক্ষ্য দ্বারা একথা জানতে পেরেছেন?
আপনার মন বড়ই আশ্চর্য ধরণের! তাদের বিদ্যমানতা তাদের আলেম হওয়া, হাজী হওয়া, নামাযী হওয়া, রোযাদার হওয়া, মুহাদ্দিস হওয়া সবই ঐতিহাসিক সাক্ষ্য দ্বারাতো মেনে নিচ্ছে মন। কিন্তু তাদের মুকাল্লিদ হওয়ার উপর ঐতিহাসিক সাক্ষ্য মন মেনে নিচ্ছেনা। বড়ই আশ্চর্য ব্যাপার!
যদি ঐতিহাসিক সাক্ষ্যকে অস্বিকার করার ইচ্ছে হয়, তাহলে তাদের ঈমান, তাদের ইসলামও অস্বিকার করুন। কেননা, এসব ঐতিহাসিক সাক্ষ্য মন মেনে নেওয়ার যোগ্য নয়।
কিন্তু যদি তাদের মুমীন, মুসলমান, হাজী, রোযাদার, নামাযী, মুহাদ্দিস হওয়া ঐতিহাসিক সাক্ষ্যর ভিত্তিতে মেনেই নেন, তাহলে মুকাল্লিদ হওয়াও মেনে নিন।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“আপনি সাহাবীদের মানেন?”
-হ্যাঁ।
-সেই সাহাবীকেই কেবল মানেন, যিনি নিজে স্বীকার করে বলেছেন যে, তিনি সাহাবী? নাকি যার সাহাবী হওয়া স্বীয় স্বীকারোক্তি দ্বারা নয়,বরং ঐতিহাসিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত তাকেও সাহাবী মানেন?
-সবাইকেই মানি। আপনি কেবল সেই রাবীকেই দুর্বল বলেন, যে রাবী স্বীকার করে বলেছে যে, সে দুর্বল, সে মিথ্যুক, সে দাজ্জাল, সে সত্যবাদী নয়, সে অপরিচিত ইত্যাদি?
-ঐতিহাসিক সাক্ষ্য ছাড়া এখানে কোন পথই নেই।
-যে মূলনীতিকে আপনি সর্বস্থানে মানেন, সেই মূলনীতির ভিত্তিতেইতো সিহাহ সিত্তার সংকলক মুকাল্লিদ ও মুজতাহিদ হওয়া প্রমাণিত। তাদের গায়রে মুকাল্লিদ হওয়ার উপর না আপনি তাদের কোন স্বীকারোক্তি পেশ করতে পারবেন, না কোথাও তারা একথা বলেছেন যে, তারা মুকাল্লিদ ও নন, আবার মুজতাহিদও নন, বরং তারা গায়রে মুকাল্লিদ। না আপনি কোন ঐতিহাসিক সাক্ষ্য পেশ করতে পারবেন তাদের গায়রে মুকাল্লিদ হওয়ার উপর।
-আমি যদি ইংরেজদের আগমণের পূর্বের কিতাব দেখাতে পারি যাতে আহলে হাদীস নাম আছে, তাহলেতো আপনি মেনে নিবেন যে, আহলে হাদীস দল শুরু থেকেই চলে আসছে?
-আমি যদি আপনাকে হাদীসে আহলে কুরআন শব্দ দেখিয়ে দেই যাতে রাসূল সাঃ বলেছেন “হে আহলে কুরআন! বিতর পড়!” {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১১৬৯} এবং রাসূল সাঃ আরো ইরশাদ করেছেন যে, “আহলে কুরআনই আহলূল্লাহ!” {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১৫}, তাহলে কি আপনি মেনে নিবেন যে, এ হাদীস অস্বিকারকারী যারা নিজেদের আহলে কুরআন বলে দাবী করে, তারা রাসূল সাঃ এর জমানা থেকেই ছিল?
-না, না,কিছুতেই না।
-আমি যদি কুরআন ও হাদীসে মুসলিমীন ও জামাআতে মুসলিমীন শব্দ দেখিয়ে দেই, তাহলে কি আপনি মেনে নিবেন যে, মাসঈদী ফিরক্বা যারা আহলে হাদীসদেরও অমুসলিম বলে, তারা রাসূল সাঃ এর জমানা থেকেই চলে আসছে?
-না, না, কিছুতেই না।
-যদি কুরআনে কারীমে রবূহ শব্দ দেখাতি পারি, তাহলে কি মেনে নিবেন যে, কাদিয়ানীদের রবূহ হযরত ঈসা আঃ এর সময়কালে বানানো?
-অবশ্যই না।
-যদি কুরআন ও হাদীসে আহমাদ শব্দ দেখাতে পারি, তাহলে কি আপনি মেনে নিবেন যে, কাদিয়ানী যারা নিজেদের আহমাদী দাবি করে, তারা রাসূল সাঃ এর জমানা থেকেই বিদ্যমান?
-অবশ্যই না। তবে আপনার জানা উচিত যে, হাদীসের শব্দ কুরআনে ২৮ স্থানে এসেছে।
-তো কী হয়েছে? কুরআন শব্দ ৬৮ স্থানে এসেছে। আর কিতাব শব্দ ২৪২ স্থানে, আহলে কিতাব শব্দ ২৮ স্থানে, আহলুল ইঞ্জিল ১ স্থানে, আহলে মদীনা এক স্থানে, আহলে মাদায়েন ৩ স্থানে এসেছে। অথচ আহলে হাদীস এক স্থানেও আসেনি।
-কিতাবে যে আহলে হাদীসের কথা আছে, এর দ্বারা কারা উদ্দেশ্য?
-হাদীস ও কিতাবের মাঝে যে আহলে কুরআন শব্দ আছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?
-হুফফাজুল কুরআন তথা কুরআনের হাফেজরা উদ্দেশ্য। মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারীরা নয়।
-কুরআন ও হাদীসেতো “আহলে হাদীস” শব্দ আসেনি। আমভাবে কিতাবের মাঝে যে আহলে হাদীস বা আসহাবুল হাদীস শব্দ আসে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল- মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও হুফফাজে হাদীসগণ। এর দ্বারা মুনকিরীনে ফিক্বহ তথা ফিক্বহ অস্বিকারকারী গায়রে মুকাল্লিদ উদ্দেশ্য নয়।
-খতীব বাগদাদী পূর্ণ একটি কিতাবই লিখেছেন। যার নাম হল-“শরফু আহলিল হাদীস”।
-এটাতো হাদীস ও মুহাদ্দিসীনদের ফযীলতের উপর লেখা। যেমন প্রায় প্রতিটি হাদীসের কিতাবেই কুরআনের ফযীলতের অধ্যায়, হুফফাজুল কুরআনের ফযীলতের উপর অধ্যায় থাকে। সে সকল হাদীসের সাথে আহলে কুরআন মুনকিরীনে হাদীসের কী সম্পর্ক? তেমনি মুহাদ্দিসীনদের ফযীলততো যথার্থ। কিন্তু এর সাথে গায়রে মুকাল্লিদদের কী সম্পর্ক?
-আরে আমরাতো হাদীস মানি। এ কারণে আহলে হাদীস।
-হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলীরাও হাদীস মানে। আর হাদীসের সব কিতাব তারাই একত্রিত করেছেন। কোন গায়রে মুকাল্লিদ হাদীসের কোন মূলনীতি পর্যন্ত সনদ সহকারে আজ পর্যন্ত বর্ণনা করেনি।
বরং সারা দুনিয়াতে একটি কিতাবও এমন নেই যে, যে কিতাবের সনদের বর্ণনাকারীদের গায়রে মুকাল্লিদ হওয়া তাদের স্বীকারোক্তি অথবা ঐতিহাসিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত।
তারপরও আশ্চর্য ব্যাপার হল! হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীদের আহলে হাদীস মানা হয় না। অথচ যাদের হাদীস সংকলনে নেই কোন ভূমিকা, নেই হাদীস যাচাই বাছাইয়ে, নেই হাদীস প্রচার-প্রসারেও তাদের বলা হচ্ছে “আহলে হাদীস”!?
-আমরা ফিক্বহ, রায় ও কিয়াসকে মান্যকারীদের শয়তান মনে করি, তাই আমরা আহলে হাদীস।
-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, “একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর এক হাজার আবেদের চেয়ে বেশি কষ্টকর। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২২২}, এ হাদীস দ্বারাতো একথা বুঝা যায় যে, ফক্বীহ শয়তান হয় না, বরং ফক্বীহ এর বিরোধীরা হয় শয়তান। আপনিও একটি হাদীস দেখান, যাতে বলা হয়েছে যে, ফিক্বহ অস্বিকারকারীর নাম আহলে হাদীস।
-হানাফী, শাফেয়ীরা কুরআন হাদীসের পর ইজমা ও কিয়াসকেও মানে, তাই তারা কখনোই আহলে হাদীস নয়, বরং আহলে রায় বা যুক্তিপূজারী। আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ এর কথা মানি, কোন উম্মতীর কথা মানাকে শিরক মনে করি, তাই আমরা আহলে হাদীস।
-আপনি সত্য আহলে হাদীস না ধোঁকাবাজ?
-মানে কি?
-আপনি যদি প্রতিটি প্রশ্নের জবাব শুধু কুরআন ও হাদীস থেকে দেন, তাহলে আপনি সত্য আহলে হাদীস। আর যদি আপনিও কোন উম্মতীর কথা উদ্ধৃত করেন, তাহলে আপনি ধোঁকাবাজ আহলে হাদীস।
-আমি সত্য আহলে হাদীস। সকল প্রশ্নের জবাব শুধু কুরআন ও হাদীস থেকেই দেব।
-হাদীসের সংজ্ঞাটা একটু বর্ণনা করুন।
-রাসূল সাঃ এর কওল তথা বক্তব্য, ফেল তথা কর্ম ও তাক্বরীর তথা নীরব সম্মতিকে হাদীস বলে।
-এ সংজ্ঞাটি কোন কুরআনের আয়াতে আছে?
-اذا اسر النبى الى بعض ازواجه حديثا
-রাসূল সাঃ কি কওল, ফেল ও তাক্বরীর তিনটি লুকিয়েছিলেন?
-না।
-এ সংজ্ঞাটি কোন হাদীসে আছে?
-না, নেই। এ সংজ্ঞাতো কোন উম্মতী বানিয়েছেন।
-এ কারণেইতো আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, আপনি মিথ্যা আহলে হাদীস। নাম হাদীসের নেন। আর বক্তব্য উম্মতীর মানেন। আবার উম্মতীর কথাও পূর্ণ মানেন না। আসলে আপনারা না নবীকে মানেন, না কোন উম্মতীকে। বরং নিজের নফসকে মানেন তথা মনের পূজা করে থাকেন।
-হাদীসের সংজ্ঞায় আমি কি ভুল করেছি?
-মুহাদ্দিসুল আসর, মাওলানা খায়ের মুহাম্মদ সাহেব জালন্ধরী রহঃ বলেছেন-
হযরত রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের কওল, ফেল ও তাক্বরীরকে বলা হয় হাদীস। আবার কখনো কখনো এটাকে “খবর” ও বলা হয়। {খাইরুল উসূল-৩}
লোকটি বলল-আমি এ সংজ্ঞা এই প্রথম শুনলাম। এ সংজ্ঞা অনুযায়ীতো সবাই আহলে হাদীস হয়ে যাবে। এ সংজ্ঞা কি হযরতের আগে আর কেউ করেছেন নাকি?
-মিশকাতের ভূমিকায় নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব ও আল হিত্তাহ ফি জিকরীস সিহাহ সিত্তাহ এর ৫৬ নং পৃষ্ঠায় জমহুর ওলামা থেকে এটাই নকল করেছেন। কিন্তু এ সকল সর্বশেষে উম্মতীইতো হবেন। তাদের বক্তব্য না কুরআন, না হাদীস। তো?
-কোন আহলে হাদীস কি এ সংজ্ঞা লিখেছেন?
-আপনাদের নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবের আহলে হাদীস হওয়ার মাঝে কোন সন্দেহ আছে নাকি? শুধু তাই নয়, দারুল হাদীস মদীনা মনোয়ারা উস্তাদ শায়েখ সাইফুর রহমান স্বীয় কিতাব “আস সাহলুল মুসাহহাল ফি মুসতালাহিল হাদীস” নামক গ্রন্থেও ১০ নং পৃষ্ঠায় এ সংজ্ঞাই করেছেন। আর মুহাদ্দিসীনে কেরামও হাদীসের এ তিন প্রকার করেছেন। তথা ১-মারফু, ২- মাওকুফ। ৩- মাকতু’।
কুরআন ও হাদীস
তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“আপনাদের যে দাবি যে, আপনারা কেবল কুরআন ও হাদীস মানেন” এ দাবি পালন করতে গিয়ে উভয়ের পদ্ধতি কি একই না ভিন্ন ভিন্ন?
সে বলল-“মানে কি?”
আমি বললাম-“আপনারা কুরআনের কোন আয়াতের সনদ অনুসন্ধান করেন না, অথচ হাদীসের ক্ষেত্রে সনদ তালাশ করেন, এ পার্থক্য কি কুরআনে কারীমে বর্ণিত? নাকি হাদীসে আছে?
লোকটি ঘাবড়ে গিয়ে বলতে লাগল-“এ পার্থক্য না কুরআনে আছে, না হাদীসে আছে। এটাতো উসুলবীদ ওলামায়ে কেরাম বলেছেন। আর তারা সবাই উম্মতী।
আমি বললাম-তাহলে আপনাদের আহলে হাদীস হওয়ার দাবিটি আবারো মিথ্যা প্রমাণিত হল।
হাদীসের প্রকারভেদ
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“যেভাবে আপনারা কুরআনে পাকের সকল আয়াতকে সহীহ ও মুতাওয়াতির মানেন, তেমনি সকল হাদীসকেও কি এমন পর্যায়ের সহীহ ও মুতাওয়াতির মানেন? নাকি কিছুকে সহীহ আর কিছুকে দুর্বল মানেন?”
সে বলল-“হাদীসেরতো অনেক প্রকার আছে। যেমন মুতাওয়াতির, মাশহুর, আজীজ, গরীব, মারফু, মওকুফ, মাকতু, সহীহ লি জাতিহী, সহীহ লি গায়রিহী, হাসান লি জাতিহী, হাসান লি গায়রিহী, জয়ীফ, মওজু, মাতরুক, শাজ, মাহফুজ, মুনকার, মারুফ, মুআল্লাল, মুযতারাব, মাকলুব, মুসাহহাফ, মুদরাজ, মুত্তাসিল, মুসনাদ, মুনকাতি, মুআল্লাক, মুফাসসাল, মুরসাল, মুদাল্লাস, মুআন আন, মুসালসাল ইত্যাদি।
- এ সকল প্রকার কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন?
- না, বলেন নি।
- হাদীসে রাসূল সাঃ বলেছেন?
- না।
- আপনারা কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে জয়ীফ, কোন হাদীসকে মওজু ইত্যাদি বলে থাকেন। এসব বলতে আপনাদের আল্লাহ তাআলা বলেছেন? না রাসূল সাঃ?
- এসব আল্লাহ ও রাসূল সাঃ বলেন নি, এসবতো উম্মতীদের গবেষণা।
- তাহলেতো আপনারা আহলে হাদীস না। বরং আপনাদের বক্তব্য অনুপাতেই আপনার মুশরিক।
এবার লোকটি বহুত পেরেশান হয়ে যায়। বলতে লাগল- “আপনি আমাকে দু’ মাসের সময় দিন। গবেষণা ও তথ্য-তালাশ করে আবার আসবো”।
আমি বললাম-“আপনার ইচ্ছে”।

