আহলে হাদিসের পরিচয়
আহলে হাদিসের পরিচয় ।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস –
এর সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাম্মদ আসাদুল ইসলাম আমার দেশ পত্রিকায় একটি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে
হাদীস কোন আক্রমণাত্মক ও বিভেদমূলক প্রচারণা চালায় না এবং ফতোয়াবাজিও করে
না; বরং কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য সুসংহত করার জন্য ১৯৪৬ সাল
থেকেই এদেশে সক্রিয় রয়েছে।””””
উক্ত কথার প্রেক্ষিতে এই পোষ্ট দিতে বাধ্য হলাম………………………
“মুযাহেরে হক্ব” কিতাবের
স্বনামধন্য লেখক মাওলানা কুতুব উদ্দীন তার “তুহফাতুল আরব ওয়াল আযম”
গ্রন্থে গাইরে মুক্বাল্লিদদের বা আহলে হাদীসে দলের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের
বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যার সার-সংক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করা হল-
“সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, মাওলানা
ইসমাইল শহীদ ও মাওলানা আব্দুল হাই রহ. পাঞ্জাবে আগমন করার পরপরই কতিপয়
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে চার মাযহাবের ইমামগণের তাক্বলীদ
অস্বীকারকারী নতুন ফিরক্বাটির বা আহলে হাদীস -এর সূত্রপাত লক্ষ্য করা যায়।
যারা হযরত সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর মুজাহিদ বাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের
সদস্য ছিল, এদের মূখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী (মৃত- ১২৭৫ হি ।
তার এর ধরনের অসংখ্যা ভ্রান্ত কর্মকান্ডের কারনে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদর রহ.
১২৪৬ হিজরীতে তাকে মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তখনই গোটা
ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রান জনগণ, বিশেষ করে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর
খলীফা ও মুরীদগণ হারামাইন শরীফাইনের তদানীন্তন উলামায়ে কিরাম ও মুফতীগণের
নিকট এ ব্যপারে ফতওয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন চার মাযহাবের
সম্মানিত মুফতীগণ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভী আব্দুল
হক্ব বেনারসী ও তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ফিরক্বা
(আহলে হাদীস) বলে অভিহিত করেন এবং মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসীকে ক্বতল
(হত্যা) করার নির্দেশ প্রদান করেন (এ ফতওয়া ১২৫৪ হিজরীতে
তান্বীহুদ্দাল্লীন নামে প্রকাশ করা হয়, এখনো দেশের বিশিষ্ট লাইব্রেরীতে এর
কপি সংরক্ষিত রয়েছে।)। মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী পলায়ন করত : কোভাবে
আত্মরক্ষা পায়। সেখানে গিয়ে তার নবআবিষ্কৃত (আহলে হাদীস) দলের প্রধান
হয়ে সরলমনা জনাসাধারণের মধ্যে তার বিষাক্ত মতবাদ ছড়াতে থাকে।”
(তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম, পৃ: ১৬, খ:২, আল-নাজাতুল কামেলা, পৃ:২১৪, তন্বীহুদ্দাল্লীন, পৃ:৩১)
গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিম মৌলভী আসলাম জিরাজপুরী তার বিশিষ্ট রচনা “নাওয়াদিরোতে” লিখেন,
“প্রথমত এ জামাত নিজেদের বিশেষ
কোন নাম রাখেনি। মাও: ইসমাইল শহীদ রহ. এর শাহাদাতের পর প্রতিপক্ষের লোকেরা
যখন দুর্নাম করা জন্য তাদেরকে ওহহাবী বলতে শুরু করে, তখন তারা নিজেরদেকে
“মুহাম্মাদী” বলতে থাকে, অত:পর এ নামটি পরিহার করে “আহলে হাদীস” উপাধি চয়ন
করে যা আজ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।” (নাওয়াদিরাত, পৃ: ৩৪২)
উপরোক্ত বিররণ থেকে একথাই
প্রতীয়মান হয় যে, মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে
ভারতবর্ষে গাইরে মুক্বাল্লিদ তথা লা-মাযহাবী (আহলে হাদীস) নামক নতুন