কথিত আহলে হাদীসটির পুনরাগমন


আনুমানিক ৪ মাস পর লোকটি আবার আসল। এসে বলতে লাগল-“আপনি বলেছেন কোন হাদীসে আহলে হাদীস শব্দ নেই। আমি সে হাদীস খুঁজে নিয়ে এসেছি”।
আমি বললাম-“আপনার মনে হয় আমার কথা মনে নেই। আমি আপনার কাছে এমন হাদীস চেয়েছিলাম, যাতে রাসূল সাঃ ফিক্বহ অস্বিকারকারীকে আহলে হাদীস বলেছেন”।
সে বলল-“ এটা হাকীম মুহাম্মদ সাদেক শিয়ালকুটির কিতাব ‘সাবিলুর রাসূল’ কিতাবে আছে। হাদীসটি হল-
عن انس رض قال قال رسول الله ﷺ اذا كان يوم القيامة جاء اصحاب الحديث ما بين يدى الله ومعهم المحابر، فيقول الله انتم اصحاب الحديث كنتم تصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ادخلوا الجنة-
অর্থাৎ হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-কিয়ামতের দিন মুহাদ্দিসীনরা আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবেন স্বীয় দোয়াতসহ। আল্লাহ তাআলা বলবেন-‘তোমরা মুহাদ্দিস ছিলে। আর রাসূল সাঃ এর উপর দরূদ পড়তে। যাও! জান্নাতে প্রবেশ কর”’। (মুহাদ্দিসে খতীব বাগদাদী সংকলিত জাওয়াহেরুল উসুল, তারীখে বাগদাদ”।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- “এ হাদীস কি সহীহ? এর সহীহ হওয়া আল্লাহ বা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত করে দাও, তাহলে আমি আপনাকে আহলে হাদীস মেনে নিব। আর যদি প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে কোন উম্মতীর দ্বারা প্রমাণিত করুন, তারপর ঘোষণা দিয়ে দেন যে, আপনি মিথ্যা আহলে হাদীস ছিলেন, আর এখন ওমুক ব্যক্তির মুকাল্লিদ হয়ে গেছেন”।
- খতীব বাগদাদী এটাকে সহীহ বলেছেন। আর আমিও এ মুহাদ্দিসের তাক্বলীদ করে এটাকে সহীহ বলি।
- রেফারেন্স দিন যে, খতীব বাগদাদী এটাকে সহীহ বলেছেন।
- রেফারেন্সতো আমার জানা নেই। আমিতো শুধু হাকীম মুহাম্মদ সাদেক সাহেবের উপর নির্ভর করেছি।
- খতীব বাগদাদীতো এ হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন যে, هذا حديث موضوع অর্থাৎ এ হাদীস বানোয়াট ও মনগড়া। {তারীখে বাগদাদ-৩/১৪০}। একথা জানেনতো যে, আল্লাহর নবীর উপর মিথ্যারোপ করা স্বীয় ঠিকানা জাহান্নামে বানানো?
লোকটি খুব ধ্যান দিয়ে রেফারেন্সটি পড়ল। চিন্তিত হয়ে গেলে সাথে সাথে।
আমি বললাম-“আল্লামা সুবকী শাফেয়ী রহঃ ও এ হাদীসের ব্যাপারে বলেছেন যে, এর বর্ণনাকারী “মুহাম্মদ বিন ইউসুফ”। যাকে খতীব বাগদাদী “কাজ্জাব” তথা মারাত্মক মিথ্যুক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর আমাদের উস্তাদ ইমাম জাহাবী রহঃ বলেছেন যে, লোকটি জাল হাদীস বানাতো। লোকটি তাবরানী রহঃ এর দিকে একটি মিথ্যা হাদীসের নিসবত করেছিল। আমার মনে হচ্ছে এটা সেই হাদীসই”। {তাবাক্বাতে শাফিয়িয়্যাহ-১/৯৩}
আশ্চর্য ব্যাপার হল-আপনি চার মাস ধওে যে জাল হাদীস অনুসন্ধান করেছেন?! সেটা দ্বারাও একথা প্রমাণিত হয় না যে, সে মুহাদ্দিসীনরা ফিক্বহের অস্বিকারকারী ছিলেন।
সুতরাং একথা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ফিক্বহ অস্বিকারকারী আহলে হাদীস কোন জাল হাদীস দিয়েও প্রমাণিত হয় না। এটাকেই ‘দ্বীন দুনিয়া সবই গেল’ বলে। রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যা বলে দ্বীন ধ্বংস করা হল, আর দুনিয়াতে রইল অপমান”।
আমি তাকে আরো বললাম-“আফসোস! আপনারা মক্কা-মদীনার নাম নেন, অথচ কিতাব শিয়ালকোটের পেশ করছেন। যার লেখক কোন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নয়। আরে তিনিতো তার কিতাব সাবিলুর রাসূল গ্রন্থেও ২৪৬ নাম্বার পৃষ্ঠায় এক হাদীস নকল করেছেন। যাতে রয়েছে যে, ‘উত্তম আমল হল-নামায প্রথম ওয়াক্তে পড়া’।
একথার উপর বুখারীর রেফারেন্স দিল। অথচ বুখারীতে শুধু এতটুকু লেখা যে, ‘উত্তম আমল হল- নামায সময়মত পড়া’।
হাকীম সাদেক সাহেব স্বীয় মতবাদ প্রমাণ করার জন্য ‘প্রথম’ শব্দ নিজ থেকে বাড়িয়ে দিল। অথচ বুখারীতে ‘প্রথম’ শব্দটির কোন নিশানাও নেই”।
লোকটি বলল-“এটা কি করে সম্ভব?”
আমি বললাম-“আপনি বুখারী থেকে দেখিয়ে দিন”।
দ্বিতীয় হাদীস
লোকটি বলল- “আচ্ছা ঠিক আছে। সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব এ জাল হাদীস লিখেছেন। কিন্তু তিনি ৩২০ নং পৃষ্ঠায় আরেকটি হাদীস লিখেছেন। সেটা হল- রাসূল সাঃ দুআতে বললেন যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার খলীফাদের উপর রহম কর! সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন-হুজুর! আপনার খলীফাগণ কারা? তিনি বললেন-যারা আমার পর আসবে। আর আমার হাদীস বর্ণনা করবে। আর অন্যদের শিখাবে। [শরফু আসহাবুল হাদীস]”।
আমি বললাম-“আল্লামা যায়লায়ী রহঃ নসবুর রায়াহ এর ১ নং খন্ডের ৩৪৮ নাম্বার পৃষ্ঠায়, আর আল্লামা জাহাবী রহঃ মিযানুল ই’তিদালের ১ নং খন্ডের ১২৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় এ হাদীস সম্পর্কে বলেন যে, هذا باطل তথা এ হাদীস জাল।
এ হাদীসের বর্ণনাকারীর ব্যাপারে ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-কাজ্জাব তথা চূড়ান্ত মিথ্যুক। {মিযানুল ই’তিদাল-১/১২৬}
সাদেক সাহেব কি আপনাদের জন্য জাল হাদীস একত্রিত করে নাম সাবিলুর রাসূল রেখে দিলেন?”
লোকটি এবার আরো বেশি পেরেশান হয়ে যায়। আমি তাকে বললাম-“এ হাদীসেরও কোথাও একথা নেই যে, তারা ফিক্বহের অস্বিকারকারী”।
তৃতীয় হাদীস
লোকটি বলল- রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত কারা? তিনি বললেন- ما انا عليه اليوم واصحابى। {মুহাল্লাল ও নাহলের রেফারেন্সে সাবিলুর রাসূল-১৪০}
আমি বললাম- “এখানেতো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কথা। আর মুহাল্লাল ও নহলে এর কোন সনদ উল্লেখ নেই। ইবনুল যাওজী এটাকে মওজুআতে উল্লেখ করে এটাকে মনগড়া সাব্যস্ত করেছেন”।
লোকটি বলল-“সাদেক সাহেব কি সব জাল হাদীসই একত্র করে গেলেন নাকি?
সাহাবীদের বক্তব্য
লোকটি বলল- হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ স্বীয় ছাত্রদের বলেছেন যে, فانكم خلوفنا واهل الحديث بعدنا তথা ‘তোমরা আমার খলীফা। আর আমাদের পর হুফফাজ হবে’।
আমি বললাম-“এর সনদের রাবী আবু হারূন আল ঈদী সম্পর্কে লিখা আছে যে, اكذب من فرعون তথা সে ফেরাউনের চেয়েও বেশি মিথ্যুক। {মিযানুল ই’তিদাল-৩/১৭৪}। যাইহোক, এটাতে একথা কোথায় যে, তিনি ফিক্বহের অস্বিকারকারী ছিলেন? বরঞ্চ তিরমিযীতো একথা লিখা আছে যে, তিনি ফিক্বহের ছাত্র ছিলেন।
সুতরাং বুঝা গেল যে, আল্লাহ তাআলা বা রাসূল সাঃ তো দূরে থাক, কোন সাহাবী থেকেও একথা প্রমাণিত হয় না যে, ফিক্বহের অস্বিকারকারীর নাম আহলে হাদীস”।
একটি স্বপ্ন
লোকটি বলতে লাগল- জনাব হাকেম সাদেক সাহেব বলেছেন যে, হযরত আবু বকর বিন আবু দাউদ সিজিস্তানী মুহাদ্দিস রহঃ বলেছেন যে, তিনি সিজিস্তানে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ এর হাদীস সংকলন করছিলেন। সে সময় একদা স্বপ্নে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। আমি তাকে বললাম- আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি। তিনি বললেন-আমি দুনিয়াতে আহলে হাদীস ছিলাম। {সাবিলুর রাসূল-৩১৪}
আমি তাকে বললাম-“এ স্বপ্নের ব্যাপারে খোদ সাদেক সাহেবই লিখেছেন যে, ‘আমি এ স্বপ্নটিকে কেবল সহায়ক হিসেবে বর্ণনা করলাম। দলিল হিসেবে নয়’।
এবার দেখুন!্ এ স্বপ্নটি কার?
স্বপ্ন কার?
স্বপ্নটি ছিল ইমাম আবু দাউদ রহঃ এর ছেলের। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তার মুখস্ত শক্তি ছিল প্রখর। হাদীস খুবই মুখস্ত ছিল। কিন্তু এর সাথে সাথে তিনি অনেক বড় মিথ্যুকও ছিলেন। খোদ তার পিতা আবু দাউদ রহঃ এবং মুহাদ্দিস ইবরাহীম আসবায়ী রহঃ তাকে কাজ্জাব তথা চূড়ান্ত মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। {মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২৩}
আর শায়েখ কাওসারী রহঃ বলেন- هو ناصبى مجسم خبيث তথা সে নাসেবী ছিল, মুজাসসামা ফিরক্বার অনুসারী, সেই সাথে ছিল খবীশ। {তাম্বীহুল খতীব-৬৮}
স্বপ্ন মূলত কী ছিল?
এ স্বপ্নটি আল ইসাবা গ্রন্থেও ৪ নং খন্ডের ২০৪ নাম্বার পৃষ্ঠায়, আর তারীখের গ্রন্থে ৯/৪৬৭, ও তাযকিরাতুল হুফফাজের ১/৪৯ এ বর্ণিত এ স্বপ্নটির আরবী পাঠ এই-
انا اول اصحاب الحديث كان فى الدنيا এ বাক্যের অনুবাদ গায়রে মুকাল্লিদরা তাযকীরাতুল হুফফাজে এই করেছে যে, “আমিই দুনিয়াতে প্রথম ব্যক্তি, যে এত বড় ভান্ডার সংরক্ষণ করেছে”।
দেখুন! সাদেক শিয়ালকুটি সাহেবের যখন দরকার হয়, তখন “আওয়াল তথা প্রথম” শব্দ নিজ থেকে বাড়িয়ে দেন, অথচ এখানে “আওয়াল” শব্দ বিদ্যমান থাকা সত্বেও যখন নিজের মাকসাদের বিপরীত মনে হল, তখন সেটাকে উধাও করে দিলেন।
তারপরও উদ্দেশ্য হাসীল হয়নি। হাদীস সংকলনকারীদের মুহাদ্দিস বা সাহেবে হাদীস অথবা আহলে হাদীস বলা জায়েজ আছে। কিন্তু আবু হুরায়রা রাঃ কি এটা বলেছেন নাকি যে, তিনিই ফিক্বহের প্রথম অস্বিকারকারী, তাই তার নাম আহলে হাদীস?
আরে ভাই! এসব লোকেরা নিজেদের আহলে হাদীস পরিচয় দিয়ে এ কেমন খেলা শুরু করে দিল?
শেষ কথা
অবশেষে লোকটি বলতে লাগল- উম্মতীকে মানা ছাড়া কোন গত্যান্তর নেই। এজন্যই আমরা আহলে হাদীসরাও চার দলিল মানি।
আমি বললাম- আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না। আপনি আমার ছয়টি প্রশ্নের জবাব লিখিতভাবে দিন। আর এর মাঝে আপনাদের নেতৃস্থানীয় ১০ জন ব্যক্তির দস্তখতসহ ছাপিয়ে দিন। তাহলে আমি আপনার কথা বিশ্বাস করব।
১ নং প্রশ্ন
আপনি কোন দলিলের ভিত্তিতে ইজমা, কিয়াস ও ফিক্বহকে হুজ্জত তথা দলিল মানতে শুরু করেছেন? সে সকল দলিলসমূহ বিস্তারিত লিখে দিন।
২ নং প্রশ্ন
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলীগণ ধারাবাহিকভাবে এ ৪ দলিলকে মানেন। কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস। আপনারা তাদের আহলে হাদীস বলেন না, বরং আহলে রায় তথা যুক্তিপূজারী ও আহলে কিয়াস বলে থাকেন। এখন আপনারাও এ ঘোষণা দিয়ে দেন যে, আপনারাও পরিপূর্ণ আহলে রায়, এবং আহলে কিয়াস। আর এতদিন পর্যন্ত যে নিজেদের আহলে হাদীস বলতেন তা ছিল মিথ্যাচার।
৩ নং প্রশ্ন
এ ঘোষাণাও দিয়ে দেন যে, যেখানে হানাফীরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কিয়াসকে মানে, সেখানে আমরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বিপরীতে আমরা নিজেরাই কিয়াস করি। অথবা নিজেদের মসজিদের ইমামের কিয়াসকে মানি।
আজ পর্যন্ত এ মিথ্যা বলতে ছিলাম যে, “যেখানে হানাফীরা ইমাম আবু হানীফার ইজতিহাদকে মানে, সেখানে আমরা হাদীসে রাসূল মানি”
এ মুহুর্তে সে মিথ্যাচার থেকে সাচ্চা দিলে তওবা করছি।
৪ নং প্রশ্ন
আপনারা যখন কোন কিয়াস করেন, তখন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মত আপনাদের কোন উসূলে ফিক্বহ তথা তথা ফিক্বহের মূলনীতি আছে? না কাদিয়ানীদের মত মূলনীতিহীন কিয়াস করেন?
আমরা যেহেতু উসূলধারী তথা মূলনীতি নির্ভর। তাই আমাদের রয়েছে-
# উসুলুশ শাশী [৩২৫ হিজরী]। # উসুলে কারখী [৩৪০ হিজরী]। # আল ফুসূল ফিল উসূল লি আবু বকর রাজী [৩৭০ হিজরী]।
# উসুলে বাযদয়ী [৪৮২ হিজরী]। # উসূলে সারাখসী [৪৮৩ হিজরী। # হুসামী [৬৪২]। # আল মুগনী ফিল উসূল [৬৯১]। # আল মানার [৭১০ হিজরী]। # আত তানক্বীহ [৭৪৭ হিজরী]। # তাহরীরুল উসূল [৮৬১ হিজরী]। # মুসাল্লামুস সুবুত [১১১৯ হিজরী] এর মত গ্রহণযোগ্য কিতাবাদী। আপনারাও নিজেদের উসুলের কিতাবের নাম সালসহ উল্লেখ করুন।
৫ নং প্রশ্ন
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী এবং হাম্বলীগণের কিতাব সংরক্ষিত ও সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত। কাদিয়ানীদের নিজস্ব কোন কিতাব নেই। তারা ফিক্বহী মাসায়ের এদিক সেদিক থেকে চুরী করে সংগ্রহ করে। আপনাদের ফিক্বহের সনদযুক্ত কিতাব কোনটি কোনটি? যা আপনাদের মাদরাসায় সিলেবাসভূক্ত? সনসহ সেসবের তালিকা অথবা এ স্বীকারোক্তি প্রকাশ করুন যে, আপনাদের অভ্যাসও এদিক সেদিকের মাসায়েল চুরি করা।
৬ নং প্রশ্ন
আপনি আপনাদের ১০টি সর্বসম্মত মত, এবং ১০টি কিয়াসী মাসায়েল লিখে দিন। যা আহলে সুন্নাতের কিতাব থেকে চুরি করা হয়নি।
লোকটি বলতে লাগল- “আরে ভাই! আমিতো এক মুসিবত থেকে বাঁচার জন্য ৪ দলিলের নাম নিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার এ ৬ প্রশ্ন আমাকে আরেক মুসিবতে ফেলে দিল!”