ফিরক্বাটির সূত্রপাত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সে “ওয়াহাবী” হিসেবে পরিচিত
ছিল। কিন্তু সে নিজেকে “মুহাম্মাদী” বলে প্রচার করতো। পরবর্তীতে“ইংরেজের
বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম” এ মর্মে ফতওয়া দিয়ে ইংরেজের দালাল হিসেবে
চিহ্নিত হয়। এবং এ সুযোগে সে সরকারী কাগজ-পত্র থেকে “ওয়াহাবী” নাম রহিত
করে আহলে হাদীস নাম বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়।
ভারতবর্ষে ইংরেজ-বিরোধী ও ইংরেজ
বিতাড়নে জিহাদ যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে ইংরেজ সরকার ওহহাবী বলে
আখ্যায়িত করেছিল, তখন গাইরে মুক্বাল্লিদরা ওহহাবী নামের আখ্যা থেকে রক্ষা
পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাই তারা তখন নিজেদের জন্য “মুহাম্মদী”
এবং পরবর্তীতে “আহলে হাদীস” নাম বরাদ্দ করার সম্ভাব্য সকল অপতৎপরতা চালিয়ে
গিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে গাইরে মুক্বাল্লিদদের তৎকালীন মুখমাত্র মৌলভী
মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লাহোরী বৃটিশ সরকারের প্রধান কার্যালয় এবং
পাঞ্জাব, সি-পি, ইউ-পি, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও বাঙ্গালসহ বিভিন্ন শাখা অফিসে
ইংরেজ প্রশাসনের আনুগত্যতা ও বশ্যতা স্বীকার করত: তাদের জন্য“আহলে হাদীস”
নাম বরাদ্দ দেয়ার দরখাস্ত পেশ করেন। এ দরখাস্তগুলোর প্রতি উত্তর সহ তারই
সম্পাদনায় প্রকাশিত তৎকালীন “এশায়াতুস সুন্নাহ” পত্রিকায় (পৃ:২৪-২৬,
সংখ্যা:২, খ:১১) প্রকাশ করা হয় যা পরে সাময়ীক নিবন্ধ আকারেও বাজারজাত করা
হয়। তাদের মানসিকতা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিছুটা আঁচ করার জন্য আপনাদের
সমীপে সন্মধ্য হতে একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে পেশ করছি।
“বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,
আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক
লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও পার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক
“এশায়াতুস সুন্নাহ” পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহহাবী
শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা
হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার
সমীচিন হবে না, যাদেরকে “আহলে হাদীস” বলা হয় এবং সর্বদা ইংরেজ সরকারের
নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও
হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।
অতএব, এ দলের প্রতি ওহহাবী শব্দ
ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর
অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহহাবী শব্দ
রহতি করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের
পরিবর্তে “আহলে হাদীস” সম্বোধন করা হোক।
আপনার একান্ত অনুগত খাদেম
আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন
সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ
দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার
তাদের জন্য “ওহহাব” শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” নাম বরাদ্দ করেছে। এবং
সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের“আহলে হাদীস” সম্বোধনের নোটিশ
জারি করে নিয়মতান্তিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত
করা হয়।
সর্বপ্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট
সেক্রেটারী মি: ডব্লউ, এম, এন (W.M.N) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা
ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। অতপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ইং
সি.পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ইং ইউ.পি
গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট
চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং ১২৭
এর মাধ্যমে এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর
মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ বাটালভীকে অবহিত করা হয়।
(এশায়াতুস সুন্নাহ, পৃ:৩২-৩৯, সংখ্যা:২, খ:১১)
কোন মুসলিম জামাতের নাম
অমুসলিম, মুসলামানদের চিরশত্রু খৃষ্টান নাছারাদের মাধ্যমে বরাদ্দ করা ঘটনা
ইসলামী ইতিহাসের পৃষ্ঠায় বিরল। যা কেবল হিন্দুস্তানী গাইরে
মুক্বাল্লিদদেরই গৌরব ও সৌভাগ্যের বিষয় (!!!!!!!!) তাই তারা এ ইতিহাসটা
অত্যন্ত গৌরবের সহিত নিজেরদের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে তৃপ্তি লাভ
করেছেন।
অল্প বিদ্যা ভয়ংকর , তাই কাট কপি পেষ্ট করার পূর্বে আপনার জ্ঞানের গভীরতা বাড়ানোর জন্য পড়ুন বংগে মুসলিম জাতির ইতিহাস লেখক:মো: আব্বাস আলী খান ,বইটি পাবেন www.banglainternet.com আর সংক্ষেপে জেনে রাখুন আহলে হাদিসের প্রকৃত পরীচয়:
উত্তরমুছুনপৃথিবীর সবচেয়ে দূরদর্শি চিন্তানায়ক বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, ‘বানী ইস্রায়েলরা ৭২ ফির্কায় বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩ ফির্কায় বিভক্ত হবে। তন্মোধ্যে ৭২টা ফির্কা জাহান্নামে যাবে এবং একটি ফির্কা জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ জান্নাতি ফির্কা তারা যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের আদর্শে কায়েম থাকবে’ (তিরমিযী, আবু দাউদ, আহমাদ, মিশকাত)।
বিশ্বের সমস্ত পীরের মাথার মণি আব্দুর কাদের জিলানী রহ. বলেন জাহান্নাম থেকে নিজাত পাওয়া ঐ দলটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দল। যার একটি মাত্র নাম আছে, তা হল আহলে হাদীস’ (গুনইয়াতুত ত্বলিবীন, করাচী ছাপা, ৩০৯ পৃষ্ঠা)।
রিজাল শাস্ত্রের অদ্বিতীয় মনীষী হাফেয যাহাবী রহ. বিখ্যাত তা’বেয়ী ইমাম শা’বীর এক উক্তির ব্যাখ্যায় বলেন- ‘ইমাম শা’বীর মতে রাসুল সা. এর সমস্ত সাহাবাগন আহলে হাদিস ছিলেন’ (তাযকিরাতুল হুফফায, ১ম খন্ড, ১ম সংস্করন, ৭৭ পৃষ্ঠা ও দ্বিতীয় সংস্করনের ৮৩ পৃষ্ঠা)।
চার মাহহাবের অন্যতম বরেন্য নেতা ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেন-‘আহলে হাদিসরা প্রত্যেক যুগে সাহাবীদের ন্যায়। তাই আমি যখন কোন আহলে হাদিসকে দেখি তখন রাসুলুল্লাহ সা. এর কোন সাহাবীকেই যেন দেখি’(মীযানে শা’রানী; ১ম খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা)।
বিশ্বের সমস্ত মুজাহিদদের শিরমণি ও বিশ্বের অতুলনীয় প্রতিভা ইমাম ত্যাইমিয়াহ রহ. বলেন-‘পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের মধ্যে ইসলামের যে মান, ইসলামপন্থীদের মধ্যে আহলে হাদিসদের সেই মান’ (মিনহাজুস সুন্নাহ; ২য় খন্ড ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
মহামান্য ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন-‘ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বাল ও সুফয়ান ইবনে উয়ায়নাহ আহলে হাদিস ছিলেন’(রিহলাতুশ শাফিয়ি ১৪ পৃষ্ঠা)।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস সুফয়ান ইবনে উয়ায়নাহ বলেন-‘আমাকে আবু হানিফা রাহ. আহলে হাদিস বানিয়েছেন’ (হাদায়িকুল হানফিয়াহ;১৩৪ পৃষ্ঠা)। অতএব যিনি অপরকে আহলে হাদিস বানান সেই আবু হানিফা রহ. নিজে কি আহলে হাদিস ছিলেন না?
সুরা যুমারের ১৩ নং আয়াত ও সুরা আন নাজমের ৫৯ নং আয়াত, সুরা তুরের ৩৪ নং আয়াত সহ কুর’আনের মোট চৌদ্দটি আয়াতে কুর’আনকেই ‘হাদীস’ বলা হয়েছে। আর হাদিশাস্ত্র বিশারদদের পরিভাষায় বিশ্বনাবীর কথা বার্তা এবং কাজ কর্ম ও মৌন সমর্থনকে হাদিস বলা হয়। অতএব যারা কুর’আন ও হাদিস অনুসরন করে তারা নিজেদেরকে আহলে হাদিস (কুর’আন ও হাদিস ওয়ালা) বলে পরিচয় দিলে ক্ষতি কি?
আল্লাহ আমাদের সকলকে সুমতি দিন। আমীন!