কথিত আহলে হাদীসদের কতিপয় ভ্রান্ত আক্বিদার স্বরূপ


নবুয়তী সময়কালের সাথে দূরত্ব যত বাড়ছে মানুষের মাঝে মুক্ত চিন্তা আর দ্বীন বিমুখিতাও বাড়ছে দেদার। নিজেই ইজতিহাদ করার খাহেশে খাইরুল কুরুন তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মুজতাহিদগণের সাথে বিদ্রোহ ও শত্র“তাকে দ্বীনের বড় খিদমাত ও সময়ের গুরুত্বপূর্ণ জিহাদ বানানোর হীন চেষ্টা বেড়েই চলছে।
সুযোগ পেলেই তাকলীদকে গালি দেয়া আজ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
একদিন এক সাহেব আসল। না সালাম দিল, না পড়ল দুআ। চেহারাও মুসলমানের নয়, নয় পোশাকও।
এসেই হঠাৎ বলতে শুরু করে দিল-“এ তাকলীদ। যেটা এত মতভেদ উগরে দিল। আ মানুষদের কুরআন হাদীস থেকে হঠিয়ে দিল। এটাই হল চতুর্থ শতাব্দির বেদআত”।
আমি অপারগ হয়ে তার কথা বন্ধ করার জন্য বাধ্য হয়ে বললাম-“জনাব! মিথ্যা কথা বলার জন্য কিছুটা থেমে নিন। অর্ধেক শ্বাসে তিন মিথ্যা বলে দেয়া একটা নতুন রেকর্ড! যার কোন নজীর সম্ভবত আর পাওয়া যাবে না”।
লোকটি বলতে লাগল-“আপনি মিয়া! নজী হুসাইন মুহাদ্দেসে দেহলবী সাহেবের ‘মেয়ারুল হক’ কিতাবটি পড়েছেন? সেখানে কিভাবে তিনি তাকলীদের বারটা বাজিয়ে ছেড়েছেন!”
আমি বললাম-“আপনিতো কথা খুব সহজ করে দিলেন। আসুন! মিয়া সাহেব থেকেই শুনে নিন, তাকলীদ কি জন্য করা হয়? তিনি মুকাল্লিদের বর্ণনা এই নকল করেছেন যে, ‘হাদীস ও কুরআন একটি সমুদ্র। যার কোন কূল কিনারা নেই। এসব বুঝা এবং সঠিক পদ্ধতিতে আমল করা এটা মুজতাহিদে মুতলাকের কাজ। আর আমাদের মত ব্যক্তিদের এতটা যোগ্যতা নেই যে, আমরা কুরআন ও হাদীসকে এভাবে বুঝবো [যে প্রতিটি মাসআলা উদ্ভাবন করে]। যদিও কিছু বাহ্যিক অনুবাদ বুঝতেও পারি, তারপরও আমাদের এটা জানা হয় না যে, এ হাদীসটি রহিত কী না? এর অর্থটি কি বাহ্যিক অর্থেই প্রযোজ্য? এর বিপরীত আরো কোন হাদীস আছে? নাকি নাই? এজন্য আমাদের তাকলীদ করা প্রয়োজন। মুজতাহিদের পথ প্রদর্শনে কুরআন ও সুন্নাহের উপর সঠিকভাবে আমল করে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাঃ কে সন্তুষ্ট করতে পারি।
ঐক্যমত্ব
মিঞা সাহেবই শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী এর কাছে তাকলীদ আবশ্যক হওয়ার বিষয়ে লিখেছেন যে, দালালত হিসেবে বর্ণনার অনুসরণ করার নাম। এর ব্যাখ্যা হল-যে ব্যক্তি কুরআন ও হাদীস এর উপর পূর্ণ জ্ঞান না রাখে, নিজেই মাসআলা উদ্ভাবন করার ক্ষমতাও রাখে না, তাহলে তার কর্তব্য এটাই যে, কোন ফক্বীহ এর কাছে তা জিজ্ঞেস করে নিবে। আর সে ফক্বীহের অনুসরণ করবে। চাই তিনি স্পষ্ট নস থেকে বিধান নিয়েছেন, বা উদ্ভাবন করেছেন, বা মানসুস বিষয়ের উপর কিয়াস করেছেন।
এ সকল সূরতই রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত বিষয় দ্বারাই প্রমাণিত। যদিও দালালত হিসেব হোক না কেন।
আর এমন তাকলীদ সহীহ হওয়ার উপর গোটা মুসলিম উম্মাহ সকল স্তরের সবার মাঝে ঐক্যমত্ব রয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্য উম্মতীরাও স্বীয় শরীয়তের ক্ষেত্রে এমন বিষয়ে একমত। {মেয়ারে হক-৪৬}
এর দ্বারা একতো এটা জানা গেল যে, মুজতাহিদের তাকলীদ মানে হল রাসূল সাঃ এর অনুসরণ। আর ফিক্বহের উপর আমল করা মানেই হল হুবহু কুরআন সুন্নাহের উপর আমল করা। আর এমন তাকলীদ আবশ্যক হওয়ার উপর শুধুমাত্র এ উম্মতের প্রতিটি স্তর [সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, উলামায়ে উম্মত] একমত। শুধু তাই না, প্রথম সকল উম্মতীদের মাঝেও এমন তাকলীদ আবশ্যক হওয়ার উপর সবার ঐক্যমত্ব আছে।
দেখুন! মিঞা সাহেব এবং শাহ ওয়ালী রহঃ সাহেবও এক শ্বাসে আপনার তিন মিথ্যার গোমর ফাঁক করে দিয়েছেন”।
ফিক্বহের উপর আমল
লোকটি বলতে লাগল-“ আপনি কি ফিক্বহের প্রতিটি মাসআলার উপর আমল করেন? আমরাতো শুধুমাত্র সহীহ হাদীসের উপর আমল করি। জয়ীফ, শাজ, এবং মাওজু হাদীসের উপর আমল করি না। তাইতো মিঞা সাহেব লিখেছেন যে, সনদ সহীহ, মুত্তাসিল, মুসালসাল হলে গ্রহণযোগ্য হবে। {মেয়ারে হক-১৯}। আর আমাদের আলেমরাও নিজেদের ঘোষণাতে লিখে থাকেন যে, হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু, ও গায়রে মাজরুহ মানেন। এ কারণে আমরা সব হাদীসের উপর আমল করি না”।
আমি বললাম-“আপনাদের কাছে শরয়ী দলিলতো শুধু আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর নির্দেশ তাই না? আর আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন হাদীসকে না সহীহ বলেছেন, না জয়ীফ, এ কারণেতো আপনাদের এ অধিকার নেই যে, কোন হাদীসকে সহীহ বা জয়ীফ বলার”।
- আপনার কথা অবশ্য ঠিক আছে। কিন্তু আমরা এখানে মুহাদ্দিসীনদের তাকলীদ করতে বাধ্য।
- তাহলেতো আপনারা আহলে হাদীস নন। আপনার ব্যাপার স্যাপার খুবই আজব! ফুক্বাহাদো কাছে যাওয়া ও তাদের তাকলীদ করার হুকুম কুরআন হাদীসে স্পষ্ট থাকা সত্বেও তাদের তাকলীদতো করেন না, মুহাদ্দিসীনদের তাকলীদও করেন না, বরং আপনারা স্বীয় খাহেশাতে নফসানীর তাকলীদ করে থাকেন। কেননা, কুরআন ও হাদীসের কোথাও একথা নেই যে, দলিল শুধু সনদ সহীহ, মুত্তাসিল, এবং মুসলসাল, বা হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু, গায়রে মাজরুহ এর মাঝে সীমাবদ্ধ।
এমনিভাবে মুহাদ্দিসীনরাও এ শর্ত আরোপ করেন নি যে, শরয়ী দলিল কেবলমাত্র সনদ সহীহ, মুত্তাসিল, এবং মুসলসাল, বা হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হওয়ার উপর নির্ভরশীল।
আপনাদের সহীহ শর্তের দ্বারা সকল হাসান হাদীস অস্বিকার করা হল। অথচ হাসান হাদীস দলিল হওয়ার উপর সকল মুহাদ্দিসীনগণ একমত।
এমনিভাবে মুত্তাসিল শর্তের দ্বারা সমস্ত মুরসাল হাদীস অস্বিকার করা হল। অথচ মুরসালে মুজাররাদা [যা অন্য কিছু শক্তিশালী হয়েছে] তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম মালিক রহঃ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর কাছে দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
এ শর্তের দ্বারা মুয়াত্তার অলংকারত্ব যেমন অস্বিকৃত হল, তেমনি বুখারীর তা’লীকাতও হল পরিত্যাজ্য। আর মিঞা সাহেবতো শর্ত লাগিয়ে ৯৯% হাদীসকে অগ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন। কেননা, মুসালসাল এমন হাদীসকে বলা হয়, যার اخبرنا থেকে শুরু হয়েছে, আবার শেষও হয়েছে اخبرنا দিয়ে। অর্থাৎ পূর্ণ সনদ اخبرنا দিয়ে হয়। অথবা حدثنا দিয়ে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত حدثنا ই থাকে, আর এমন হাদীস কয়টি আছে?
আমার ধারণায় এত হাদীস অস্বিকার, তাও এমন ঢংয়ে কোন মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারী করেছে কি না? আমার সন্দেহ হয়। আপনারাতো এমন হাদীসের প্রকারকেও অস্বিকার করেন যা দলিল হওয়ার উপর ফুক্বাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমত্ব রয়েছে। তারপর আপনাদের আহলে হাদীস হওয়ার মাঝে কোন ব্যবধান হয় না। অথচ আমরা যদি ফিক্বহের এমন কোন মাসআলার উপর আমল না করি, যার উপর ফুক্বাহারা ফাতওয়া দেন নি, এবং হানাফীদের কাছে যা একদম আমল হিসেবে অগ্রহণীয়, তাহলে আপনারা শোরগোল শুরু করে দেন যে, আমরা ফিক্বহ অস্বিকার করে দিয়েছি। যেমন মুতাওয়াতির কুরআনের বিপরীত শাজ তথা দুর্লভ ও মাতরুক তথা পরিত্যাজ্য কিরাতকে না কুরআন বলি, না কেউ এর তিলাওয়াত করে। এমনি মুতাওয়াতির সুন্নাতের বিপরীত শাজ ও মাতরুক বর্ণনাকে না সুন্নাত বলি, না কোন সুন্নীর এর উপর আমল হয়। এমনিভাবে ফিক্বহের ঐ সকল মাসায়েল যা মুফতা বিহী তথা যার উপর ফাতওয়া দেয় হয়েছে এমন হয়, সেই সাথে এর উপর সকল স্থানে আমল প্রচলিত হয়, সেটাকে বলা হয় হানাফী মাযহাব। এর বিপরীত যেসব শাজ ও মাতরুক বর্ণনা আছে তা না মাযহাবে হানাফী, না এর উপর আমল করা জায়েজ”।
লোকটি দ্রুততার সাথে বলতে লাগল-“হানাফী মাযহাবে রক্ত দিয়ে বরং প্রস্রাব দিয়ে কুরআনে পাক লিখা জায়েজ লিখা আছে। কি এটাই মাযহাবে হানাফী? যার উপর আপনাদের এত গর্ব!?”
কুরআন ও মাযহাবে হানাফী
আমি বললাম-“আরে কেউ যদি বলে যে, কুরআনে মৃত, রক্ত এবং শুকরের গোস্তকে হালাল লেখা হয়েছে। এটা যেমন কুরআনের উপর মিথ্যাচার, এর চেয়েও বড় মিথ্যাচার এটাকে মাযহাবে হানাফী সাব্যস্ত করা। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন বড় কাফের পর্যন্ত এর আগে এত বড় মিথ্যা কথা বলেনি।
এ বিষয়ে আমাদের মাযহাব, যার উপর প্রতিটি স্থানে আমল, তা হল- কুরআনে পাক এক অতি পবিত্র কিতাব। এটাকে নাপাক ব্যক্তি স্পর্শ করতে পারবে না। এমনকি লিখা আছে যে, অযু ছাড়া কুরআনে পাক এবং তার পৃষ্ঠায় পূর্ণ পৃষ্ঠা স্পর্শ করাও মাকরূহে তাহরীমি। চাই সেই স্থান স্পর্শ করুক, যাতে আয়াত লিখা আছে, চাই যে স্থান লেখাহীন। {আল বাহরুর রায়েক-১/২০১, বেহেশতী গাওহার-১৪}
অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী এর ফাতওয়া হল-অযু ছাড়া কুরআনে কারীমে হাত লাগানো যায়। {ফাতওয়ায়ে সানায়িয়্যাহ-১/৫১৯}
যে মহিলা ও পুরুষের উপর গোসল ফরজ সেও কুরআনে কারীম মৌখিকভাবে তিলাওয়াত করতে পারবে না, এর উপর হানাফীদের সকল স্থানের ফাতওয়া। এবং আমলও এর উপরই। অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তি এবং হায়েজা মহিলাও কুরআনে কারীমে তেলাওয়াত করতে পারে। {ফাতওয়া সানাবিয়্যাহ-১/৫৩৫}
কুরআনে কারীম ও সিপারা যখন এতই অস্পষ্ট হয়ে যায়, যখন এটাকে আর পড়া যায় না, বা এত ভুল লিখা হয় যে, যাকে শুদ্ধ করে পড়া কষ্টকর, তাহলে এটাকে কোন কাপড়ে ঢেকে এমন স্থানে দাফন করতে হবে যা কখনো পায়ের নিচে না আসে, এবং এমনভাবে দাফন করতে হবে যেন এর উপর মাটি না পরে, অর্থাৎ হয়তো বগলী কবরের মত খনন করে ভিতরে দাফন করে দিবে, বা অথবা এর উপর কোন কাঠ রেখে এর উপর মাটি চাপা দিবে। {বেহেশতী জেওর-১/৫৮}
এই হল হানাফী মাযহাব। যার উপর সকলের আমল। আর শুনে রাখুন! হানাফী মাযহাবে নাপাকী দিয়ে কুরআনে পাক লিখার কথাতো দূরে থাক, কুরআনে কারীমকে কোন ময়লা স্থানে মারাত্মক অপরাধ এবং এমন কুফরী যে, যেমন মুর্তিকে সেজদা করা, বা কোন নবীকে [আল্লাহ হিফাযত করুন] শহীদ করে দেওয়ার মত গোনাহের কাজ। এমন কুফরী যে, এ কর্ম করার পর তার ঈমানের স্বীকারোক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। যেমনটি ফাতওয়ায়ে শামী, মুরতাদ অধ্যায়-৩/২৮৪ তে স্পষ্ট লিখা।
তো যেমন কুরআনে কারীমে মৃত, রক্ত এবং শুকরের গোস্ত ও মদকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে, এবং এর হুরমত তথা নিষিদ্ধতা এতটাই অকাট্য যে, এর হালাল হওয়ার প্রবক্তা কাফের, তেমনি কুরআনে পাককে নাপাক স্থানে রাখা অকাট্য হারাম, এবং এর এই অপমানজনক অকাট্য কুফরী”।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“আমিতো আমার মাযহাব বলে দিলাম। এবার আপনি আপনার মাযহাব কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব থেকে দেখান যে, কুরআনে কারীমের অস্পষ্ট লেখা কপি কী করবে? আর কুরআন কারীমকে অপমানকারীকে আপনারা ফাসেক বলেন না কাফের?”
এবার লোকটি স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করে বলল-“আপনিতো জানেন যে, আমাদের মাসায়েলের কোন পূর্ণাঙ্গ কিতাব নেই। এজন্য আমরাও মাসায়েলের ক্ষেত্রে ফুক্বাহায়ে কেরামে এ সুন্দর উদ্ভাবন গ্রহণ করে থাকি”।
অপরাগ অবস্থার বর্ণনা
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-“কুরআনে কারীমে মৃত, রক্ত এবং শুকরের গোস্তকে হারাম বলেছে, এর পরই فمن اضطر غير باغ ولا عاد فلا اثم عليه، ان الله غفور الرحيم (১৬/১১৫) তথা অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে নিরূপায় হয়ে পড়লে, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। {সূরা নহল-১১৫}
আল্লামা উসমানী রহঃ বলেন-উল্লেখিত বস্তুগুলো হারাম। কিন্তু যখন কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি মৃত পদযাত্রী হয়ে যায়, তাহলে তার এ নিরূপায় অবস্থায় এসব খাওয়ার অনুমতি আছে। তবে শর্ত হল নাফরমানী ও অতিরঞ্জন করতে পারবে না।
নাফরমানী হল-যেমন নিরূপায় অবস্থায় পৌঁছেনি, তারপরও খেতে শুরু করে দেয়া, আর অতিরঞ্জন এর অর্থ হল-প্রয়োজনের অতিরিক্ত খুব পেট ভরে খাওয়া। শুধু এতটুকু খাবে, যতটুকু না খেলে মারা যাবে।
এখন যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধায় মরতে বসে, আর তার সামনে মৃত প্রাণী ছাড়া কিছু না থাকে, যেটা অকাট্য হারাম, যাকে হালাল মনে করা কুফরী, আর সেখানে প্রাণ বাঁচানোর মত কিছুও নেই, তাহলে কি এ প্রয়োজনের সময় প্রয়োজন মাফিক মৃত প্রাণী থেকে কিছু খেয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে নেয়, তাহলে কি এটা জায়েজ হবে?”
লোকটি বলল-“অবশ্যই জায়েজ”।
আমি বললাম-“তাহলে কি এটা বলা যাবে যে, কুরআন মৃত খাওয়া জায়েজ সাব্যস্ত করেছে? নাকি এটা বলা হবে যে, সকল মুসলমান মৃত প্রাণী হালাল একথা বিশ্বাস করে?”
লোকটি বলল-“এটাতো একেবারে মিথ্যা কথা!”।
আমি বললাম-“এক ব্যক্তি পিপাসায় মরতেছে, তার কাছে মদ ছাড়া আর কিছু নেই, যা পান করে প্রাণ বাঁচাতে পারে, তাহলে কি এ প্রয়োজনের সময় প্রয়োজন মাফিক মদ পান করে প্রাণ বাঁচানো কি জায়েজ আছে?”
লোকটি বলল-“অবশ্যই জায়েজ”।
আমি বললাম-“এ বেচারার এ কাজের কারণে কি এটা বলা যাবে যে, কুরআনে কারীম মদ খাওয়ার খুল্লামখুলা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে? অথবা সকল মুসলমান মদ পান করাকে হালাল মনে করে?”
লোকটি বলল-“আরে! এটাতো বিলকুল মিথ্যা কথা হবে”।
আমি বললাম-“এ মিথ্যা বক্তব্যপ্রদানকারী যদি কোন শিখ বলে, যে সর্বদা মৃত প্রাণী খায়, মদ পান করে, আর সে অপরগতার মাসআলার ব্যাপারে এ শোরগোল করে যে, কুরআনে মৃত, শুকর ও মদকে হালাল লিখেছে। তাহলে এটা কি তার চূড়ান্ত নির্লজ্জতা আর জঘন্যতা নয় যে, নিজেতো এসবকে স্বাভাবিক অবস্থায় হালাল বলে, আবার কুরআনের উপর মিথ্যাচারও করে?
এখানে একথাও স্বরণ রাখুন যে, যে প্রাণী বন্দুক দিয়ে মারা হয়, আমাদের কাছে এ মৃত হারাম। আর গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট হালাল। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৩৩৫, ফাতওয়া সানাবিয়য়্যাহ-১/১৫০}
এমনিভাবে গায়রে কিতাবী কাফের, অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, কাদিয়ানীদের জবাইকৃত পশু আমাদের কাছে মৃত। হারাম।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের কাছে হালাল। {উরফুল জাদী-১০}
এমনিভাবে কেঁচু, কাঁকড়া এবং গুইসাপ তাদের কাছে হালাল। {ফাতওয়া সানাবিয়্যাহ-২/৭০, ২/১০৯, উরফুল জাদী-২৩৬}
গায়রে মুকাল্লিদরা এসব নিরূপায় অবস্থা ছাড়াই এসব খায়, পান করে। অথচ যদি কোন হানাফী নিরূপায় অবস্থায়, প্রাণ বাঁচাতে প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনমাফিক এসব খায়, তখন ওরা মিথ্যা শোরগোল শুরু করে দেয় যে, হানাফীরা এসবকে হালাল বলে”।
অষুধ এবং নিরূপায় হালাত
উপরে খাদ্য সম্পর্কিত নিরূপায় হালাতের উদাহরণ গেল, যাতে মৃত, মদ নিরূপায় অবস্থায় প্রয়োজন মাফিক অনুমোদন আছে। কিন্তু একথা বলা যে, কুরআন মৃত ও মদকে হালাল বলে, এটি মিথ্যাচার।
এখন এটি স্পষ্ট যে, ক্ষুধা পেটে কোন খাদ্য গেলে এর দ্বারা প্রাণ বেঁচে যায়। পিপাসার্তে কোন পানীয় পেলে তাহলে এটা নিশ্চিত যে, পিপাসা মিটে যাবে। কিন্তু অষুধের সাথে সুস্থ্যতা এতটা সুনিশ্চিত নয়, যতটুকু পানির সাথে পিপাসা মিটে যাওয়ার রয়েছে। বরং অষুধের দ্বারা আরোগ্যতাটি হল ধারণাসূচক।
এখন যদি কোন রোগী এমন হয় যে, কোন হালাল অষুধ তার কাজে আসছে না। এমতাবস্থায় কোন দ্বীনদার বিজ্ঞ ডাক্তার যদি এটা বলে যে, ওমুক হারাম অষুধ দিয়ে তার সুস্থ্য হওয়ার প্রবল ধারণা হয়। তাহলে তার প্রাণ বাচানোর জন্য প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনমাফিক অষুধ ব্যবহার জায়েজ আছে কি নেই?
আদ দুররুল মুখতারের লেখক বলেন-‘আমাদের জাহেরী মাযহাব হল-হারাম অষুধ ব্যবহার নিরূপায় অবস্থায় ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের বক্তব্য হল-প্রতিটি হালাল প্রাণী [তাদের নিকট ঘোড়া, এবং বক্তব্য অনুযায়ী হাতীও হালাল, কানযুল হাকায়েক] এর পায়খানা এবং প্রস্রাব পাক। যে কাপড়ে লাগে তাতে নামায পড়া জায়েজ। এমনকি অষুধ হিসেবে ব্যবহার করাও জায়েজ আছে। {ফাতওয়া সাতারিয়া-১/৫৩}
আল হাদী কুদসীতে অষুধ হিসেবে নিরূপায় অবস্থায় ব্যবহার জায়েজের ফাতওয়া দেয়া হয়েছে। তবে তাক্বওয়াতো এটাই যে, হারাম অষুধ ব্যবহার না করবে, তবে নিরূপায় অবস্থায় ফাতওয়া দ্বারা সুযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হয়। যাতে নিশ্চিত ও ধারণার মাঝে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু এটা বলা যে, মাযহাবে হারাম অষুধ হালাল হয়ে গেছে, এটা কুরআনে কারীম মৃতকে হালাল বলেছে বলার চেয়েও বড় মিথ্যাচার। কেননা, নিরূপায় ব্যক্তির জন্য মৃত খাওয়াতো সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ। কিন্তু নিরূপায় ব্যক্তির জন্য হারাম অষুধ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মতভেদ আছে।
ঝাড়ফুঁক ও আমলসমূহ
পানি পান করলে পিপাসা মিটে যায়। খানা খেলে ক্ষুধা নিবারিত হওয়া স্বাভাবিকভাবে নিশ্চিত। কিন্তু অষুধ গ্রহণের পর সুস্থ্যতা মাজনূন তথা ধারণাসূচক। আর ঝাড়ফুক, তাবীজ ও আমল দ্বারা আরোগ্যতা মাওহুম তথা অনুমিত। এবার প্রশ্ন হল-মাওহুমকে মাজনূনের উপর কিয়াস করা হবে কী না?
এ ব্যাপারে গুরাবায়ে আহলে হাদীস জামাতের ফাতওয়া দেখুন-
প্রশ্নঃ সাপ, বিচ্ছু বা কুকুর কামড়ালে শিরকী শব্দ দিয়ে ঝাড়ফুক করা জায়েজ আছে কি নেই?
উত্তরঃ ভালতো নয়, তবে কোন মুসলমানের কল্যাণার্থে প্রয়োজনের সময় নিরূপায় হয়ে যদি করে ফেলে তাহলে কোন সমস্যা নেই। {সহীফায়ে আহলে হাদীস, রমযানুল মুবারক ১৯৪৫ ঈসাব্দ}।
এর পর আবু মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার সাহেবের দস্তখত আছে। তারপর তার পিতা মাওলানা আব্দুল ওহাব দেহলবী আরো লিখেন-“সাপ, বিচ্ছু, কুকুর ইত্যাদি কাটলে, তাহলে বিষওয়ালা প্রাণীর কাটা স্থানে শিরকী শব্দ দিয়ে কোন অমুসলিম বা মুসলিম ঝাড়ফুক করলেও কোন সমস্যা নেই। {সহীফায়ে আহলে হাদীস, জমাদিউস সানী, ১৯৪৬ ঈসাব্দ} রেফারেন্স দিয়েছেন যিল্লে মুহাম্মদী ওরফে ইমামতে মুহাম্মদী মুহাম্মদ জুনাগরী এর। এবার প্রশ্নোত্তরের ধরণটি লক্ষ্য করুন-
প্রশ্নঃ
এক ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে, আর কোন জায়েজ অষুধ দিয়ে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। লোকটি মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। যদি কারো জানা থাকে যে, এ রক্ত দিয়ে যদি সূরা ফাতিহা কপালে লিখে দেয়া হয় তাহলে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। আর লোকটির প্রাণও বেঁচে যাবে। তাহলে কি নিরূপায় অবস্থায় একাজ করা জায়েজ আছে?
গায়রে মুকাল্লিদের পক্ষ থেকে জবাবঃ
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট রক্ত পাক। প্রতিটি হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পায়খানাও পাক। বীর্যও পাক। আর পাক জিনিস দিয়ে কুরআন লিখা কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা নিষেধাজ্ঞা আসে নি। এজন্য নিরূপায় অবস্থায় হোক, বা স্বাভাবিক অবস্থায় হোক, সর্ববস্থায় তা করা জায়েজ আছে। যেখানে বুখারীতে উটের প্রস্রাব পান করার বিধান আছে। তাহলে কুরআনে পাককে লেখা কি করে না জায়েজ হতে পারে? আর অনেক গায়রে মুকাল্লিদরাতো ফাতিহাকে কুরআনই মনে করে না। তাহলে এর উপর আর কি সমস্যা থাকতে পারে?
হানাফীদের পক্ষ থেকে জবাবঃ
রক্ত, বীর্য, প্রস্রাব নাপাক। আর নাপাক স্থানে কুরআনে কারীম রাখা, মৃত, শুকর মদের মতই অকাট্য হারাম ও কুফরী। আর এর দ্বারা আরোগ্যলাভ সুনিশ্চিত নয়, এবং মাযনুন ও নয়। বরং মাওহুম। তাই মাওহুমকে মাযনূন এবং ইয়াকীনের উপর কিয়াস করে এমন নিরূপায় অবস্থায়ও এ কথা বলা যাবে না যে, এরূপ নিরূপায় অবস্থায় শরীয়ত হারাম কাজ করার অনুমোদন দেয়, বা কুফরী করার অনুমোদন দেয়।
এটাই হল প্রকৃত হানাফী মাযহাব। অবশ্য যদি কেউ মাওহুমকে মাযনূন ও ইয়াকিনের উপর কিয়াস করে এমন নিরূপায় অবস্থায় হারাম কাজ করার অনুমোদন দিয়ে থাকে, তাহলে সেটি তাহলে এটি প্রকৃত হানাফী মাযহাবের বিপরীত।
অবশ্য গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট নিরূপায় অবস্থা ছাড়াও স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত এবং হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পায়খানা দিয়ে কুরআনে কারীম লেখা কখনোই নিষিদ্ধ নয়।
এ কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের হানাফীদের অপপ্রচার করা শিখদের বাতিল দাবির চেয়েও জঘন্য। যে শিখেরা স্বাভাবিক অবস্থায় শুকর খাওয়াকে হালাল মনে করে, অথচ মুসলমানদের উপর অভিযোগ করে বলে যে, “তোমাদের মাযহাব ভুল। তোমাদের কুরআনে শুকর খাওয়াকে হালাল বলেছে”।
মোটকথা, যেভাবে আমরা রক্ত, মৃত, শুকর এবং মদকে অকাট্য হারাম বলে থাকি, তেমনি কুরআনে কারীমকে নাপাক স্থানে ইচ্ছেকৃত রাখাকেও হারাম বিশ্বাস করি। শুধু তাই নয়, এটাকে এমন কুফরী মনে করি যে, যেমন মুর্তিকে সেজদা করা কুফরী। কাবা শরীফকে লাঞ্ছিত করা কুফরী। কোন নবীকে শহীদ কুফরী।
পক্ষান্তরে যারা আহলে সুন্নাতের উপর অপবাদ আরোপ করছে, তারা নিজের মাযহাবকে পরিমার্জিত করে ছাপাচ্ছে না যে, তাদের কাছে রক্ত পবিত্র, মৃতও পবিত্র। প্রতিটি হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পবিত্র। বীর্যও পাক। আর বারবার আবেদন করার পরও একটি আয়াত বা হাদীসও উপস্থাপন করতে পারে নি যে, পাক বস্তু দিয়ে কুরআনে কারীম লেখা হারাম ও কুফরী।
সেই সাথে আমাদের ইমাম আবু হানীফার রহঃ, ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ, ইমাম মুহাম্মদ ও যুফার রহঃ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন মায়ের সন্তান নিরূপায় অবস্থায়ও এ হারাম ও কুফরী করা জায়েজ বলেছেন বলে প্রমাণিত করতে পারবে না।
না উঠবে খঞ্জর না উঠবে তলোয়ার,
নিয়েছি পরীক্ষা এ হাতের বারংবার।
অবশেষে লোকটি এ ওয়াদা করে যায় যে, সে উভয় বক্তব্যটির প্রমাণ নিয়ে আসবে। এক হল-যেহেতু তাদের কাছে রক্ত, বীর্য, মদ, শুকর, মৃত এবং হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পবিত্র, তাহলে কোন হাদীস বা আয়াতে আছে কি যে, পবিত্র বস্তু দিয়ে কুরআন পাক লেখা হারাম এবং কুফরী?
দ্বিতীয় হল- তাদের ৫ জন ইমাম থেকে সহীহ সনদসহ এ কথা প্রমাণিত যে, তারা নিরূপায় অবস্থায় এ হারাম ও কুফরী কাজ [প্রস্রাব দিয়ে কুরআন লিখন ইত্যাদি] করার অনুমোদন দান করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ দু’টি কথার প্রমাণ পেশ করতে পারে নি।
গায়রে মুকাল্লিদদের সাথে আমার সর্বশেষ দরখাস্ত এই যে, আপনারা প্রথমেই মানুষের মাঝে দ্বীন বিমুখিতা এবং পূর্বসূরীদের ব্যাপারে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ফেলেছেন। আর এমন অপবাদ আরোপ করা দ্বীনের কোন খিদমাত নয়। বর্তমানে এমন বিদ্বেষ মনোভাবান্ন না মুসলিম জাতি। না আমাদের দেশ। তাই এসব থেকে ফিরে আসুন। আল্লাহ তাআলা সবাইকে মিথ্যা থেকে তওবা করার তৌফিক দান করুন।

কথিত আহলে হাদীসদের মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব


আমি সে কথিত আহলে হাদীসকে বললাম- পূর্ণ দ্বীনের উপর আপনাদের একটি কিতাবও না মক্কায় লিখা হয়েছে, না মদীনায়। আর কুফাতে দ্বীনে ইসলাম সে সকল সাহাবারাই নিয়ে এসেছেন যারা মক্কা মদীনায় ছিলেন।
আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী রহঃ মদীনা মনোয়ারায় রওযা পাকে বসে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব “আদ দুররুল মুখতার” লিখেছেন। সে কিতাবে তিনি লিখেন-‘মোটকথা, কুরআন পাকের পর ইমাম আবু হানীফা রহঃ রাসূল সাঃ এর অনেক বড় একটি মোজেজা। আর এর সবচে’ বড় দলিল এটাই যে, সারা দুনিয়ায় তার মাযহাবই সবচে’ বেশি প্রচারিত।
আর দ্বিতীয় দলিল হল এই যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এমন কোন কথা বলেন নি, যা কোন না কোন ইমামের মাযহাব হয়নি। অর্থাৎ সকল ইমামরা তার থেকে ফায়দা নিয়েছেন।
তৃতীয় দলিল হল-ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রে বাদশাহী এবং আদালতী ফায়সালার দায়িত্ব তারই মুকাল্লিদের হাতে রয়েছে।
আল্লামা শামী রহঃ এর ব্যাখ্যায় বলেন-খেলাফতে আব্বাসীয়া যার রাজত্বের সময়কাল প্রায় ৫শত বৎসর ছিল, তাদের মাঝের অধিকাংশ বিচারক, মাশায়েখ তথা শাইখুল ইসলাম হানাফী ছিল। যেমন ইতিহাস গ্রন্থগুলো এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করছে। এমনিভাবে সাজলুকী ও খাওয়ারজামী সকল বাদশাহ ছিল হানাফী। এমনকি খেলাফতে উসমানীও হানাফী ছিল। তাদের বিচারক ছিল হানাফী, অর্থাৎ ইবনে আবেদীন শামী রহঃ এর সময়কাল পর্যন্ত ৯শত বৎসরের ইসলামী খিলাফত হানাফীদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ ও বলেন-সকল শহর, সকল রাষ্ট্রের বাদশাহ হানাফী ছিল, এবং বিচারক ও অধিকাংশ মাদরাসা ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ছিল হানাফী। {কালিমাতে তায়্যিবাত-১৭৭} অর্থাৎ সকল শহর ও রাষ্ট্রে বাদশাহগণ হানাফী, অধিকাংশ বিচারক, অধিকাংশ শিক্ষক এবং অধিকাংশ সাধারণ মুসলমান হানাফী ছিল।
মোটকথা- দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ১৪ তম শতাব্দীর মাঝে প্রায় ১২শত বৎসর হারামাইন শরীফাইনের খাদিম হানাফী ছিল, তারপর আজ পর্যন্ত হাম্বলী। তাহলে আহলে কুরআন আর আহলে হাদীসদের আল্লাহ তাআলা কখনো রাজত্ব দিয়ে হারামাইন শরীফাইনের খিদমাত করার সুযোগ দেননি। এ দু দলের রাজত্বতো দূরে থাক, এদের প্রতিষ্ঠাও এ মুবারক শহরে হয়নি।
মাওলানা সানাউল্লাহ এর সত্য স্বীকার
গায়রে মুকাল্লিদদের শাইখুল ইসলাম ২০ শে অক্টোবর ১৯৩৩ ঈসাব্দে একটি ঘোষণা নিজেদের ফেরক্বাবাজী মুখপত্র “আহলে হাদীস” পত্রিকায় প্রকাশ করে। তাতে তিনি লিখেন-“মুসলমান ভাইয়েরা! [গায়রে মুকাল্লিদরা] অধিকাংশ মানুষ জানে যে, মাওলানা আহমাদ সাহেব দেহলবী সাত আঠ বছর যাবত মদীনায় অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে পৌঁছার পর সে পবিত্র শহরে বসবাসকারী কাউকেই আহলে হাদীসের অনুসারী পান নি। এ জামাতের কোন মাদরাসাও ছিল না, ছিল না কোন দাওয়াতী কাজ। সেখানে এ জামাতের কোন কার্যক্রমই ছিল না, ছিল না কোন নামও। এমন মনে হচ্ছিল যে, এ জামাতের কার্যক্রম থেকে কয়েক শতাব্দী যাবত রাসূল সাঃ এর মদীনা শহর বঞ্চিত। এ অবস্থা দেখে তার মনে অনেক কষ্ট লাগে। খুবই আফসোস লাগে যে, ইসলামের মারকায ও দরবারে নবী সাঃ, যাতে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা একত্রিত হয়, সেখানে কোন আহলে হাদীস নামধারী, এবং মাযহাবে আহলে হাদীসের কোন মুবাল্লিগ নেই?! কতটা লজ্জাজনক কথা! সুন্নাতের দাবিদার! অথচ পবিত্র সুন্নাতধারীর গৃহ মদীনা তায়্যিবায় সে দাবিদারদের কোন নাম নিশানাই নেই! আফসোস! ইন্নালিল্লাহ!
এভাবেই ওদের প্রথম মাদরাসা ‘মাদরাসায়ে দারুল হাদীস মুহাম্মদিয়া’ ১২ ই রবিউল আউয়াল ১৩৫২ হিজরীতে শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠা হলেন আব্দুল হক নুনারী [পূর্ব আহমদপুর]।
এর দ্বারা এ বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যেমন কাদিয়ানী ফেতনা, পারভেজী ফেতনা আরব দেশে পাক ও হিন্দ থেকে ঢুকেছে ঠিক তেমনি গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত ফিতনাও পাক ও হিন্দ থেকেই ঢুকেছে আরবে।
যেমন কাদিয়ানী ও আহলে কুরআনের এ দাবি বাতিল যে, তাদের দ্বীন হেজাযী, এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদদের দাবি “তাদের দ্বীন মক্কা মদীনা থেকে এসেছে” এটাও চরম পর্যায়ের ইতিহাস বিকৃতি সাধন।
আমি লোকটাকে বললাম- আপনাদেরতো মক্কা মদীনার সাথে এতটুকু সম্পর্ক নেই, যতটুকু মুর্তির সম্পর্ক আছে মক্কা মদীনার সাথে। কারণ মুর্তি মক্কা মদীনার না হলেও মক্কা মদীনা থেকেতো বের হয়েছে অন্তত।
আমি তাকে আরো বললাম- আপনি কি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সাড়ে ১৩ শতাব্দীর মাঝে কোন মুসলিম খলীফা, কোন মুসলমান বিচারক, কোন একজন মসজিদে হারামের ইমাম বা মসজিদে নববীর ইমাম, হারামাইন শরীফাইনের কোন ব্যক্তিকে সনদসহ ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণে গায়রে মুকাল্লিদ প্রমাণ করতে পারবেন? এতটুকু প্রমাণ করে দেখান যে, লোকটার মাঝে ইজতিহাদ করার যোগ্যতাও ছিল না, সেই সাথে কারো তাক্বলীদও করে নি। বরং সে গায়রে মুকাল্লিদ ছিল। ইজতিহাদকে ইবলিসের কাজ, আর মুজতাহিদ ও তাক্বলীদকে শিরক বলেছেন।
একটি প্রমাণ পেশ করুন। স্রেফ একটি প্রমাণ।
ইসলামী রাষ্ট্র
লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলল- “খুব গর্বের সাথে বললেন যে, সকল ইসলামী রাষ্ট্র হানাফী। এটা ঠিক এবং যথার্থ। সকল রাষ্ট্র হানাফী কেন হবে না? যেহেতু হানাফী ফিক্বহ মদ ও জিনার একদম খোল্লামখোলা সুযোগ দিয়ে রেখেছে। ইমাম আবু আবু ইউসুফতো বাদশাহ হারুন রশীদকে নিজেই মদ বানিয়ে খাওয়াতো। সেই মদের নামই ছিল শরাবে আবি ইউসুফী”।
আমি তাকে বললাম- বহুত বড় দুঃসাহস দেখি আপনার! পুরো ইসলামী রাষ্ট্রসমূহকে আপনি মদখোর বানিয়ে দিলেন? এতটা জঘন্যভাবে কোন কাফেরওতো মুসলিম রাষ্ট্রের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত বলেনি। এর চেয়েও বড় স্পর্ধার কথা এটা যে, আপনি সকল ফুক্বাহায়ে কিরামকে মদ ও জিনাকে জায়েজ সাব্যস্তকারী বানিয়ে দিলেন?! রাসূল সাঃ ফিক্বহকে খায়র তথা কল্যাণ ফুক্বাহাদের খাইয়্যার তথা কল্যাণী সাব্যস্ত করেছেন, আর আপনারা ফিক্বহকে নিকৃষ্ট ফুক্বাহাদের নিকৃষ্টতর সাব্যস্ত করলেন?!
রাসূল সাঃ যথার্থই বলেছেন যে, এ উম্মতের শেষের দিকে একদল লোক আসবে, যারা পূর্ববর্তীদের অভিশাপ দিবে।
রাসূল সাঃ এর এ বাণীর পূর্ণ সত্যায়ন ও বাস্তবায়ন গায়রে মুকাল্লিদরা স্বচক্ষে দেখিয়ে দিল”।
লোকটি বলতে লাগল-“ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে মদকে জায়েজ বলা হয়েছে। যেটা বাদশাহের জন্য লেখা হয়েছিল। সেই সাথে শরাবে আবি ইউসুফীর কথা সে কিতাবেই লিখা আছে”।
আমি ফাতওয়ায়ে আলমগীরীর উর্দু অনুবাদ তার সামনে রাখলাম। সেখানে লেখা হল- মদের ব্যাপারে হুকুম হল ৬টি। যথা-
-সামান্য পান করা বা বেশি পান করা সবই হারাম। এ দিয়ে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করাও হারাম।
- মদের হারাম হওয়া অস্বিকারকারী কাফের।
-যে পদ্ধতিতে মানুষ উপকারীতা অর্জন করে যেমন দান করে, ক্রয়-বিক্রয় করে, এভাবে নিজে মদের মালিক হওয়া বা অন্যকে মালিক বানানোও হারাম।
-মদ মূল্যহীন। এর মূল্য সাব্যস্ত করা বাতিল হয়ে গেছে। এমনকি মদ ধ্বংসকারীর জরিমানাও আবশ্যক হবে না। অর্থাৎ যদি কেউ কারো মদের ভান্ড থেকে মদ ঢেলে ফেলে দেয়, তাহলে এর জরিমানা দিতে হবে না।
-মদ প্রস্রাব ও রক্তের মতই নাজাসাতে গলীজা।
- মদ অল্প বা বেশি পান করুক, তার উপর শরয়ী শাস্তি আরোপিত হবে। {ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৯/৮১২}
আল্লাহ তাআলাকেতো ভয় পাও ভাই! এর নাম কি মদের ব্যাপাওে খোল্লামখোলা সুযোগ দিয়ে রাখা?!
আমাদের কাছে মদ প্রস্রাবের মত নাপাক, অথচ আপনাদের কাছে মদ পাক। দেখুন {নুজুলুল আবরার-১/৪৯}”।
কথিত আহলে হাদীসটি তখন বলতে লাগল- “তাহলে শরাবে আবি ইউসুফীর ঘটনা কি?”।
আমি বললাম- আবি ইউসুফী কোন মদ না, এর নাম হল বুখতুজ বা মুসাল্লাস। যা আলমগীরীতে উল্লেখ আছে। কাযী আবু ইউসুফ রহঃ মৃত্যু বরণ করেছেন ১৮২ হিজরীতে। আর আপনি উদ্ধৃতি দিলেন আলমগীরী থেকে, যেটা লিখা হয়েছে ১১১৮ হিজরীতে। অথচ ৩০৩ হিজরীতে লিখা সিহাহ সিত্তায় শামিল কিতাব সুনানে নাসায়ীর দিকে তাকালেন না। সুনানে নাসায়ীতে লিখা আছে- عن ابراهيم لا بأس بنبيذ البختج অর্থাৎ সির্কা পান করাতে কোন সমস্যা নেই। [সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৫২৫৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫২৪}
এবার বলুন- যদি কাযী আবু ইউসুফ রহঃ যদি সে সির্কা পান করতে অনুমতি প্রদান করে থাকেন, তাহলে সেটা কোন হাদীসের বিপরীত? আপনি কি কোন হাদীস বা আয়াত পেশ করতে পারবেন যাতে বুখতুজ পান করাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে?
অথচ বুখারীতে আছে যে, হযরত ওমর রাঃ, হযরত আবু ওবাদা বিন জাররাহ রাঃ, হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ তালায়ে মুসাল্লাস পান করাকে জায়েজ বলেছেন। {উর্দু অনুবাদ সহীহ বুখারী-৩/৩৮০}
কি এসকল হযরাতকেও কি কাযী আবু ইউসুফ রহঃ ফাতওয়া দিয়ে এসেছিলেন নাকি? আপনি শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স দিন যে, ফিক্বহে হানাফীতে মদের একটি ফোটা পান করাকে হালাল বা পাক বলা হয়েছে। নতুবা মিথ্যা থেকে তওবা করুন”।
লোকটি বলতে লাগল-“ঠিক আছে, আমি মদের [খমর] শব্দ দেখাচ্ছি আদ দুররুল মুখতারে স্পষ্ট আছে যে, খমর তথা মদেও মাঝে কয়েকবার গমের জুস দিয়ে, তারপর একে শুকানোর দ্বারা এটা পাক হয়ে যায়”।
আমি তাকে আদ দুররুল মুখতার খুলে দেখালাম। সেখানে লিখা আছে যে, যখন গম মদের মাঝে পাকানো হয়, তাহলে এটি কখনো পাক হবে না। এর উপরই ফাতওয়া। {আদ দুররুল মুখতার-১৭২}।
মুর্খতার কারণে আপনি কতটা খিয়ানত করেছেন একবার ভাববেন কি?”
তারপর আমি তাকে নুজুলুল আবরার দেখালাম। বললাম-আপনাদের এখানেতো মদই পাক। মদ দিয়ে পাকানো গম পাক। বরং মদে আটা মিশিয়ে খামিরা বানিয়ে রুটি বানালে সেটা খাওয়াও হালাল”।
এবার লোকটি বলতে লাগল- “আপনাদের হেদায়ায় লিখা আছে যে, মদকে সির্কা বানানো জায়েজ”।
আমি সাথে সাথে তাকে কিতাব খুলে দেখালাম, এ কথা হেদায়ায় লিখার পর সাথে হাদীসও দিয়েছেন। عن جابر ، عن النبي صلى الله عليه وسلم خير خلكم خل خمركم অর্থাৎ হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-উত্তম সির্কা সেটা মদ থেকে বানানো হয়। {মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৩৭০৫} আপনাদের এখানেওতো তাই লিখা- اما الخمر اذا صار خلا فصير حلالا অর্থাৎ মদ যখন সির্কা হয়ে যায়, তখন তা হালাল হয়ে যায়। {নুজুলুল আবরার-১/২৮৫}
ঠিক আছে,বুখারী দেখুন! বুখারীতেও আছে-
وقال أبو الدرداء في المري ذبح الخمر النينان والشمس — ( المري . . ) هو خمر يجعل فيه الملح والسمك ويوضع في الشمس فيتغير طعمه والنينان جمع نون وهو الحوت . ومعنى قوله أن الشمس طهرت الخمر وأذهبت خواصها وكذلك السمك والملح أزالا شدتها وأثرا على ضراوتها وتخليلها فأصبحت بذلك حلالا كما أحل الذبح الذبيحة (صحيح البخارى، كتاب الذبائح والصيد، باب قول الله تعالى { أحل لكم صيد البحر } / المائدة) ৯৬ /)
অর্থাৎ হযরত আবু দারদা রাঃ বলেছেন যে, মদের মাঝে যদি মাছ দেয়া হয়, তারপর তা সূর্যের তাপে রাখা হয়, তখন সেটা আর মদ থাকে না, অর্থাৎ তখন সেটা সির্কা হয়ে হালাল হয়ে যায়।
বুখারীতো হেদায়ার আগে লেখা হয়েছে। তাহলে প্রথমে প্রশ্ন বুখারীর উপর করা উচিত। তাই নয়কি?’
এবার কথিত আহলে হাদীস লোকটি বলতে লাগল-“হ্যাঁ, ঠিক আছে। মদ সির্কা হয়ে গেলেতো হালাল হয়ে যায়। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাদের এটা জানা উচিত যে, আবু ইউসুফ কিভাবে কাজী হয়েছে? তিনি বাদশাহ হারুন রশীদকে ফাতওয়া দিয়েছিলেন যে, তার পিতার বাদির সাথে তার সহবাস করা জায়েজ। এ কারণেই তাকে বাদশাহ খুশী হয়ে কাজী বানিয়ে দিয়েছে”।
কাজী আবু ইউসুফ রহঃ
আমি বললাম- “আপনি কি জানেন! যে শব্দ আপনার মুখ থেকে নির্গত হচ্ছে এর প্রতিটি শব্দের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে? মুহাদ্দিস আলী বিন সালেহ [মৃত্যু-১৫১ হিজরী] যখনই হাদীস বর্ণনা করতেন তখন বলতেন-
حدثنى افقه الفقهاء وقاضى القضاة وسيد العلماء ابو يوسف অর্থাৎ ’আমাকে আমাদের সময়ের সকল ফুক্বাহাদের মাঝে সবচে’ বড় ফক্বীহ চিফ জাষ্টিজ, আলেমদের শিরোমনী হযরত আবু ইউসুফ রহঃ হাদীস শুনিয়েছেন’।
আর মুহাদ্দিস আলী বিন জাদ [মৃত্যু-২৩০ হিজরী] যিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ, তিনি বলতেন-যখন তুমি আবু ইউসুফ রহঃ এর নাম নিতে চাও, তখন প্রথমে স্বীয় মুখ সাবান ও গরম পানি দিয়ে খুব ভাল করে পাক-সাফ করে নাও। তারপর বলেন- আল্লাহর কসম! আমি আবু ইউসুফ রহঃ এর মত মুহাদ্দিস জীবনে দেখিনি। তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন, আর কাজী হওয়ার পরও প্রতিদিন ২০০ রাকাত নফল নামায পড়তেন’।
কোন মুসলমানের উপর অপবাদ করার জন্যতো প্রমাণ প্রয়োজন। আপনি যে ঘটনার নিসবত কাজী আবু ইউসুফ রহঃ এর দিকে করেছেন এর কোন সনদ আপনার কাছে আছে?
আপনাদের নবাব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবই লিখেছেন যে, এ ঘটনাটির [পিতার বাদির সাথে সহবাস করা হালাল হওয়া মর্মে আবু ইউসুফ রহঃ এর উপর মিথ্যাচার] ভিত্তি নেই। {কাশফুল ইলতিবাছ-২৬৯} তারপরও আপনি এর উপর ভিত্তি করে যে ফলাফল বের করেছেন যে, এ কারণেই বাদশাহ হারুন রশীদ হযরত আবু ইউসুফ রহঃ কে কাজী বানিয়েছেন, এটা আপনার চূড়ান্ত অজ্ঞতার এক কারিশমা মাত্র। কারণ কাজী আবু ইউসুফ রহঃ কে খলীফা মাহদী কাজীর দায়িত্বে সমাসিন করেছিলেন। তারপর বাদশাহ হারুন রশীদের আমলেও তিনি সে আসনে অধিষ্ঠিত থাকেন। {মুকাদ্দামায়ে কিতাবুল খারাজ}
হযরত কাজী আবু ইউসুফ রহঃ এরতো খোদাভীতির এ অবস্থা ছিল যে, মৃত্যুর আগে অসুস্থ্য অবস্থায় অনেক পেরেশানীতে ছিলেন। আর বলতেন-‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো কোন খারাপ কাজ করিনি, জীবনে এক পয়সাও হারাম খাইনি। সারা জীবনে কোন ফায়সালায় বেইনসাফী করিনি। হ্যাঁ, একবার বে-ইনসাফী হয়েছিল, সেটা হল-আমি আমি বাদশাহ হারুন রশীদকে কিছু ফায়সালা শুনাচ্ছিলাম, তখন এক খৃষ্টান এল। সে দাবি করল যে, অমুক বাগান খলীফা তার কাছ থেকে ছিনতাই করে নিয়ে নিয়েছে। আমি তখন খলীফাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল-এটা সে খলীফা মনসুরের উত্তারাধিকার হিসেবে পেয়েছে।
তখন আমি খৃষ্টান লোকটিকে বললাম-তোমার কাছে এ ব্যাপারে কোন সাক্ষ্য আছে? সে বলল- নেই। সাক্ষ্যতো নেই, তবে আপনি খলীফা থেকে কসম তলব করুন। তখন খলীফা কসম খেল। তারপর খৃষ্টান লোকটি চলে গেল। এখন আমার ভয় লাগছে যে, আমি কেন তখন লোকটিকে খলীফার সাথে বসিয়ে মুকাদ্দিমাটি শুনিনি?] একথা বলে আবু ইউসুফ রহঃ কাঁদতে শুরু দেন। {মানাকেবে জাহাবী-৪৩}
হযরত কাজী সাহেব অসুস্থ্য ছিলেন। তখন ওলীয়ে কামেল হযরত খাজা মারুফ কারখী রহঃ হযরত আব্দুর রহমান বিন কাউয়াস রহঃ এর কাছে বললেন-‘কাজী সাহেব মৃত্যুবরণ করলে আমাকে খবর দিও’।
আব্দুর রহমান সাহেব বলেন-‘আমি একদা বাহিরে বের হলাম। কাজী সাহেবের ঘরের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি কাজী সাহেবের জানাযা বিলকুল তৈরী। আমি ভাবলাম-এখন যদি খাজা মারুফ কারখী সাহেবকে খবর দিতে যাই, তাহলে আমি নিজেই জানাযা পাবো না। এ কারণে আমি জানাযা পড়লাম। তারপর এসে হযারত মারুফ কারখী রহঃ কে বিষয়টি জানাই। একথা শুনে কারখী রহঃ খুব আফসোস করলেন। সাথে সাথে হযরত মারুফ কারখী রহঃ বলতে লাগলেন যে, ‘আমি আজ রাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম। দেখি আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি। সেখানে এক শানদার ভবন। আমি তখন একজনকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই! এ ভবন কার? বলা হল যে, এটা ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর ভবন। আমি বললাম-এ মর্যাদা তার কিভাবে অর্জিত হল? জবাব দেয়া হল- তিনি মানুষদের অনেক ইলম শিখিয়েছেন, আর লোকেরা তার উপর অনেক ভিত্তিহীন মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে’। {মানাকেবে জাহাবী-৪৪}
ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর মৃত্যুর পর সে সময়ে মুহাদ্দেসে আজম ওলীয়ে কামেল স্বপ্নে মুহাম্মদ রঃ কে দেখে জিজ্ঞেস করেন-‘মুহাম্মদ! তোমার কি অবস্থা?’।
জবাবে তিনি বলেন-‘আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন যে, আমি তোমাকে ইলমের ভান্ডার দিয়েছিলাম, তাই তোমাকে কোন শাস্তি দিব না। তুমি জান্নাতে যাও। আমি এখন জান্নাতে এক শানদার ভবনে আছি’।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম-‘কাজী আবু ইউসুফ রহঃ কোথায়?’
তিনি বললেন-‘তিনি আমার থেকেও উঁচু ভবনে অবস্থান করছেন’।
আমি বললাম-‘ইমাম আবু হানীফা রহঃ কোথায়?’
তিনি বললেন-‘তিনিতো আরো অনেক স্তর উঁচুতে অবস্থান করছেন’।” {বাগদাদী-২/১৮২}
আমি [মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ] লোকটিকে [কথিত আহলে হাদীস] বললাম-“যেসব লোকেরা কয়েক শতাব্দী থেকে জান্নাতে অবস্থান করছেন, তাদের আপনারা এখনো মাফ করতে পারছেন না?”
লোকটি বলতে লাগল-“কাজী সাহেব একটি হিলা বাতলিয়েছেন। সেটা হল-বাদির অর্ধেক বিক্রয় করে দাও, আর অর্ধেক দান করে দাও। এ ঘটনাতো খতীব বাগদাদী সনদসহ লিখেছেন”।
আমি বললাম-“খতীব বাগদাদী ১৪ নং খন্ডে এটা লিখেছেন, অথচ ৩ নং খন্ডে এ সনদের বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন আবী আযহারের ব্যাপারে নিজেই বলেন-‘كان كذابا قبيح الكذب ظاهره অর্থাৎ ‘সে ছিল মিথ্যুক, সে সরাসরি ডাহা মিথ্যা কথা বলতো’।
শুধু তাই নয়, এ সনদে হাম্মাদ বিন ইসহাক মুসিলীও আছে। এ দুই বাপ বেটা সে সময়ের প্রসিদ্ধ গায়ক ছিল।
এসব মিথ্যুক ও গায়কদের সাক্ষ্য দিয়ে এমন পৃথিবী বিখ্যাত মহান ইমামদের উপর অপবাদ লাগানো যায়?”
লোকটি বলতে লাগল-“সম্ভবত এ ঘটনাটি কিছু শাফেয়ীরা এজন্য নকল করেছে, যেহেতু ইমাম শাফেয়ী রহঃ একবার ইরাকে গিয়ে বাদশাহ হারুন রশীদের দরবারে উপস্থিত হলেন। আবু ইউসুফ বাদশাহের সামনে ইমাম শাফেয়ীকে অপমান করতে চাইলেন। তখন হারুন রশীদ ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আবু ইউসুফ এর মাঝে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বিতর্কে ইমাম আবু ইউসুফ সুচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে।
এটা কত বড় নীচতা যে, ইমাম আবু ইউসুফ শুধুমাত্র হিংসা করে ইমাম শাফেয়ী রহঃ কে অপমান করতে চাইলেন। অথচ ইমাম শাফেয়ীও তো একজন আলেম। তাই তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করাই ছিল যথার্থ।
এ ঘটনাতো সনদসহ বর্ণিত আছে”।
আমি তাকে বললাম-“এ ঘটনার সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম হল-‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল বালয়ী’। যার ব্যাপাওে ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-‘লোকটি মিথ্যা হাদীস বানাতো’। {মিযানুল ই’তিদাল-২/৪৯১}
যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করে সে কাজী সাহেবের উপর মিথ্যারোপ করতে কেন কার্পণ্য করবে?
তাছাড়াও এ সনদে আরেকজন রাবীর নাম হল-‘আহমাদ বিন মুসা আন নাজ্জার’ যার ব্যাপারে মিযানুল ই’তিদালে আল্লামা যাহাবী রহঃ মন্তব্য করছেন যে,‘লোকটি বন্য পশুর মত’। মিযানুল ই’তিদাল-১/১৫৯}
এরকম মিথ্যুকদের বর্ণনা দিয়ে আপনি এত বড় ফক্বীহদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করছেন? এছাড়া এ ঘটনাটি মিথ্যা হওয়ার সবচে’ বড় ঐতিহাসিক দলিল হল এই যে, হযরত ইমাম শাফেয়ী রহঃ ১৮৪ হিজরীতে ইরাক গিয়েছিলেন। এরও দু’ বছর আগেই কাজী আবু ইউসুফ রহঃ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কি মৃত্যুর দু’ বছর পর কবর থেকে উঠে এসে ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর সাথে বিতর্ক করেছিলেন? আপনাদের দেখে বড় আশ্চর্য লাগে যে, অস্বিকার করতে চাইলে বুখারীর হাদীস “কুরবে নাওয়াফেল” এবং মুসলিমের হাদীস اذا قرأ فانصتوا ও অস্বিকার করে দেন। আর যখন মানতে ইচ্ছে হয়, তখন এরকম মিথ্যা গাল-গল্পকে আসমানী অহীর চেয়েও মর্যাদা দিয়ে দেন। বড়ই সেলুকাস আপনাদের মানসিকতা!”
এবার লোকটি বলতে লাগল-“ইসলামী রাষ্ট্রের উপর আপনাদেও খুব গর্ব! তাইনা? জানেন কি তাদের শাসনামলে সাড়ে ৫ শত বৎসর যাবত হারামে মক্কায় ৪ জায়নামায থাকতো। আল্লাহর রহমত! এখন জায়নামায একটি”।
আমি বললাম-“যখন ৪ জায়নামায ছিল, তখনো হারামে মক্কা তোমাদের কিছু ছিল না, এখন একটি, তবুও তোমাদের কোন অংশ নেই। তবে এর দ্বারা একটি বিষয় জানা যায়, সেটি হল-আহলে সুন্নাতের মাযহাব হল ৪টি। আপনারা আহলে সুন্নাতের মাঝে কখনোই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না”।
কল্পিত বাহাস
সে [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল-“বাদশাহ হারুন রশীদ মক্কায় মুকাররমায় ইমাম শাফেয়ী রহঃ ও ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মাঝে একটি বাহাস করিয়েছিলেন। সেখানে বিচারক ছিলেন ইমাম মালিক রহঃ।
বাহাসে আজান, সা’ এবং ওয়াক্বফ ছিল আলোচ্য বিষয়। যাতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ চরমভাবে পরাজয় বরণ করে, যার ফলে বাদশাহ হারুন রশীদ তখন থেকে ইমাম আবু হানীফার এ তিন মাসআলা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণা শুনতেই সাধারণ মানুষের মাঝে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। একি বলছে বাদশাহ? তাক্বলীদ ছেড়ে দিচ্ছে? ইমাম আবু হানীফার মাযহাব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? {তরীকে মুহাম্মদী-১১৮}
আমি তাকে বললাম- “এ ঘটনাটি ইমাম ইবনুল জুআইনী সনদহীন উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে লিখেছেন যে, এ ঘটনাটি ঘটেছে ১৮৪ হিজরীতে।
যদি তাই হয়ে থাকে। তাহলে বাহাসের চার জন ব্যক্তিত্বের দিকে একটু নজর দিন।
হারুন রশীদ ১৭০ হিজরীতে খলীফা হন। আর ১৯৩ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আর ইমাম মালিক রহঃ যাকে এ বিতর্কের বিচারক বলা হয়েছে, তিনি এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের ৫ বছর আগে ১৭৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
আর ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বিতর্ক অনুষ্ঠানের দু’ বছর আগে ১৮২ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আর ইমাম শাফেয়ী রহঃ ১৮৪ হিজরীতে ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর কাছে ইরাকে পড়তে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন ছাত্র। তখনো তার ইলমী প্রসিদ্ধী শুরু হয়নি। তিনি ১৯৫ হিজরীতে সর্ব প্রথম ইজতিহাদ শুরু করেন। প্রায় ৬ বছর পর্যন্ত পুরাতন মাযহাবের উপরই ফাতওয়া দিতেন।
তারপর মিশর গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি নতুন মাযহাবের সংকলন শুরু করেন। তারপর ২০৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
এ বাহাসটি যে, বাতিল ও মিথ্যাচার এর আরো প্রমাণ হল- এ বাহাসের বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ রাসূল সাঃ এর মুয়াজ্জিন ছিলেন। যার কোন প্রমাণ হাদীসের কিতাবে নেই। এ বাহাসের বর্ণনায় আরো আছে যে, হযরত বেলাল রাঃ এর নাতি নাকি বলেছেন যে, হযরত বেলাল রাঃ এ আজানে তারজী ছিল।
ইতিহাসে হযরত বেলাল রাঃ এর কোন নাতির কথা উল্লেখ নেই। নেই তার মদীনায় অবস্থানের কোন বর্ণনাও। সেই সাথে এ বক্তব্যটি মুতাওয়াতির হাদীসের বিপরীতও। কারণ মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীসে এসেছে যে, হযরত বেলাল রাঃ আজানে তারজী করতেন না। {শরহু মায়ানিল আসার}
এ উপরোল্লিখত বক্তব্য এ কল্পিত বাহাসের মিথ্যা হওয়ার উপর সুষ্পষ্ট প্রমাণ। হ্যাঁ, যে ফলাফল শেষে বলা হল এর দ্বারা একথাতো বুঝা যায় যে, দ্বিতীয় শতাব্দীতেই হারামাইন শরীফাইনে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর তাক্বলীদ এত পরিমাণ মজবুত হয়ে গিয়েছিল যে, সাধারণ মানুষ কি বাদশাহকেও তাক্বলীদ থেকে বের হওয়া কেউ পছন্দ করতো না। এ কারণে শোরগোল পর্যন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল। যেটাকে বাদশাহ হারুন রশীদও কোন প্রতিবাদ করেননি। করেনি ইমাম মালিক রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহ এবং ইমাম আবু ইউসুফ রহঃও। যার দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, সে সময় তাক্বলীদে শখসী ওয়াজিব হওয়ার উপর ইজমা হয়ে গিয়েছিল। যে লোকেরা এ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালায় যে, “চতুর্থ শতাব্দীতে তাক্বলীদে শখসীর ইজমাতো দূরে থাক এর বিদ্যমানতাই ছিল না”। তাদের এ মিথ্যাচারের জন্য তওবা করা উচিত”।
এবার সে লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল-“আল হামদলিল্লাহ! আমার অনেক ভুলের সঠিক জবাব পেয়ে গেছি। আমি আবার সময় পেলে আপনার কাছে আসব।

বাহাসে কয়েকজন পর্যুদস্ত কথিত আহলে হাদীস


 আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে প্রথমবার সিন্ধু গিয়েছিলাম। বাদ্বীন জেলায় কিরাত খালফাল ইমামের উপর একটি ক্লাস নিলাম। পুরো এলাকায় গায়রে মুকাল্লিদদের মাঝে হৈ চৈ পড়ে গেল। কেননা, এ দলটির খুবই আশ্চর্যজনক মানসকিতা হল-তারা নিজেরা সারা দুনিয়ার সবাইকেতো বে-নামাযী বলে গালি দেয়া নিজের অধিকার মনে করে, কিন্তু অপরপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও ওরা দেয় না। আমি যখন ক্লাসে একথা স্পষ্ট করে দিলাম যে, কেরাত খালফাল ইমামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হানাফীরা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল সাঃ এর উপর আমল করে। এ ব্যাপারে এ অপপ্রচার চালানো যে, “তারা কুরআন ও হাদীসের বিপরীত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথার উপর আমল করে” এটা সম্পূর্ণই মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা খুবই স্পর্ধার কথাও। এটা বলেতো এক দিক থেকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উপর এ অভিযোগ উত্থাপিত হয় যে, তিনি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী রায় দিয়েছেন [নাউজুবিল্লাহ]। সেই সাথে জমহুর মুসলমানদের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ উত্থাপিত হয় যে, তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী কুরআন হাদীস রেখে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথার উপর আমল করছে।
অথচ যেমনিভাবে জামাতে নামায পড়ার সময় মুক্তাদীরা ইমামের পথ প্রদর্শনে ও তার অনুসরণে আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করে, ঠিক একই পদ্ধতিতে মুকাল্লিদ বলা হয়, যারা ইমামের পথ প্রদর্শনে আল্লাহর ইবাদত করে।
যেমনিভাবে একথা বলা খুবই বোকামী যে, “মুক্তাদীরা আল্লাহ তাআলাকে রেখে স্বীয় ইমামকে সেজদা করছে”, তেমনি আহমকী একথা বলা যে, “মুকাল্লিদরা আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ কে রেখে ইমামদের অনুসরণ করছে”।
যেহেতু আমার ক্লাসের দরূন ওদের মিথ্যার মুখোশ খুলে গিয়েছিল, তাই গায়রে মুকাল্লিদরা ছুটে এল। এসেই বলতে লাগল-”আমাদের সাথে বাহাস করতে হবে”।
সে সময় আমার কাছে কোন কিতাব ছিল না। ছিল না কোন পুস্তিকাও।
অবশেষে আমি তাদের বললাম- আপনাদের পক্ষ থেকে বিতার্কিক কে হবে?
তারা বলল-“শাইখুল আরব ওয়াল আজম ইমামুল মুনাজিরীন, সাইয়্যিদ পীর বাদিউদ দ্বীন শাহ রাশেদী পীর ঝান্ডা সাহেব। তাকে আরব ও আজমের আলেমরা ভয় পায়”।
আমি মনে মনে ভাবলাম-‘যদি সিন্ধের প্রথম বিতর্কটি পীর সাহেবের সাথে হয়ে যায়, তাহলে এটি প্রথম বাহাসও হবে আবার শেষ বাহাসও। কারণ সিন্ধবাসীর নিজেদের শাইখুল আরব ওয়াল আজমের দলিলের দুর্বলতা দেখেই বাকিরা বুঝে যাবে। তারপর আর কারো বাহাস করার খাহেশ জাগবে না আশা করি। অবশেষে এক স্থানে বাহাস অনুষ্ঠিত হল। আলোচ্য বিষয় ছিল ৪টি। যথা-
-তাক্বলীদ।
-কেরাত খালফাল ইমাম।
-আমীন।
-রফয়ে ইয়াদাইন।
বাহাস শুরুর আগে বাহাসের শর্ত নিয়ে আলোচনা হল।
পীর সাহেবকে আমি বললাম-“আপনি দলিল দেওয়ার ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের বাহিরে কোন কিছুর দলিল দিতে পারবেন না। কারণ আপনি কুরআন ও হাদীসের বাহির থেকে দলিল দিলে আপনি আহলে রায় তথা যুক্তিপূজারী হয়ে যাবেন। কারণ এক্ষেত্রে আপনি হয়ত নিজের রায় পেশ করবেন, অথবা কোন উম্মতীর রায়ের তাক্বলীদ করবেন। যেটা আহলে হাদীসের ইশতিহারের খেলাফ”।
পীর সাহেব আমাকে বললেন-“আমি প্রতিরোধমূলকভাবে হানাফী ফিক্বহের কিতাব থেকে উদ্ধৃতি পেশ করবো”।
আমি বললাম-“হযরত! আপনিতো শাইখুল আরব ওয়াল আজম। আপনার এতটুকু জ্ঞান থাকা উচিত যে, মুনাজারা তথা বাহাসের উদ্দেশ্য হল ‘সত্য প্রকাশ’, প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করা নয়। প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করাতো বিবাদের আলোচ্য বিষয়। আর বিবাদ করা বাতিলপন্থীদের স্বভাব”।
কিন্তু পীর সাহেব স্বীয় বক্তব্যে কঠোর রইলেন।
তখন আমি লিখে দিলাম-“গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক মাসআলা প্রমাণে দলিল শুধুমাত্র কুরআন হাদীস পেশ করবে। হ্যাঁ, সরাসরি দলিল পেশ না করতে পারলে ফিক্বহে হানাফীর মামুলবিহী [তথা আমলযোগ্য] ও মুফতা বিহী [ফাতওয়া যে মতের উপর] বক্তব্য পেশ করতে পারবেন। সেই সাথে আমারো এ অধিকার আছে যে, আমি গায়রে মুকাল্লিদদের ইবারত ইলজামী তথা প্রতিরোধমূলক হিসেবে পেশ করতে পারবো, চাই সে যেই প্রকারের গায়রে মুকাল্লিদই হোক না কেন। অর্থাৎ ইমাম সাহেবের তাক্বলীদ ছেড়ে দিয়ে সে কাদিয়ানী হয়ে যাক, বা মুনকিরীনে হাদীস হয়ে যাক, বা মুনকিরীনে ফিক্বহ হয়ে যাক। আমি এসকলের বক্তব্যই প্রতিরোধমূলকভাবে উপস্থাপন করার অধিকার রাখি”।
পীর সাহেব খুব শোরগোল শুরু করে দিলেন- “মুফতা বিহী ও মামুলবিহী শব্দ কর্তন করে দাও”।
আমি বললাম-“তাহলে আপনি হাদীসের সাথে যে সহীহ শব্দ লিখেছেন সেটা কেটে দিন, তাহলে আমিও মাসআলার আগের মুফতাবিহী ও মামুলবিহী শব্দ কেটে দিব”।
পীর সাহেব বললেন-“সহীহ শব্দ আমি কেন কাটবো”?
আমি তাকে বললাম-“তাহলে আমি মুফতাবিহী শব্দ কেন কাটবো?”
এ সময় কয়েকজন প্রফেসর দাঁড়িয়ে বলতে লাগল-সহীহ এর অর্থতো আমরা বুঝি, কিন্তু মুফতাবিহী অর্থ আমরা বুঝি না। আপনি এর সঠিক অর্থটি আমাদের বলুন, তাহলে আমরা বুঝতে পারবো, আপনি অযথাই জেদ করছেন? না আমাদের পীর সাহেব অহেতুক জেদ করছেন?
আমি বললাম- “ফাতা” শক্তিশালী যুবককে বলে। পীর সাহেব বলছেন বাহাসে ফিক্বহের ইবারত পেশ করবেন। আমি তাকে বললাম-‘আপনি ফিক্বহের মজবুত এবং পরিপক্ক ইবারত পেশ করবেন, যার উপর হানাফীদের সকল স্থানে আমল আছে’।
কিন্তু তিনি বলেন- না, তিনি ফিক্বহের দুর্বল দলিল এবং অপরিপক্ক দলিল পেশ করবেন, যার উপর হানাফীদের আমল নেই।
আমার কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা পীর সাহেবকে বলতে লাগল- “আপনার দাবিটি খুবই অযৌক্তিক ও অন্যায়। আপনি কেন বর্জিত ও অপরিপক্ক বক্তব্য পেশ করবেন? আপনার মজবুত ও আমলকৃত বিষয়ের দলিল দিতে হবে”।
এবার পীর সাহেব একদম চুপ হয়ে গেল। তারপর একের পর তিনটি মাসায়েলের উপর মুনাজারা হল। তথা- তাক্বলীদ, কিরাত খালফাল ইমাম ও আমীন।
প্রতিটি মাসআলার জন্য দুই ঘন্টা ছিল নির্ধারিত। এ বাহাসের প্রতিক্রিয়া এতটাই হল যে, পীর সাহেব মৃত্যু পর্যন্ত আর কোন বাহাস/মুনাজারা করবেন না বলে তওবা করে ফেলেন। পড়ি কি মরি হালাত হয়ে গেল। এর পর থেকে বাহাসের নাম শুনলেই তার পায়জামা গরম হয়ে যেত।
আরো দু’বছর পর। লারক্বানা নামক স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন এর উপর মুনাজারা ছিল। সকল গায়রে মুকাল্লিদ ওলামাদের আকাংখা ছিল যে, পীর সাহেব মুনাজারার জন্য আসবেন। কিন্তু তিনি পরিস্কারভাবে না করে দিলেন। তখন পীর বদরুদ্দীন সাহেবের বড় ভাই পীর মুহিব্বুল্লাহ শাহ সাহেব আসলেন। কিন্তু তারও মুনাজারা করার মত সাহস ছিল না। তাই তিনি মাসউদী ফিরক্বার আল্লাহ বখশকে বাহাস করার জন্য সাথে নিয়ে আসেন। যে আল্লাহ বখশকে খোদ আহলে হাদীসরাই অমুসলিম ও ফিরক্বাবাজ বলে অভিহিত করেছে।
আমার তাদের কাছে একটিই আবেদন ছিল যে, আপনাদের আমল সবার সামনে। আপনারা চার রাকাত নামাযে ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করেন না। আর ১০ স্থানে করেন। এটাই আপনাদের সর্বদার আমল। আর আপনারা বলেও থাকেন যে, যে ব্যক্তি এভাবে নামায পড়ে না, তাদের নামায হয় না। আপনারা শুধুমাত্র একটি, শুধু একটি, একমাত্র একটি সহীহ হাদীস পেশ করুন, যাতে এ ৪টি কথাই সুষ্পষ্ট বিদ্যমান আছে যে,
- ১৮ স্থানের রফয়ে ইয়াদাইনের নিষেধাজ্ঞা।
- ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবে।
- সর্বদা করতে হবে এ শব্দ।
- যারা এভাবে রফয়ে ইয়াদাইন করবে না, তাদের নামায হবে না।
যদি দেখাতে পারেন এ ৪ শর্তসহ একটি সহীহ হাদীস, তাহলে শুনে রাখুন- আমার ওজু আছে। এখনি ৪ রাকাত নফল রফয়ে ইয়াদাইনের সাথে পড়বো। সাথে সাথে সারা জীবনভর এ মাসআলার উপর আমল করবো। সেই সাথে এর প্রচারও করবো।
কিন্তু তাদের মাঝে কেউ এমন কোন হাদীস পেশ করতে পারে নি। আল হামদুলিল্লাহ! এ বাহাসের ফলাফল আহলে হক্বের পক্ষেই ছিল।
এ বাহাসের পর পীর মুহিব্বুল্লাহ শাহ সাহেবও বাহাস করা থেকে তওবা করে নিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত আর বাহাসের খাহেশ জাহির করেন নি।
বেশ কিছু দিন পর গায়রে মুকাল্লিদদের মাঝে পাগলামীর শখ উথলে উঠল।
লাড়কানায় ডাক্তার খালিদ মাহমুদ সুমরো সাহেব এবং মুশতাক আহমাদ সাহেব জুতওয়ী সাহেবের সাথে মুনাজারা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলে। কিন্তু পীর বদিউদ্দীন সাহেব মুনাজারা করতে অস্বিকৃতি জানান। সে বেচারা বহুত স্থানে দৌড়-ঝাপ দেয়, কিন্তু কেউ মুনাজারা করতে রাজী হয় না। অবশেষ লোকটি সিন্ধুর ব্যাপারে হতাশ হয়ে পাঞ্জাবের দিকে মুখ ফিরায়। পাঞ্জাবের তালেব জায়েদীকে মুনাজারার জন্য রাজী করায়।
তালেব জায়েদী এবং পীর বদিউদ্দীন একে অপরকে আহলে হাদীস বলে ডাকে। অথচ তাদের মাঝে না মিলে পারস্পরিক নামায, না হালাল-হারামের মাসআলা।
পীর সাহেব রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়েও সীনার উপর হাত বাঁধে। অথচ তালেব জায়েদী রুকু থেকে উঠে সীনার উপর হাত বাঁধাকে ভুল বলে।
পীর সাহেব তাবীজ লেখাকে শিরক, এবং তাবীজের মাধ্যমে পারশ্রমিক নেয়াও হারাম বলেন। এ ব্যাপারে পীর সাহেবে একটি পুস্তিকাও আছে। অথচ তালেব জায়েদী তাবীজ-কবচ জায়েজ হওয়ার উপর পুস্তিকা লিখেছেন।
তালেব জায়েদীর সাথে প্রথমবার হারুনবাদে মুনাজারা হয়। সেখানে সে বলেছিল- আহলে হাদীসরা যে নামায পড়ে, তার পূর্ণাঙ্গ হুকুম এবং তারতীব তথা ধারাবাহিকতা সহীহ, সরীহ ও গায়রে মাজরূহ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত করে দিব।
কিন্তু সেখানেই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত “মুনাজারায়ে হারুনাবাদ” নামে পূর্ণ বাহাসটি প্রকাশ করে।
মুনাজারায় সে স্বীয় নামাযের উপর উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব হাদীসের দ্বারা দিতে পারে নি।
কিতাব ছাপার পর কয়েক স্থান থেকে তার সাথি সঙ্গীরা তার কাছে সে কিতাব পাঠিয়ে বলে-“তুমি নিজের নামায প্রমাণ না করতে পেরে সকল আহলে হাদীসদের নাক কেটেছে। তাই তোমাকেই এর জবাব লিখে প্রকাশ করতে হবে। যেন আমরা এর বিশ্বব্যাপী বদনাম থেকে মুক্ত হতে পারি।
কিন্তু তালেব জায়েদী আজ পর্যন্ত এর জবাব লিখে প্রকাশ করতে পারেনি।
সেই মুনাজারা দ্বারা সে এতটাই ভীত হয়ে যায় যে, বেদআতিদের সংস্বর্গ গ্রহণ করে ফেলে। আর বেদআতিরা আহলে সুন্নাতের উপর যেসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে সেসবকে একত্রিত করে কাউকে দিয়ে আরবী অনুবাদ করিয়ে আরবে তা প্রকাশ করে। সে পুস্তিকাটির নাম সে “আদ দেওবন্দিয়া” রাখে। সেখানকার সালাফী নামধারীরা এ বইটিকে খুব ছড়িয়ে দেয়।
“আনসারুস সুন্নাহ” এবং “সালাফী” নামধারীরা এটা প্রচার-প্রসারে খুবই অগ্রগামী ছিল।
কিন্তু সৌদি আরবের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এসবের বিরুদ্ধে একটি সেমিনার আয়োজন করেন। রোজনামা উর্দু নিউজ জেদ্দাহ ১৮ ই ডিসেম্বও ১৯৯৫ ঈসাব্দে সে সেমিনারের কার্যক্রম প্রকাশ করে।
“রিয়াদ নিউজ ডেস্ক- সৌদি আরবের অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ‘আনসরুস সুন্নাহ ও সালাফীদেও অপপ্রচারের ব্যাপারে সতর্ক করেন। কেননা, ওরা এ উম্মতে মুসিলমার আক্বায়েদ ও ফিকর এবং আমলের মাঝে ভুল প্রচারণা করছে। মাকামী আরবী রোজনামা অনুযায়ী রিয়াদের প্রসিদ্ধ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা বলেন- বাহ্যিকভাবে ইসলামী নামধারী এসব ফিরক্বা দ্বারা মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি হচ্ছে। শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল জাবিরাইন, শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল আজীজ, শায়েখ আব্দুল আজীজ আব্দুল্লাহ প্রমূখরা জোরালো কণ্ঠে বলেন-‘ইসলামের অনুসারীরা স্বীয় আক্বায়েদ ও স্বীয় জামাআতের পাবন্দ থাকবে, এটাতেই তাদের কল্যাণ ও সফলতা’। শায়েখ জাবিরাইন উল্লেখিত দলসমূহের প্রধানদের বলেন-‘আপনারা এমন ধরণের নাম রাখা থেকে বিরত থাকুন! কেননা, এতে অকারণ ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় যে, এ দলটিই কুরআন ও সুন্নাহ, তাওহীদ ও দাওয়াতের পতাকাবাহী’। ”
এটা জেদ্দার উর্দু সংবাদের ইবারত। যাতে সৌদি আরবের ওলামায়ে কেরাম “সালাফী” ও “আনসারুস সুন্নাহ” নামের ব্যাপারে শক্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তালেব জায়েদীর ইলমী হালাতের অবস্থা এই যে, সে তার গবেষণা গ্রন্থ “মাসআলায়ে রফয়ে ইয়াদাইন” এ কুরআনের আয়াত হিসেবে লিখে ২২১ নং পৃষ্ঠায়- قوموا الهী كانتين-
১৫৫ নং পৃষ্ঠায় লিখে- يا ليت قومى يعقلون ।
এছাড়া ইবনুল হুমামের নাম লিখে ইবনে হামাম [দ্রষ্টব্য-৪১]।
আবু বকর বিন জাসসাসের নাম লিখে আবু বকর হাস সাসাস। [দ্রষ্টব্য-২৩২]।
ইমাম সুফিয়ান সাওরীর নাম লিখে ইমাম সাফওয়ান [দ্রষ্টব্য-১৮১]।
আরেক স্থানে হুমামকে লিখে হামামা [দ্রষ্টব্য-২১৩]
ফাতহুল মুগীসের লেখকের নাম আল্লামা আদানী লিখেছে [দ্রষ্টব্য-২৪৩]
এমন দেড় ব্যাটারী মুনাজির কী ঘোড়ার ডিম মুনাজারা করবে?
শর্তাবলী
যখন আমি তার কাছে লিখিতভাবে পাঠালাম যে, আপনার কাছে দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। তাই আপনার উপর আবশ্যক হল, স্বীয় দাবির প্রতি খেয়াল রাখা। কুরআন ও হাদীস ছাড়া কোন কথা বলতে পারবেন না। যে সময়ই আপনি কোন উম্মতে মুহাম্মদীর বক্তব্য পেশ করবেন আপনাকে মুনাজারা করতে বাঁধা দেয়া হবে। কারণ, আপনি তাহলে আর আহলে হাদীস বাকি থাকবেন না। বরং আহলে রায় হয়ে যাবেন। যেহেতু আল্লাহ ও রাসূল কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেন নি, তাই আপনারও কোন হাদীসকে না সহীহ বলার অধিকার আছে, না দুর্বল বলার। যদি আপনি স্বীয় রায় দিয়ে বা কোন উম্মতে মুহাম্মদীর বক্তব্যের আলোকে কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেন, তাহলে আপনি আহলে রায় তথা যুক্তিপূজারী বলে সাব্যস্ত হবেন।
এ লেখার উপর তালেব জায়েদী এতটাই ক্ষিপ্ত হয় যে, সে লিখে পাঠায় যে, “এটা বকোয়াজী!”
এবার একটু ভাবুন! কুরআন ও হাদীসের পাবন্দীকে সে বকোয়াজ বলে কুরআন ও হাদীসের কতটা অপমান করেছে! আর “কুরআন ও হাদীসকে নিজেদের স্বীকৃত মূলনীতির আলোকে প্রমাণ করা” কে বকোয়াজ বলে দলিল বিকৃতি এবং মুনাজারা থেকে ভাগতে মনস্ত করেছে।
হ্যাঁ, আমাদের কাছে দলিল ২টি নয়। ৪টি। যদিও আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেন নি, কিন্তু চার ইমাম রহঃ যদি কোন হাদীসকে গ্রহণ করে নেন, তাহলে উক্ত হাদীসটি ইজমার ভিত্তিতে আমাদের কাছে সহীহ হয়ে যায়। যেমন রুকুতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লি উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হয়, এ মর্মে হাদীসটি চার ইমামই গ্রহণ করেছেন। তাই এ হাদীসটি আমাদের কাছে সহীহ। আর যদি কোন হাদীসকে চার ইমামই ছেড়ে দেন, তাহলে সে হাদীসটি ইজমার ভিত্তিতে বর্জনীয় ও ত্র“টিযুক্ত হওয়ার দলিল হয়ে যায়।
যেমন এক হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ ফজর নামায শেষে বলেছেন-”যখন আমি জোরে কেরাত পড়ি, তখন তোমরা আমার পিছনে কিছু পড়ো না ফাতিহা ছাড়া। কেননা, এছাড়া নামায হয় না”।
এ হাদীসটি চার ইমামই ছেড়ে দিয়েছেন। কেননা, কোন ইমামই একথা বলেন নি যে, যদি জোরে কেরাত পড়া নামাযে মুক্তাদী ইমামের পিছনে কেরাত না পড়লে তার নামায হয় না।
এমনিভাবে দুই রাকাত পড়ে তৃতীয় রাকাতের শুরুতেই রফয়ে ইয়াদাইন করার হাদীসটি চার ইমামই ঐক্যমত্বের সাথে ছেড়ে দিয়েছেন।
এমনিভাবে তিরমিযী শরীফ ও শরহে মুসলি লিন নাববী দ্বারা জানা যায় যে, সীনার উপর হাত বাঁধার হাদীসকে চার ইমামই ছেড়ে দিয়েছেন। কোন ইমামই গ্রহণ করেন নি তা।
এরকম হাদীস আ্মাদের নিকট সর্বসম্মত মতে বর্জনীয়। হ্যাঁ, যেসব হাদীসে চার ইমামের মাঝে মতভেদ হয়ে গেছে, তাহলে এক্ষেত্রে যে হাদীসের পক্ষে আমাদের মুফতাবিহী তথা ফাতওয়া হবে সেটাকে আমরা সহীহ বলবো। কেননা, আমাদের নিকট মুজতাহিদের দলিল দেয়াটাই হাদীস সহীহ হওয়ার দলিল।
অবশেষে তালেব জায়েদী স্বীয় দাবি থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিল, আর আমি আলহামদুলিল্লাহ স্বীয় দাবিতে অটল রইলাম।
আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ
দিন-রাত এসব লোকেরা বলে থাকে যে, হানাফীদের সকল নামায বাতিল। আর তাদের সকল নামায হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এ কারণে তাদের উপর আবশ্যক ছিল যে, তাদের পূর্ণাঙ্গ নামায হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাবে। কিন্তু এটা তাদের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
আপনার একবার ভেবে দেখুন! যদি তারা নামাযের তিনটি মাসআলা হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখায়, তাহলেও নামাযের কমপক্ষে ২০টি মাসআলা কিছুতেই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাহলে এ নামাযকে কি করে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায বলা যায়?!
তাছাড়া একথাও কোন হাদীসে নেই যে, “এই ৩ মাসআলা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলে পূর্ণ নামাযকেই হাদীসওয়ালা নামায বলে আখ্যায়িত করা হবে”।
সে ৩ মাসআলাও শুধুমাত্র নিজের রায় দ্বারাই নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলে কী দাঁড়াল? ওরা আহলে হাদীস কখনো ছিলই না।
তাদের আমল
তাদের বলা হল- আপনার প্রতিটি মাসআলায় আপনাদের পূর্ণাঙ্গ আমল লিখে পাঠিয়ে দিন। কেননা, দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। আর আল্লাহর কাছেও পূর্ণাঙ্গ আমলের হিসাব দিতে হবে। তাই পূর্ণাঙ্গ আমলের প্রমাণও থাকা চাই।
কিন্তু তালেব জায়েদী বিষের পাত্র পান করেতো আত্মহত্যাতো করতে পারবে, কিন্তু নিজেদের পূর্ণাঙ্গ আমল লিখে তারপর তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত করে দেখানো তাদের সামর্থের বাইরে।
অবশেষে আমিই পূর্ণাঙ্গ আমল লিখে পাঠালাম।
কেরাত খালফাল ইমাম বা ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরাত পড়া প্রসঙ্গে

“গায়রে মুকাল্লিদরা [জেহরী তথা জোরে কেরাত পড়া নামাযে] নামাযের মাঝে ইমামের পিছনে ১১৩ সূরা কখনোই পড়ে না। এসব পড়াকে তারা নিষিদ্ধ ও হারাম বলে থাকে।
আরো বলে থাকে যে, “যেমন সকল জামাতের জন্য এক আজান, এক ইকামত ও একটি সুতরাই যথেষ্ঠ। তেমনি এক সূরা সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ। কিন্তু সূরা ফাতিহা ইমামের পড়ার দ্বারা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ঠ হবে না। প্রতিটি মুক্তাদী নিজেই তা পড়া আবশ্যক। নতুবা মুক্তাদীদের নামায বাতিল ও বেকার হয়ে যাবে। আর [সিররী তথা কেরাত আস্তে পড়া নামায] নামাযের মাঝে মুক্তাদীদের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ। আর সূরা মিলানো মুস্তাহাব”।
এসব মাসআলা গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক প্রথমে কুরআন পাক দ্বারা প্রমাণ করবে। যদি না করতে পারে, তাহলে লিখে দিবে যে, “এ মাসআলায় কুরআনে পাক আমাদের মাথায় হাত রাখতে তৈরী নয়”।
দ্বিতীয় নাম্বার, এ পূর্ণাঙ্গ মাসআলাটিই এমন কিতাব দ্বারা প্রমাণিত করবে, যার সংকলক না মুজতাহিদ না মুকাল্লিদ। বরং গায়রে মুকাল্লিদ। সেই সাথে উক্ত হাদীসটি সহীহ হওয়াটিও দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। স্মর্তব্য- গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। কোন উম্মতীর বক্তব্য উপস্থাপন করার সাথে সাথেই তাকে বিতর্ক থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে”।
তালেব জায়েদী সাহেব লিখিতভাবে একথা স্বীকার করে নিল যে, তারা এ মাসআলা কুরআন দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে না। আর হাদীসের দলিল দিয়ে সহীহ সাব্যস্ত করা ও গায়রে মুকাল্লিদের কিতাব দিয়ে দলিল দেয়াটা বকোয়াজ।
যেন একথাই স্বীকার কওে নিল যে, “তারা স্বীয় মূলনীতি অনুযায়ী না হাদীসকে সহীহ সাব্যস্ত করবে, না সে হাদীসটি কোন গায়রে মুকাল্লিদের কিতাব থেকে দেখানোর পাবন্দি করবে”।
তারপর আমি তাকে লিখে পাঠালাম যে, আপনিতো মেনেই নিলেন যে, আপনি এ মাসআলাকে কুরআন দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ মাসআলা আল হামদুলিল্লাহ! কুরআন দ্বারা প্রমাণিত করে দেখাতে পারবো। আর সে আয়াতের তাফসীর রাসূল সাঃ, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীগণ, এবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত করে দেখাতে পারবো।
কিন্তু লোকটি মুখে মুখে আমাদের কুরআনী দলিল শুনতে অস্বিকৃতি জানালো। আর সাধারণ মুসলমানদের ধোকা দেওয়ার জন্য লিখে পাঠালো যে, “ফাতিহা ছাড়া কারো নামাযই হয় না। না ইমামের, না মুক্তাদীর, না মুনফারিদের”।
অথচ আলোচনা চলছে “ইমামের কিরাত তথা সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানো সকলের পক্ষ থেকে হয়ে যায়”।
যখন ইমামের সূরা পড়া সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ফাতেহা ও যথেষ্ট হয়ে যায়।
তার এটা লিখা দরকার ছিল যে, ইমামের সূরা পড়াতো সকলের পক্ষ থেকে হয়ে যায়, কিন্তু সূরা ফাতিহা সবার পক্ষ থেকে হয় না।
তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- “এখানে এটাও অস্পষ্ট যে, জোহরের নামাযে একটি ফাতিহাই কি ৪ রাকাত পূর্ণ নামাযের জন্য যথেষ্ট? নাকি সকল রাকাতেই ফাতিহা পড়া ফরজ?
আমি বললাম- তাহলেতো لا صلاة الا بفاتحة الكتاب হাদীস দিয়েতো কাজ হবে না, لا ركعة الا بفاحة الكتاب শব্দে হাদীস দেখাতে হবে।
আমি বললাম-যখন তোমরা এসব বলেই থাকো, তাহলে লিখেও দাওনা!
কিন্তু সে লিখতে সম্পূর্ণ অস্বিকৃতি জানালো।

কথিত আহলে হাদীসদের রাসূল সাঃ ও মদীনাবাসীর বিরোধীতার দলিল


নবীজী সাঃ এর বিরোধিতা
লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] জোশের সাথে বলতে লাগল- “আপনারা নবীজী সাঃ এর কালিমা পড়েন, কিন্তু তার কথা মানেন না। বরং তার উল্টো ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা মানেন”।
আমি তাকে বললাম-“একথাটিই আপনাদের বড় ভাই কথিত আহলে কুরআনরা আপনাদের ব্যাপারে বলে থাকে যে, ‘এ লোকেরা দাবী করে যে, তাদের খালেক তথা স্রষ্টা আল্লাহ, আর তারা হল তাঁরই বান্দা। অথচ খালিক আল্লাহর বিপরীত মাখলুক রাসূল সাঃ এর কথা মানে। কুরআনের বিরোধিতা আহলে হাদীসদের মূল প্রণোদনা। তারা তালাশ করে করে এমন সব হাদীসের উপর আমল করে যা কুরআন বিরোধী’।
আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে, আপনি আমাদের উসুলে ফিক্বহ তথা ফিক্বহের মূলনীতির কিতাব থেকে একটি সনদসহ রেফারেন্স দেখান,যেখানে লেখা আছে যে, রাসূল সাঃ এর বিপরীত কোন ইমামের কথা মানা যায়। অথবা একটি হানাফী কিতাবের রেফারেন্স দিন, যাতে কোন ইমামে হানাফী একথা লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ এর বক্তব্যতো এটা, কিন্তু আমি রাসূল সাঃ এর বক্তব্যের বিপরীত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বিপরীতমুখী বক্তব্য মানি। একটি রেফারেন্স দিন, অথবা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন”।
লোকটি বলতে লাগল- “দেখুন! রাসূল সাঃ বলেছেন যে, ফাতেহা ছাড়া নামায হয়না, আর তোমরা এ হাদীসকে মান না। ইমাম আবু হানীফার কথা মান”।
আমি তাকে বললাম-“প্রিয় ভ্রাতা! এটাতো আপনার কথা, কোন হানাফী একথা লিখেনি যে, ‘আমরা এ মাসআলায় রাসূল সাঃ এর কথা মানি না, বরং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা মানি’।
আপনি স্বীয় কথার উপর রেফারেন্স দেখান, কোথায় একথা লিখা আছে?
আসল কথা শুনে রাখুন। এ মাসআলায় মূলত হানাফীরা পূর্ণ হাদীস মানে, আর গায়রে মুকাল্লিদরা মানে হল আধা। আর এটা কত বড় জুলুম যে, যে ব্যক্তি পূর্ণ হাদীস মানে তার নাম যুক্তিপূজারী, আর যে অর্ধেক হাদীস মানে তার নাম আহলে হাদীস!
এবার শুনুন! হুজুর সাঃ এর পূর্ণ হাদীস হল- ঐ ব্যক্তির নামায হয় না, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা এবং এছাড়া কুরআনের আর কিছু না পড়ে। দেখুন-
-রাবী উবাদা রাঃ
# সহীহ মুসলিম- -১/১৬৯
# মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-২/৯২
# সুনানে নাসায়ী-১/১৪৫
# সুনানে আবু দাউদ-১/১১৯
-রাবী-আবু হুরায়রা রাঃ
# সুনানে আবু দাউদ-১/১১৮
# হাকেম-১/২৩৯
-রাবী-আবু সাঈদ খুদরী রাঃ
# মুসনাদে আহমাদ-৩/৩
# আবু দাউদ-১/১১৮
-রাবী-ইমরান বিন হুসাইন বিন আদী রাঃ
# আবু দাউদ-১৩০
-রাবী- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ আল আনসারী রাঃ
# নসবুর রায়াহ-১/৩৬৫
- রাবী-আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ
# আল কামেল-৫/২৯
-রাবী-হযরত আয়শা বিন আবু বকর রাঃ
# আল কামেল-৪/৩২
-রাবী- জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ
# মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৬
এ আট সাহাবীতো স্পষ্ট বর্ণনা করেন যে, যে যদি নামাযে সূরা ফাতিহা ও এছাড়া আরো কুরআন না পড়া হয়, তাহলে সে নামায হবে না। আর রাসূল সাঃ সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কিরাত পড়েছেন মর্মে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস রয়েছে।
নামাযে কিরাত সম্পর্কীয় দু’টি অংশ মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এক হল সূরা ফাতিহা পড়া, দ্বিতীয় হল সূরা ফাতিহার পর যেকোন সূরা পড়া, এছাড়া নামায হবে না মর্মে রাসূল সাঃ ঘোষণা দিয়েছেন।
এ কারণে আমরা কিরাতের এ দু’টি অংশকে একই হুকুম হিসেবেই মানি। তাই বলে থাকি যে, নামাযে সূরা ফাতেহা পড়াও ওয়াজিব। সূরা মিলানোও ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াতো ফরজ কিন্তু সূরা মিলানো জরুরী নয়।
এবার বলুনতো- এ মাসআলায় হাদীস কি হানাফীরা অস্বিকার করল না কথিত আহলে হাদীসরা?
রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা যখন একথা প্রমাণিত হল যে, সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোও নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত, তখন আরেকটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল। সেটা হল- এ হাদীসের সাথে মুক্তাদীর কোন সম্পর্কই নেই।
কারণ গায়রে মুকাল্লিদদের নিকটও মুক্তাদীর জন্য সূরায়ে ফাতিহার পর সূরা মিলানো শুধু নাজায়েজই নয় বরং হারাম। তাহলে কথিত আহলে হাদীসরা এ হাদীসে মুক্তাদীদের অন্তর্ভূক্ত করে হাদীসকেই অস্বিকার করল না?
কেননা, যদি এ হাদীসে মুক্তাদীও শামিল হয়, তাহলে তার উপর সূরা মিলানোও আবশ্যক হবে, অথচ গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা সূরা মিলানো মুক্তাদীর জন্য হারাম বলে থাকে। তাহলে কি দাঁড়াল?
একথাই সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস হানাফীরা পরিপূর্ণ মানে, আর কথিত আহলে হাদীসরা অর্ধেক মানে। সেই সাথে একটি মিথ্যা কথাও প্রচার করে যে, তারাই শুধু হাদীস মানে, আর হানাফীরা হাদীস ছেড়ে দিয়ে ইমামের কথা মানে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যা ও ওয়াসওয়াসা থেকে হিফাযত করুন।
মুক্তাদী
সে [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল- আপনারা কেন বলেন যে, মুক্তাদীর নামায ফাতিহা পড়া ছাড়াই হয়ে যাবে?
আমি বললাম- উপরোল্লিখিত ৮টি হাদীসে আপনাদের মতে মুক্তাদীরাও শামিল, তারপরও কেন বলেন যে, মুক্তাদীর নামায সূরা মিলানো ছাড়াই হয়ে যায়?
আমি তাকে আরো বললাম- আপনি আমাদের মাসলাক ভাল করে জানেনই না, শুনুন-যখন ইমাম জুমআর খুতবা পড়ে তখন সকল মুসল্লি চুপ থাকে, কেউ খুতবা পড়ে না। তবু নামায শেষে কেউ মুসল্লিদের একথা বলে না যে, যেহেতু ইমামের সাথে তুমি খুতবা পড়নি, তাই তোমার নামায খুতবাসহ হয়নি, বরং খুতবা ছাড়াই নামায পড়েছে। কারণ এখানে ইমামের খুতবাই মুক্তাদীর খুতবা হিসেবে ধর্তব্য হয়। ইমাম যখন খুতবা পড়ে, তখন সকল মুসল্লিদের পক্ষ থেকে খুতবা পড়া হয়ে যায়।
ঠিক তেমনি আমরা বলে থাকি যে, যখন ইমাম সাহেবে সূরা ফাতিহা এবং সূরা মিলায় তখন সেটা সকল মুক্তাদীদের পক্ষ থেকেই হয়ে যায়।
এ কথা আমরা এ কারণে বলে থাকি যে, যেহেতু রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,
“যখন ইমামের সাথে নামায পড়বে তখন ইমামের কিরাতই মুসল্লিদের কিরাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে”।
-রাবী- জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ
# মুয়াত্তা মুহাম্মদ-৯৫
# মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৭৭
-রাবী-আবু দারদা রাঃ
# সুনানে দারা কুতনী-১/৩৩২
-রাবী-আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ বিন হাদ রাঃ
# মুয়াত্তা মুহাম্মদ- ৯৮
- রাবী- আবু হুরায়রা রাঃ
# কিতাবুল কিরাত
সাহাবায়ে কেরাম এবং অনেক তাবেয়ীগণ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আপনিও একটি হাদীস পেশ করুন যাতে বলা আছে যে, ইমামের কিরাত মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট নয় মর্মে বর্ণিত। সেই সাথে কোন হানাফী কিতাবে একথা লেখা আছে যে, মুক্তাদীর নামায ফাতেহা ও সূরা মিলানো ছাড়া হয়ে যায়। যদি দেখাতে না পারেন, তাহলে মিথ্যা বলা থেকে তওবা করুন।
লোকটি তখন বলতে লাগল- “এসকল হাদীস কি সহীহ?”
আমি বললাম-আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ এসকল হাদীসকে সহীহ বলেন নি, দুর্বলও বলেন নি, আমাদের আইয়িম্মায়ে সালাসা তথা তিন ইমাম একমত হয়ে একে গ্রহণ করে এ অনুপাতে ফাতওয়া দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের তিন ইমামই এ হাদীস সমূহ সহীহ এ ব্যাপারে একমত।
হ্যাঁ, আপনি যদি আল্লাহ তাআলা বা রাসূল সাঃ থেকে এ হাদীস দুর্বল হওয়া প্রমাণিত করতে পারেন তাহলে আমরা আমাদের তিন ইমামের কথা ছেড়ে দিব। কিন্তু আপনি যদি চান যে, আপনার মত অযোগ্য ব্যক্তির কথায় আইয়িম্মায়ে সালাসার তাহকীক ছেড়ে দিয়ে আপনার মত অযোগ্য ব্যক্তির তাকলীদ করে নিব, তাহলে এমন তাকলীদ করতে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
إذا وُسِّدَ الأمرُ إلى غير أهله فانتظر الساعة
অনুবাদ-যখন অযোগ্য লোকেরা নাক গলাতে শুরু করে তখন কেয়ামত লুটে পরে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯}
বর্তমান সময়ে আপনাদের মত অযোগ্য লোকদের দ্বীনের ব্যাপারে নাক গলানোর কারণে দ্বীনে ইসলামের উপর কেয়ামত টুটে পড়ছে।
আল্লাহ তাআলা তার দ্বীনকে হিফাযত করুন।
মক্কা-মদীনাওয়ালা দ্বীন
এবার লোকটি বহুত পেরেশানীতে পরে যায়। কিন্তু আসল আলোচ্য বিষয় থেকে ভেগে অযথা বিষয় উপস্থাপন করা এ কথিত আহলে হাদীস দলের একটি বদগুণ। লোকটি বলতে শুরু করে দিল-“আমাদের দ্বীন মক্কা-মদীনাওয়ালা আর তোমাদের দ্বীন কুফাওয়ালা”।
আমি বললাম- আপনাদের বড় ভাই কথিত আহলে কুরআনও একথাই বলে যে, ‘তাদের দ্বীন হল মক্কা-মদীনাওয়ালা। যেহেতু কুরআনের কিছু সূরা মক্কায় আর কিছু মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ কুরআনের বিপরীত সিহাহ সিত্তার কোন কিতাবই মক্কাবাসী বা মদীনাবাসী লিখেনি’।
আপনাদের বড় ভাই আহলে কুরআনের কথা আপনাদের বিপরীতে অধিক শক্তিশালী বলে মনে হয়।
আমি তাকে আরো বললাম-আপনারাতো মদীনা মনোয়ারায় খাইরুল কুরুনের তাবে তাবেয়ী মুজতাহিদ ইমাম মালিক রহঃ এর লিখা মুয়াত্তা মালিক হাদীসের কিতাবকে সিহাহ সিত্তা থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ কুফাবাসী এ কিতাবের রেওয়াতকে বর্ণনা করে থাকে। দেখুন ইমাম মুহাম্মদ রঃ এর মুয়াত্তা মুহাম্মদ। আশ্চর্য ইনসাফ আপনাদের! যারা মদীনার কিতাবকে বর্ণনা করে তাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা নয়, অথচ যারা মদীনার কিতাবকে পিছনে রেখে দেয়, তারা হয়ে যায় মদীনাওয়ালা?!
মদীনাবাসীর সাথে বিরোধীতা
১-
আপনাদের মতে অযুতে শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ। {আর রওযাতুন নাদিয়্যাহ-১/৩৯}
অথচ ইমামে মদীনা ইমাম মালিক রহঃ বলেন-শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করা জায়েজ নয়। {মুয়াত্তা মালিক-২৩}
শুধু তাই নয়, ইমাম মালিক রহঃ বলেন-যে ব্যক্তি শুধু পাগড়ির উপর মাসাহ করবে তার নামায হবে না। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৬}
এবার দেখুন- মদীনাওয়ালারা আপনাদের অযুও সহীহ মানেন না, মানেন না আপনাদের নামাযও।
২-
ইমাম মালিক রহঃ তায়াম্মুম করার পদ্ধতি এভাবে বর্ণনা করেছেন-
একবার মাটিতে হাত লাগিয়ে চেহারা মাসাহ করবে, তারপর দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত লাগিয়ে উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ করবে। {মুয়াত্তা মালিক-৪২}
কিন্তু আপনারা মদীনাবাসীর মত ছেড়ে দিয়ে বুখারার মত গ্রহণ করেছেন। একথা বলছেন যে, তায়াম্মুমে হাত শুধু কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। {বুখারী-১/৪৮}। আর তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত শুধু একবার লাগাবে। {বুখারী-১/৫০}
৩-
ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাব হল-নামাযে হাত লটকানো হবে। আর আপনাদের মাযহাব হল রাসূল সাঃ সর্বদা হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তারপর ডান হাতের কব্জি দিয়ে বাম হাতের কনুইকে আঁকড়ে ধরে তারপর সীনার উপর রাখতেন।
এ মাযহাবটি না কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না মদীনাবাসীর আমল।
৪-
আপনারা বলে থাকেন যে, যে মুসল্লি জোরে কেরাত পড়া নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়ে, তার নামায হয় না।
অথচ ইমাম মালিক রহঃ বলেন- জোড়ে পড়া কিরাতের নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে না। {মুয়াত্তা মালিক-৬৮}
৫-
ইমাম মালিক রহঃ বলেন-মুক্তাদীরা আমীন বলবে, ইমাম আমীন বলবে না। একাকী নামাযে আমীন আস্তে বলাতে কোন সমস্যা নেই। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/৭১}
অথচ আপনাদের মাসআলা হল-ইমাম এবং মুক্তাদীরা জোরে জোরে আমীন বলবে। {দস্তুরে মুত্তাকী-১১১}
আর গুরাবায়ে আহলে হাদীস জামাতের ইমাম মুফতী আব্দুস সাত্তার বলেন যে, যেই অপরিণাদর্শী ফেতনাবাজ ব্যক্তি জোরে আমীন বলাকারীদের অপছন্দ করে তারা সুনিশ্চিত ইয়াহুদী। {ফাতওয়া আমীন বিল জিহর-৩৪}
৬-
ইমাম মালিক রহঃ এর মাসলাক হল- মহিলারা নামাযে জড়োসরো হয়ে থাকবে, আর নিজের রান ও হাত খোলা রাখবে না। এক কথায় মহিলারা স্বীয় বৈঠক ও সেজদায় খুব মিলমিশ হয়ে জমে থাকবে। {আর রিসালা বহাওয়ালা নসবুল উমুদ-৫০}
অথচ আপনারা বলে থাকেন যে, মহিলা ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। {দস্তুরুল মুত্তাকী-১৫১, সালাতুর রাসূল-১৯০}
তারপরও কোন মুখ নিয়ে বলেন যে, আপনাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা?
৭-
মুয়াত্তা মালিকের ৭ এবং ১৪৯ এর পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি জামাতে এসে রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হয়, সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হয়।
কিন্তু আপনারা বলে থাকেন যে, উক্ত রাকাত গণ্য হবে না। {উরফুল জাদী-২৬, নুজুল আবরার-১/১৩৩}
৮-
মুয়াত্তা মালিকের ১১১ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট যে, ইমাম যদি ফজরের নামায পড়তে থাকে, তাহলে আগত মুসল্লি প্রথমে বেতের পড়তে পারেন।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা আহলে মদীনার এ মাসআলাকে ভুল বলে থাকে। {সালাতুর রাসূল-৩৫১}
৯-
ইমাম মালিক রহঃ বলেন-তাকবীরে তাহরীমার পর রফয়ে ইয়াদাইন করাটা দুর্বল। তিনি আরো বলেন-আমি কোন রফয়ে ইয়াদাইনকারীকে চিনি না। {আল মুদাওয়ানা-১/৭১}
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা বক্তৃতা, লেখনি চ্যালেঞ্জবাজী করে এ মাসআলায় কিরূপ ধুম মাচিয়ে দিয়েছে!
১০-
ইবনুল কাসেম রহঃ বলেন- ইমাম মালিক রহঃ এর নিকট জানাযার প্রথম তাকবীরের পর কোন তাকবীরে হাত উঠানো জায়েজ নয়। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৬}
অথচ আপনাদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ সাহেব বলেন- জানাযার প্রতিটি তাকবীরের সাথে হাত উঠানো মুস্তাহাব। {ফাতওয়ায়ে সানাবিয়্যাহ-২/৫০}
১১-
ইমাম মালিক রহঃ বলেন- জানাযার নামাযে কিরাত [কুরআন পড়া] আমাদের শহর [মদীনা তায়্যিবাহ] এর মাঝে এর কোন আমল নেই। জানাযা কেবলই দুআ। আমি আমার শহরের ইলমওয়ালাদের এর উপরই পেয়েছি। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৪}
অথচ কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, ইমাম অথবা মুক্তাদী জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা না পড়লে নামায বাতিল হয়ে যাবে। {ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে হাদীস-৫/১৮৫}
১২-
নামাযে জানাযা আস্তে আস্তে পড়া হবে এতে ওলামায়ে ইসলামের মাঝে কোন মতভেদ নেই। {শরহে মুসলিম লিন নববী-৩১১, আল মুগনী লি ইবনে কুদামা-২/৪৮৬}
কিন্তু পুরো উম্মতের বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদদেন নিকট জানাযার নামায উঁচু আওয়াজে পড়া সুন্নাত। {ফাতওয়ায়ে সানাবিয়্যাহ-২/৫৬}
১৩-
ইমাম মালিক রহঃ বলেন-আমি জানাযাকে মসজিদে রাখাকে মাকরুহ মনে করি। {আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা-১/১৭৭}
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা বলে থাকে যে, মসজিদে জানাযার নামায পড়া সুন্নাত। আর একে অস্বিকার করা সুন্নাতের বিরোধীতা করা। {বালাগুল মুবীন-৫৫৩ বহাওয়ালা ফাতওয়া সাতারিয়া-১/৩১}
১৪-
ইমাম মালিক রহঃ এক রাকাত বিতরের উল্লেখ করার পর বলেন- আমাদের এখানে এর কোন আমল নেই। বিতর কমপক্ষে তিন রাকাত। {মুয়াত্তা মালিক-১১০}
অথচ কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, তিন রাকাত বিতর পড়া জায়েজ নয়। {উরফুল জাদী-৩৩}
১৫-
ইমাম মালিক রহঃ কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেন যে, ঘোড়া খাওয়া হালাল নয়। {মুয়াত্তা মালিক-৪৯৩}
অথচ কথিত আহলে হাদীসরা কোথাও কোথাও ঘোড়া কুরবানী করে থাকে।
১৬-
ইমাম মালিক রহঃ এর নিকট কুরবানীর দিন হল ৩দিন। {মুয়াত্তা মালিক-৪৯৭}
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা ৪র্থ দিনও কুরবানী করাকে জায়েজ বলে।
১৭-
ইমাম মালিক রহঃ বলেন-আমি রমজানের পর শাওয়ালে ৬ রোজা রাখতে কোন আহলে ইলম আহলে ফিক্বহকে রাখতে দেখেন নি। আর পূর্বসূরীদের কেউ এ রোযা রেখেছেন মর্মে আমার কাছে সংবাদ আসেনি। বরং আহলে ইলম এটাকে মাকরুহ মনে করে। সেই সাথে এটাকে বেদআত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন এ কারণে যে, মুর্খ ও সাধারণ লোকেরা এটাকে রমজান মাসের সাথে মিলিয়ে ফেলবে বলে। {মুয়াত্তা মালিক-২৫৬}
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা ইমাম মালিক রহঃ এর এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে থাকে।
১৮-
ইমাম মালিক রহঃ খেয়ারে মজলিসের হাদীসে লিখে বলেন- وليس لهذا عندنا حد معروف لا امر معمول به فيه (موطا-৬০৫) অর্থাৎ খেয়ারে মজলিসের আমাদের নিকট কোন সীমা নির্দিষ্ট নেই, নেই এর কোন আমলও আমাদের এলাকায়। {মুয়াত্তা মালিক-৬০৫}
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা এ ব্যাপারে বহুত শোরগোল করে থাকে।
১৯-
মুয়াত্তা মালিক ৫১০ থেকে ৫২১ পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, ইমাম মালিক রহঃ এক বাক্যে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হওয়ার পক্ষে মত দেন।
অথচ একথা কথিত আহলে বিলকুল মানে না।
২০-
২০ রাকাত তারাবীহের মাঝে ১৬ রাকাত নফল ইমাম মালিক রহঃ মানেন, অথচ একথা কথিত আহলে হাদীসরা একদম মানে না।
আমি বললাম-মদীনার সাথে না আপনাদের অযু মিলে, না তায়াম্মুম, না জানাযা, হালাল-হারাম এবং বিবাহ-তালাকের মাসআলায় আপনারা তাদের সাথে মতভেদ করেন। তারপর মানুষদের মিথ্যা কথা বলে বেড়ান যে, আপনাদের দ্বীন মদীনাওয়ালা?!
এরকম জঘন্য মিথ্যাচার করার সময় আপনাদের একবারও কি মনে হয় না যে, একদিন আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রতিটি কথার জবাব দিতে হবে। সেখানে না চলবে কোন ক্ষমতা না ধোকাবাজি! এখনো তওবার দরজা খোলা। আল্লাহ তাআলার রহমত গোনাহগারদের ডেকে ডেকে বলে যে, আস! তওবা করে নাও।


জনৈক কথিত আহলে হাদীসের সাথে মুলাকাত ও কথোপথন-১ম পর্ব

 {প্রতিটি লিখাই আলাদা। সুতরাং পূর্বের লেখা পড়া না থাকলেও বুঝতে সমস্যা হবে না।}
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। যিনি দ্বীন বুঝার জন্য আমাদের ফুক্বাহাদের দিকে মনোনিবেশ করার আদেশ দিয়েছেন (সূরা তাওবা-১২২)। আর শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচতে রাসূল সা. এর অনুসরণ করার সাথে উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী মুজতাহিদদের অনুসরনের আদেশ দিয়েছেন,(সূরা নিসা-৮৩)। আর অগণিত সালাম ও দরূদ ঐ রাহমাতাল্লিল আলামীনের উপর, যিনি ফিক্বহকে কল্যাণ ফক্বীহদের কল্যাণী বলে ঘোষণা দিয়েছেন (বুখারী মুসলিম)। আর মুজতাহিদের সঠিকতার উপর দু’টি পূণ্য, আর ভুলের উপর একটি পূণ্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলেছেন যে, “একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর হাজারো আবেদ থেকে শক্তিশালী”। আর তার আহলে বাইত ও এবং সাহাবায়ে কিরামের উপর যারা সর্ব প্রকার জান-মাল ও মাতৃভূমি কুরবানী দিয়ে দ্বীনকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। তাদের মাঝে দু’টি দল ছিল। একটি ছিল মুজতাহিদদের দল অপরটি মুকাল্লিদদের (মিয়া নজীর হুসাইন প্রণিত মিয়ারুল হক)।
এমন একজনের নামও বলা যাবেনা, যার ইজতিহাদের যোগ্যতাও রাখতেন না, আবার কোন মুজতাহিদের তাক্বলীদ ও করতেন না। যাদের বলা হত গায়রে মুকাল্লিদ। আর তাদের উপর রহমত বর্ষিত হোক তাদের পরের আইয়িম্মায়ে দ্বীন বিশেষ করে চার ইমামদের উপর যাদের সংকলন ও ব্যাখ্যায় কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ হুজুর সা. এর সুন্নাতের উপর আমল করাটা সহজ হয়ে গেছে।
পর সমচার
এই দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরণের মানুষ আছে। কিছু লোক এমন আছে যাদের আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের খিদমতের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছেন। যারা রাত দিন তালীম শিক্ষকতা, লিখনীর মাধ্যমে নসীহত ও তাবলীগ করে দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে দৃঢ়তা নসীব করুন। আর সর্ব প্রকার শত্রুতা আর ফিতনা থেকে হিফাযত করুন।
এর ঠিক উল্টো কিছু লোক এটাকেই কল্যাণধর্মী কাজ মনে করে যে, সাদাসিধা মুসলমানদের মনে কিছু ওয়াসওয়াসা ঢেলে দিবে, যার ফলে তারা দ্বীন থেকে সরে যাবে। অথবা কমপক্ষে সন্দেহ-সংশয়ে নিপতিত হবে। এমনি এক ব্যক্তির সাথে আমার একদা সাক্ষাৎ হয়।
সে লোকটি এক শ্বাসে নিজের পরিচয় দিল। আরবীতে এমএ ডিগ্রিধারী। ইসলামিয়াতে এমএ। সেই সাথে ওকালতে সার্টিফিকেটও আছে। আর দ্বীনী বিষয়ে রয়েছে প্রচুর পড়াশোনা। রয়েছে অগাধ পান্ডিত্ব।
আহলে হাদীস
লোকটি বলল-আমি আহলে হাদীস! আমি বললাম-আপনার বড় ভাই এখান থেকে উঠে গেল, যে বলেছে সে নাকি আহলে কুরআন।
একথা শুনে লোকটি বলতে লাগল-“আহলে কুরআনের শব্দ ইসলামী পরিভাষায় হাফেজে কুরআনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর ফযীলতের ব্যাপারে আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু ইংরেজদের আমলে এই নামটি সুন্নাত অস্বিকারকারীদের রাখা হয়। যারা একটি গোমরাহ ফিরক্বা। এ পবিত্র নাম নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। কখনো বলে-‘যখন কুরআন সত্য, তো আহলে কুরআন সত্য’। কখনো বলে-‘যখন থেকে কুরআন তখন থেকেই আহলে কুরআন। সকল সাহাবাই আহলে কুরআন ছিলেন’। কখনো হাফেজে কুরাআনের ফাযায়েলকে নিজের উপর প্রয়োগ করে সরল মানুষদের বিভ্রান্ত করে”।
আমি বললাম-“এমনিভাবে ইসলামী সমাজে আহলে হাদীস মুহাদ্দিসীনদের বলা হতো। মুহাদ্দিসীন সনদের বিশ্লেষণ করতেন। আর ইংরেজদের আমলে আহলে হাদীস ফিক্বহ অস্বিকারকারীদের বলা হতে লাগল। আর এসব লোকেরাও সাধারণ মানুষদের এভাবে বিভ্রান্ত করে যে, যখন থেকে হাদীস, তখন থেকেই আহলে হাদীস। সকল সাহাবাই আহলে হাদীস তথা ফিক্বহের অস্বিকারকারী ছিলেন। আবার কখনো কখনো মুহাদ্দিসীনদের ফাযায়েলকে নিজেদের উপর প্রয়োগ করে, যা খুবই গর্হিত কাজ”।
আমি তাকে বললাম-“আপনি যখন আজ পর্যন্ত একটি হাদীসও সনদসহ বিশ্লেষণ করেন নি, তাহলে আপনি কী করে আহলে হাদীস গেলেন?”
লোকটি বলতে লাগল-আমি শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীসকেই মানি। ফিক্বহ এবং কোন উম্মতের সিদ্ধান্তকে মানি না। এজন্য আমরা আহলে হাদীস।
আমি বললাম-কি কুরআন শরীফ প্রায় প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে থাকে। আপনি বলুন হাদীস কাকে বলে?
বলতে লাগল-“রাসূল সাঃ এর বক্তব্য, কর্ম এবং তাক্বরীর অর্থাৎ যে কাজটি তার সামনে হয়েছে কিন্তু আল্লাহর নবী কিছু বলেন নি সেগুোলাকে হাদীস বলে।
আমি বললাম-আপনি হাদীসের সে সংজ্ঞা দিলেন তা কুরআনের কোন আয়াতের অনুবাদ?
-কোন আয়াতের নয়।
-তাহলে এ সংজ্ঞাটি কোন হাদীসের অনুবাদ?
-কোন হাদীসেরই না।
-এ সংজ্ঞাটি কুরআনেও নেই, হাদীসেও নেই, তাহলে এ সংজ্ঞাটি আপনি নিলেন কোত্থেকে?
-কোন মুহাদ্দিস উম্মত এটি বর্ণনা করেছেন। আর সর্বপ্রথম কোন উম্মত মুহাদ্দিস কত বছর পর এটি বর্ণনা করেছেন সেটাও আমার মনে নেই।
-আপনার দাবিতো এটা ছিল যে, আপনি এজন্য আহলে হাদীস যে, শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীসের কথা মানেন, কোন উম্মতের কথা মানেন না, অথচ আপনি হাদীসের সংজ্ঞাই এক উম্মত থেকে চুরি করেছেন তাহলে আপনি আহলে হাদীস রইলেন কিভাবে?
নিশ্চুপ হয়ে গেল কথিত আহলে হাদীস লোকটি।
আমি এবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম-কুরআনে কারীমের সকল আয়াতের মত সকল হাদীসও কি মুতাওয়াতির [নিরবচ্ছিন্ন সূত্রাবদ্ধ] এবং চূড়ান্ত সহীহ?
-না। সকল হাদীস মুতাওয়াতির নয়। সব সহীহ ও নয়। বরং অনেক হাদীস দুর্বল আছে। এমনকি জাল হাদীসও আছে।
-আপনি আমাকে শুধুমাত্র একটি হাদীস লিখে দেন যেটাকে আল্লাহ অথবা তার রাসূল সাঃ সহীহ বলেছেন। আর একটি হাদীস এমন দেখান যেটাকে আল্লাহ অথবা তার রাসূল দুর্বল বা জাল বলেছেন।
-একটি হাদীসকেও আল্লাহ ও তার রাসূল সহীহ-হাসান, বা দুর্বল ও জাল বলেন নি।
-তাহলে আপনি কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে হাসান, কোন হাদীস দুর্বল ও জাল কি হিসেবে বলেন?
-নিজেদের সিদ্ধান্ত অথবা উম্মতের মুহাদ্দিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাদীসকে সহীহ-দুর্বল ইত্যাদি বলে থাকি।
-তাহলেতো আপনি আহলে রায়, অথবা আহালে রায়ের মুকাল্লিদ তথা অনুসারী হয়ে গেলেন, আহলে হাদীসতো আর বাকি রইলেন না।
এবার লোকটি বেশ ঘাবরে গেল। চিন্তিত হয়ে বলতে লাগল-আপনার কাছে হাদীস ও দুর্বল হওয়ার কি নিদর্শন আছে?
আমি বললাম-যে হাদীসকে চার মুজতাহিদ ইমাম গ্রহণ করেছেন, আর সবার এগুলোর উপর নিরবচ্ছিন্ন আমল আছে আমরা বলি-উক্ত হাদীসকে আল্লাহ ও রাসূল সহীহ বলেন নি, দুর্বলও বলেন নি, তবে ঐক্যমত্বের কারণে এটা সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর যেসব মাসআলায় মতভেদপূর্ণ হাদীস আছে সেসব ক্ষেত্রে মুজতাহিদে আযম রহঃ যে হাদীসের উপর আমল করেছেন, সেই সাথে হানাফীদের এর উপার নিরবচ্ছিন্ন আমল আছে সেটাকে আমরা সহীহ মানি। কেননা আমাদের ইমাম রহঃ বলেছেন যে, “আমার মাযহাব সহীহ হাদীসের উপর”। আর মুজতাহিদের কোন হাদীস অনুযায়ী আমল করাটাই হল মুকাল্লিদদের জন্য জন্য উক্ত হাদীসটি সহীহ। এজন্য আমরা বলি-“যেমন এ হাদীসটিকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাঃ সহীহ বলেন নি, বলেন নি দুর্বলও। আর যেখানে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে সেখানে আল্লাহ তায়ালা মুজতাহিদদের ইজতিহাদ [উদ্ভাবন] করার অধিকার দিয়েছেন। আমাদের ইমাম সাহেব এ হাদীসে উল্লেখ হওয়া মাসআলাকে গ্রহণ করেছেন। এখন যদি তাঁর ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তিনি পাবেন দু’টি সওয়াব। আর যদি ভুল হয় তাহলে পাবেন। আমলটি সুনিশ্চিত আল্লাহর কাছে মকবুল। আমাদের ইমামের এই ইজতিহাদের বিপরীত যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ বা রাসূল সাঃ থেকে সুষ্পষ্ট প্রমাণ করে যে, যে হাদীসের উপর আমাদের মুজতাহিদ ইমাম আমল করেছেন সেটিকে আল্লাহ বা রাসূল সাঃ মনগড়া তথা জাল বলেছেন , তাহলে আমরা আমাদের ইমামের ইজতিহাদকে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মেনে নিব। কিন্তু আমাদের নবীজী সাঃ বর্ণিত স্বীকৃত কল্যাণী যুগের মুজতাহিদে আযম রহঃ যেটাকে গ্রহণ করেছেন সেটাকে ছেড়ে দিয়ে অকল্যাণী যুগের কোন ব্যক্তির কথা আমরা মানতে রাজী নই। হাদীস গ্রহণ ও বর্জনের ব্যাপারে আমাদের মূলনীতিটি কুরআন সুন্নাহর বিরোধী হলে শুনাও। আমরাতো মন থেকে তাহলে আপনাদের শুকরিয়া জানাবো।
বাকি রইল আপনার কথা-“আপনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত অথবা কোন গায়রে মুজতাহিদ উম্মতের সিদ্ধান্তানুযায়ী কোন হাদীসকে সহীহ, কোন হাদীসকে দুর্বল বলে থাকেন।”
তাহলে বুঝা গেল আপনাদের এ আমলটি কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা আপনাদের কাছেতো কেবল আল্লাহ ও তার রাসূলের কথাই দলিল। আর আপনারা সুনিশ্চিত আল্লাহও নন, আবার রাসূলও নন। আপনাদের গায়রে মুজতাহিদ উম্মতীও আল্লাহ ও নন, আবার রাসূল ও নন। তাহলেতো আপনাদের কোন হাদীসকে না সহীহ বলা উচিত, না দুর্বল। কিন্তু আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কাছেও আপনাদের এসব কথা কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা আপনি যেমন ইজমা নন, তেমনি আপনার মাঝে না মুজতাহিদের শর্ত আছে। সুতরাং যেটাকে গবেষণা বলছেন সেটা কোন দলিলের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা এক্ষেত্রে না আপনাকে আমরা আল্লাহ মানি, না রাসূল মানি। না ইজমা মানি। না মুজতাহিদ মানি। আপনি নিজেই বলে দিন যা বলতে আমাদের বাধ্য করছেন যে, আপনাদের গবেষণা মানা মানে হল নিজেদের আপনারা আল্লাহ বা রাসূল মনে করেন! নিজেদের মুখে স্পষ্টতো একথা বলেন না যে, আপনারা খোদা বা রাসূল [আল ইয়াজু বিল্লাহ] কিন্তু যখন আমরা ইজমা ও মুজতাহিদের বিপরীতে আপনাদের দলিলহীন কথা মানি না, তখন শোরগোল করে দেন যে, আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা মানি না।
এবার আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন আপনাদের অপপ্রচার কতটা জঘন্য!
আপনিতো খুব বাহাদুর পুরুষ। তাই না? আপনি জানেন কি মুহাদ্দিসীনরা হাদীসের তিন প্রকার করেছেন। যথা-
১-মারফু’ তথা সেসব হাদীস যাতে রাসূল সাঃ এর বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
২-মাওকুফ তথা সেসব হাদীস যাতে সাহাবীদের বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
৩-মাকতু’ তথা সেসব হাদীস যাতে তাবেয়ীদের বক্তব্য, কর্ম ও তাক্বরীর উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নিজের মুজতাহিদের পথপ্রদর্শনে এই তিন প্রকারকেই মানি। আপনারাও কি এ তিন প্রকারকে মানেন?
সে বলল-অবশ্যই না! আমরা কেবল প্রথম প্রকারকেই মানি।
-আপনি কি কোন আয়াত বা হাদীস পেশ করতে পারবেন যাতে রয়েছে যে, যারা হাদীসের তিন প্রকারকেই মানে তাদের যুক্তিপূজারী আরা যারা তিন ভাগের একভাগকে অস্বিকার করে তাদের আহলে হাদীস বলা হয়?
সে বিরক্ত হয়ে বলল-আপনি কথায় কথায় আয়াত ও হাদীস জানতে চান কেন?
-এ কারণে যে, আপনি শুরুতেই এ দাবী করেছেন যে,-আপনি কুরআন-হাদীস ছাড়া অন্য কিছু মানেন না। একথা এখন আপনার বুঝে আসল যে, আপনাদের ভাই “আহলে কুরআন” যেমন তাদের দাবী অনুযায়ী সকল মাসায়েল সরাসরি কুরআন থেকে দেখাতে পারবে না, তেমনি আপনারাও আপনাদের দাবি অনুযায়ী সকল মাসায়েল হাদীস থেকে দেখাতে পারবেন না।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম সহীহ হাদীস ১০ প্রকার বর্ণনা করেছেন যা মুকাদ্দামায়ে নববীতে আছে। যাতে মুরসাল হাদীস এবং মুদাল্লিসীনদের মুআন আন হাদীসও সহীহের প্রকারে শামীল হয়েছে। আমরা এ ১০ প্রকার সহীহকেই মানি। আর নিজেদের মুজতাহিদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এসবের উপর আমলও করি। আপনারাও কি এ ১০ প্রকারকে সহীহ মেনে এসবের উপর আমল করেন?
-না আমরা সব ক’টিকে মানি না। বরং ৫ প্রকার মানি। আর বাকি ৫ প্রকারকে মনগড়া ও জাল বলে আখ্যায়িত করি।
-আপনি কোন আয়াত বা হাদীস উপস্থাপন করতে পারবেন, যাতে লিখা আছে যে, যারা হাদীস সহীহ হওয়ার ১০ প্রকার মানে তাদের যুক্তিপূজারী আর আর অর্ধেকের বেশি হাদীসকে অস্বিকার করে তাদের বলা হয় “আহলে হাদীস”? “নিজের ফাঁদে নিজেই আটক” এ প্রবাদ বাক্য আপনাদের বেলায়ই যথোপযুক্ত।
একটি মাসআলা
কোন ব্যক্তি যদি এ অসিয়ত করে যে, আমি আমার এতটুকু পরিমাণ সম্পদ হাদীসের আহলদের জন্য ওয়াক্বফ করলাম, তাহলে সে ওয়াক্বফ এর হকদার কে হবে? তো ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, ইমাম শাফেয়ী রহ^ এর মুকাল্লিদ যদি হাদীসের ছাত্র হয় তাহলে সে এর হকদার হবে। আর যদি হাদীসের ছাত্র না হয় তাহলে হকদার হবে না। তবে হানাফীরা এর হকদার হবে, চাই হাদীসের ছাত্র হোক বা না হোক। এজন্য যে, হানাফীরা মুরসালা হাদীস এবং খবরে ওয়াহেদকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে [আদ দুররুল মুখতার]।
এর দ্বারা জানা গেল, যে গায়রে মুকাল্লিদরা হাদীসের খিদমাতের নামে বর্হিরাষ্ট্র থেকে টাকা নেয়। আর সারাদিন সহীহ হাদীস সমূহকে দুর্বল ও মনগড়া বলে প্রচারণা চালায় তাদের জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে এ টাকা গ্রহণ জায়েজ হবে না।
আরো একটি ছলনা
আমি বললাম-আপনাদের মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ জিপুরী এ একটি কিতাব আছে, “হাকীকাতুল ফিক্বহ” নামে। সে কিতাবে একটি শিরোনাম আছে-“আহলে কুফীদের হাদীসের জ্ঞান”। সেটাতে তিনি বলেন-‘যদি আহলে কুফীরা এক হাজার হাদীস শুনায়, তাহলে ৯৯৯টিকে নিক্ষেপ করে দাও। আর বাকি একটির উপর সন্দেহ রাখবে, কখনো সহীহ বিশ্বাস করবে না’।
লোকটি দ্রুত বলে বসল-আহলে কুফাদের হাদীসের সাথে কী সম্পর্ক?
-আস! অভিজ্ঞতা নিয়ে নাও! আমি সিহাহ সিত্তা থেকে হাদীস বের করবো, যাতে একজন কুফী রাবী পাওয়া যাবে, সেটাকে সিহাহ সিত্তা থেকে বের করে দিবে।
-“তাহলে সিহাহ সিত্তাতে থাকবে কি? সেখানে মাটি উড়তে থাকবে”। তড়িঘরি জবাব দেয় লোকটি।
-এমন কোন আয়াত বা হাদীস আছে নাকি যে, কুফাবাসীর বর্ণিত সহীহ হাদীসকে এজন্য অস্বিকার করে যে, এটা কুফাবাসী বর্ণনা করেছেন, তাদের বলা হবে “আহলে হাদীস”। আর যারা কুফাবাসী ও হেজাজবাসী, সবার বর্ণিত সহীহ হাদীস মানে তাদের বলা হয় যুক্তিপুজারী?


জনৈক কথিত আহলে হাদীসের সাথে মুলাকাত ও কথোপথন-২য় পর্ব


লোকটি আমার প্রশ্নের জবাবে না কোন আয়াত দেখাতে পারল, না হাদীস। বহুত পেরেশানী নিয়ে চুপ করে বসে রইল। সহীহ হাদীস অস্বিকারকারীকে আহলে হাদীস প্রমাণ করতে পারল না। সে তখন সুযোগ খুঁজছিল, কোন চান্স পেলে এ আলোচ্য বিষয় রেখে অন্য বিষয়ে আলোচনা করবে। আমার মুখ থেকে “মাওলানা” শব্দ বের হচ্ছিল। সাথে সাথে শোরগোল শুরু করে দিল-“তওবা! তওবা! আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলানা ডাকা শিরক ও কুফরী”।
আমি বললাম-এই দেখুন “তাউযীহুল কালাম” এতে লিখা আছে যে, মাওলানা ইরশাদুল হক আসরী। তারপর লিখা মাওলানা আজীজ যুবাইদী। আর সালাতুর রাসূলে লিখা আছে-“মাওলানা মুহাম্মদ সাদেক শিয়ালকুঠি। মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গজনবী, মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সানী, মাওলানা নূর হুসাইন গুজরাটি, মাওলানা আহমাদ দ্বীন, মাওলানা মুহাম্মদ গুন্ধলুয়ী। কি এ সবাই মুশরিক? একটু ভেবে চিন্তে ফাতওয়া দিন না। সে তৎক্ষণাৎ বলে বসল-“আমরা তাদের মানি না”। আমি বললাম-“আপনি কি তাদের মুসলমান মানে না, নাকি আহলে হাদীস মানে না?”
-আমি তাদের আল্লাহ ও রাসূল মানি না।
-আমি তাদের আল্লাহ ও রাসূল বলেতো উপস্থাপন করি নি। এরা আপনার গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা। কি আপনি তাদের নাম নিয়ে মুশরিক বলেন? তাদের কাছেতো মাওলানা বলা জায়েজ।
-তারা কি আল্লাহ নাকি যে, তাদের কথা মানতে হবে?
-আপনি কি আল্লাহ নাকি যে, আমি আপনার কথা মেনে বলব-“মাওলানা বলা শিরক?”
-আমিতো প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে মুশরিক বলি যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলানা ডাকে।
-আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلاهُ অর্থাৎ সে তার মনীবের উপর বোঝা (সূরা নাহল-৭৬) এখানে আল্লাহ তায়ালা গোলামের মনীবকে মাওলা বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা কি তাহলে মুশরিক? [নাউজুবিল্লাহ]। রাসূল সাঃ হযরত যায়েদ বিন হারেসা রাঃ কে বলেছেন-انت اخونا ومولانا অর্থাৎ “তুমি আমার ভাই এবং মাওলানা”(বুখারী শরীফ-১/৫২৮)
বরং নবীজী সাঃ গোলামদের শিখিয়েছেন যেন গোলামরা তার মনীবকে বলে-“সাইয়্যিদী ওয়া মাওলায়ী”। (বুখারী শরীফ-১/৩৪৬)
ইমাম হাসান রাহঃ কে মানুষ মাওলানা হাসান বসরী রহঃ ডাকতো (তাহযীবুত তাহযীব-২/২৬৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৯/২৬৬, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-৪/৫৭৩)
কি আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূল সাঃ এবং এ সকল লোক মুশরিক?
চুপ হয়ে গেল এবার লোকটি। তারপর আমি আবার আসল কথার দিকে এলাম। আপনাদের কাছে সহীহ হাদীসকে অস্বিকার করার জন্য আশ্চর্য ধরণের শর্ত রয়েছে। আপনাদের শাইখুল কুল মিয়া নজীর হুসাইন সাহেব এক স্থানে লিখেছেন- প্রশংসাকারীরা যেসব বানোয়াট গল্প সনদহীনভাবে সহীহের ফযীলতের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা থেকে বর্ণনা করেন, তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ পর্যন্ত সহীহ নিরবচ্ছিন্ন [মুত্তাসিল] ও ধারাবহিক আমলের সাথে [মুসালসাল] পৌঁছে না। {মেয়ারে হক-১৯}
যখন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য আপনাদের শাইখুল কুল তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন, আর হাদীসের বিষয়তো ইতিহাস থেকে অনেক উপরে।
প্রথম শর্ত আরোপ করেছেন সহীহের। যার দ্বারা হাসান হাদীস বেরিয়ে গেছে। সকল হাসান হাদীসকে অস্বিকার করা হল।
দ্বিতীয় শর্ত হল মুত্তাসিল বলা হল। এর দ্বারা তালীকাত ও মুনক্বাতে’ ও মুরসাল হাদীস সবই বেরিয়ে গেল। সেই সাথে হাদীসের এসব প্রকারকে মানতে অস্বিকার করা হল।
তৃতীয় শর্ত হল মুসালসাল। অর্থাৎ সনদের প্রতিটি বর্ণনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত হাদীসের উপর ধারাবাহিক আমল প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। এ শর্তের দ্বারাতো হাজারের মাঝে এক হাদীসও আমলের যোগ্য বাকি থাকবে না।
আমি তাকে বললাম-আপনি কি এ তিন শর্ত কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত করতে পারবেন? যেখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-প্রত্যেক ঐ শর্ত যা কিতাবুল্লাহ এ নেই তা বাতিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৫৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৮৫০}
কিন্তু এ লোক কুরআন বা হাদীস থেকে এসব কিভাবে দেখাবে?
আমি তাকে বললাম-আপনাদের মসজিদে মতভিন্নতাপূর্ণ মাসআলার ব্যাপারে ঘোষণাপত্র লাগানো থাকে, যাতে স্পষ্ট ভাষায় শর্ত লিখা হয় যে, সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হাদীস দেখাতে হবে।
লক্ষ্য করুন- কাদিয়ানীরাও কিন্তু এ শর্তই লাগায় যে, রাসূল সাঃ এর পর কোন শরীয়তহীন নবী আসবে না, এ মর্মে সহীহ হাদীস দেখাও। আর সহীহ হাদীস দেখাও যে, হযরত ঈসা আঃ স্বশরীরে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এসব কথা বলে কাদিয়ানীরা খতমে নবুওত ও ঈসা আঃ এর জীবিত থাকা এবং পুনরায় আগমন সম্বলিত সকল মুতাওয়াতির হাদীসকে অস্বিকার করে দেয়। যেহেতু যে শব্দ তারা চাচ্ছে তা রাসূল সাঃ থেকে বলাতে পারেনি, আর যে শব্দ রাসূল সাঃ খোদ বলেছেন সেটাও তারা মানবে না, যেহেতু তা সরীহ না। সেই সাথে মারফু শর্ত লাগিয়ে মাকতু, ও মওকুফ হাদীসকে অস্বিকার করে দেয়।
আপনি কি আপনাদের শর্ত অনুযায়ী তথা হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হওয়ার শর্তে একটি হাদীস দেখান, যাতে বলা হয়েছে যে, শরীয়তের দলিল শুধুমাত্র হাদীস সহীহ, সরীহ, মারফু ও গায়রে মাজরুহ হওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ।
মোটকথা হল আপনারা হাদীসের ক্ষেত্রে এমন এমন শর্ত আরোপ করে যে, কমপক্ষে ৯৫ পার্সেন্ট হাদীসই অস্বিকার হয়ে যায়।
রহিত হওয়া হাদীস
সমগ্র মুসলিম উম্মাহের ঐক্যমত্ব যে, রহিত হওয়া হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বলেন-
ليس على العامى العمل بالحديث لعدم علمه بالناسخ والمنسوخ
সাধারণ মানুষের জন্য হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নেই হাদীসের নাসেখ তথা রহিতকারী ও মানসুখ তথা রহিত সম্পর্কে জানা ব্যতিত। {মিয়ারুল হক-৩৯ বাহরুর রায়েকের বরাতে}
সাধারণ মানুষের জন্য ফুক্বাহাদের পথপ্রদর্শন ছাড়া হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়। কেননা তাদের নাসেখ মানসুখ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। এ কারণে ফুক্বাহাদের গবেষণা থেকে জেনে তারপর নাসেখ হাদীসের উপর আমল করবে, মানসুখ হাদীসের উপর আমল করবে না। কিন্তু আপনাদের শায়খুল কুল বলেন-যদি কোন ব্যক্তি নিজে গবেষণা করে কোন হাদীসের উপর আমল করে যদিও উক্ত হাদীসটি মানসুখ হয়ে থাকে, তাহলেও সে উক্ত হাদীসের উপর আমল করার কারণে গোনাহগার হবে না, সেই সাথে মানসুখ হওয়া হাদীসের উপর আমল করার কারণে তার আমল বাতিলও হবে না, এবং পুনরায় তা আদায়ও করতে হবে না। {মেয়ারুল হক-৪১}
এবার দেখুন- আহলে সুন্নাতের উপর জিদ করে মানসুখ হাদীদের উপর আমল করারও অনুমতি প্রদান করা হল। এজন্যই আজকাল কথিত আহলে হাদীসদের পরিভাষায় মানসুখ হাদীসের উপর আমলকারীদের বলা হয় আহলে হাদীস, আর নাসেখ হাদীসের উপর আমলকারীদের বলা হয় আহলে রায়।
যা মনে চায়, তাতেই স্বীয় কারিশমা দেখান।
জিদ
লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল-আহলে হাদীসরা জিদ করে না।
আমি বললাম-আপনার পড়াশোনা খুবই কম এবং সীমাবদ্ধ। কারণ-
[১]
আমাদের কাছে মাসআলা হল-নামাযী ব্যক্তির শরীর পাক থাকা নামায পড়ার জন্য শর্ত। নাপাক ব্যক্তি নামায পড়লে নামায হবে না। অথচ আপনাদের নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব শুধুমাত্র জিদের বশে এ সহীহ মাসআলাটিকে অস্বিকার করে দিয়েছেন। লিখেছেন-
پس مصلی بانجاست بدن آثم ست نمازش باطل نيست (بدور الأهله-38)
অর্থাৎ শরীরে নাপাক [পায়খানা পেশাব] সহ হলে সে গোনাহগার হবে, তবে তার নামায বাতিল হবে না, বরং হয়ে যাবে। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৩৮}
বলুনতো এটাকে জিদ বলে না, তো কী বলে?
[২]
আমাদের মতে নামায সহীহ হওয়ার জন্য কাপড় পাক থাকাও শর্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে জিদের বশবর্তী হয়ে এখানেও লিখে দেযা হয়েছে যে,
ہر کہ درجامہ ناپک نماز گزارد نمازش صحیح باشد (عرف الجادى-22)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নাপাক [যেমন হায়েজের রক্তে রঞ্জিত] কাপড় পরিধান করে নামায পড়ে তাহলে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। {আরফুল জাদী-২২}
[৩]
আমাদের মতে নামায সহীহ হওয়ার জন্য নামাযের স্থান পাক হওয়াও জরুরী। নাপাক স্থানে নামায হবে না। কিন্তু এটাকেও শুধুমাত্র জিদের বশে অস্বিকার করা হল। নওয়াব সিদ্দিক হাসান সাহেব লিখেন-
طهارت مكان واجب ست نہ شرط صحت نماز (عرف الجادى-21)
স্থান পবিত্র থাকা ওয়াজিব, কিন্তু নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। {আরফুর জাদী-২১}
[৪]
এমনিভাবে আমাদের মতে নামাযের সময় লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখা আবশ্যক। নতুবা নামায হবে না।
কিন্তু জিদের কারিশমা দেখুন, তিনি লিখেছেন-
ہر کہ در نماز عورتش نمایاں شد نمازش صحیح باشد (عرف الجادى-22)
অর্থাৎ নামায অবস্থায় যার লজ্জাস্থান খোলা থাকে তার নামায বিলকুল হয়ে যায়। {আরফুল জাদী-২২}
[৫]
এমনিভাবে নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল- নামাযের সময় হতে হবে। নামাযের সময় হওয়ার আগে নামায পড়লে হবে না।
অথচ কথিত আহলে হাদীসদের ফাতওয়ার কিতাবে লিখা হয়েছে যে,
“যদি আসরের পর ফুটবল খেলতে হয়, তাহলে আসরের নামায যোহরের সাথে পড়ে নিবে”। {ফাতওয়ায়ে সানায়িয়্যাহ-১/৬৩১}
[৬]
আমাদের মতে কাফেরের পিছনে নামায শুদ্ধ হয় না, কিন্তু নওয়াব অহীদুজ্জামান পরিস্কার ভাষায় লিখেছেন-
“কাফেরের পিছনে নামায পড়লে তা আর দোহরিয়ে পড়তে হবে না। {নুজুলুল আবরার-১/১০১}
আপনাদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ সাহেব এর ফাতওয়া এটা ছিল যে, মির্যায়ীদের [কাদিয়ানী] পিছনে নামায পড়া জায়েজ আছে। শুধু তাই নয়, তিনি মির্যায়ীদের [কাদিয়ানী] পিছনে নামায পড়তেনও। {ফায়সালায়ে মক্কা-৩৬}
আর আপনাদের মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আসরী ও মির্যায়ীদের পিছনে নামায পড়তেন।
ইসলামী ফিক্বহের বিরোধিতা
সে লোকটি [কথিত আহলে হাদীস] বলতে লাগল- ফিক্বহের বিরোধিতা কোন ধরণের কুফরী? বরং ফিক্বহের বিরোধিতাতো করাই উচিত। যেন মানুষ ফিক্বহ ছেড়ে দেয়।
আমি তাকে বললাম- ফিক্বহের মাসআলাতো কুরআন ও সুন্নাহ নির্ভর। তাহলে ফিক্বহ অস্বিকার করা মানেতো কুরআন ও সুন্নাহ অস্বিকার।
আমি তাকে আরো বললাম- আপনি আপনার মসজিদে এ জিহাদ শুরু করে দিন যে, ভাই! ফিক্বহের বিরোধিতা করতে হবে, তাই আসরের সময় খেলার সময়, তাই আসরের নামায পৌনে একটা সময় পড়ে নিন। নামাযের স্থানে পায়খানা লেপে নিন, আর শরীরে পেশাব দিয়ে মেখে নিন, কাপড়ে হায়েজের রক্তে রঙ্গীন করে পরিধান করুন, কিন্তু লজ্জাস্থান খোলা রাখুন, আর নামাযের ইমাম একজন কাফেরকে বানিয়ে নিন, তারপর নামাযের শুরুতে আর শেষে জোরে ধ্বনী তুলুন যে, “ফিক্বহের বিরোধিতা কোন কুফরী কাজ নয়, পা বাড়ান আর ফিক্বহের বিরোধিতায় অংশ নিয়ে উভয় জগতে সওয়াব অর্জন করুন, মাসলাকে আহলে হাদীস জিন্দাবাদ”।
চলবে ইনশাআল্লাহ

আরও জানতে ফেসবুকে লগিন করুণ 

 http://www.facebook.com/KafelaEShabab/



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages