ডাঃ জাকির নায়েক ও মতিউর রাহমান মাদানী


ডাঃ জাকির নায়েক ও মতিউর রাহমান মাদানী উম্মতে মুহাম্মাদির নতুন ফিতনা ।
_______________________________________________________
ডাঃ জাকির নায়েক ও মতিউর রাহমান মাদানী সহ তাদের মতানুসারীরা উপমহাদেশে হানাফী মতাদর্শের মশালটা যেহেতু দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের হাতে, আর তাঁদেরই সমর্থিত বিশ্বব্যাপী সফলতম ইসলামী প্রচারমিশন তাবলীগী জামাত যেহেতু কোটি কোটি মানুষের মনে দাগ কাটছে, দিন দিন পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে
তাই, তাদের মতে এ শিবিরটাকে যেমন করেই হোক তছনছ করে দিতে হবে। এজন্য সৌদি ‘সালাফী’ ‘জামাতী’ মুবাল্লিগণ আদাজল খেয়ে লেগেছেন। তাঁরা এখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও তথাকথিত সালাফীদের গায়রে মুকাল্লিদ চিন্তাধারা এবং সালাফী লেখক আলবানির নামায শিক্ষাদানের অভিযানে নেমেছেন। হিদায়া, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, শরহে বেকায়া, বেহেশতী যেওর, রাহে নাজাত, মিফতাহুল জান্নাত নয় এখন সব রেফারেন্সের জন্য নাসিরুদ্দিন আলবানির পুস্তকাদিই পাঠক ও শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। সবাইকে সালাফী বানাতে হবে।
_______________________________________________________
ভারতবর্ষে ইসলামের সূচনাযুগ থেকে নিয়ে বিগত শতাব্দির প্রথমার্ধ পর্যন্ত মুসলমানদের আমলী জিন্দেগী ছিল বড়ই সৌহাদ্যপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত। যেখানে ছিল মান্যতা, ছিল শ্রদ্ধাবোধ। নেক আমল ও দ্বীনের পথে চলার জন্য একে অন্যের পরামর্শ ও সহযোগিতার অমলিন আচরণে হতো সিক্ত। মোগলদের ৮শত বছর এবং পূর্বাপর সময়গুলোতে এতদঞ্চলের ধর্মপরায়ণ সাধারণ মুসলমানরা নিজেদের জীবনকে পুরো দ্বীনের ছাঁচে গড়ার জন্য মাযহাবপন্থি সূক্ষ্মদর্শী উলামায়ে কেরামের দ্বারস্থ হতেন। তাঁরা অক্লান্ত মেহনত-মোজাহাদা ও সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে কুরআন-সুন্নাহ-এর আলোকে জনসাধারণকে ফেকহী সমাধান দিতেন। সাধার মানুষ এসবের উপর আমল করে তাদের আমলী জিন্দেগীকে সুশোভিত করতেন। এটা এই অঞ্চলের মুসলমানদের হাজার বছরে ঐতিহ্য। আলহামদুল্লিহ! এই ঐতিহ্য এখনও পর্যন্ত বজায় আছে এবং কেয়ামত অবধি বহাল থাকবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, এটা শুধু মুসলমানদের প্রথাগত ঐতিহ্য নয়, বরং সাহাবায়ে কেরামের সোনালি যুগে আল্লাহ-রাসূল নির্দেশিত আর্দশের যে বিভা ছিল তারই অপরিবর্তিত প্রতিচ্ছবি। সে আলোচনা পরে করা যাবে।

সম্প্রতি শুরু হয়েছে মুসলমানদের এই সুন্দর ধারাবাহিক ঐতিহ্য এবং সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় আমলী জিন্দেগী বিনাশের মতো অপরিণামদর্শী পাঁয়তারা। কথিত ‘আহলে হাদীস’ ছদ্মনামে গায়রে মুকাল্লিদ লা-মাযহাবীগণ মদীনা ভার্সিটি থেকে ‘আল মাদানী’ হয়ে এসে এই অঞ্চলের মাযহাবপন্থি বিশেষত হানাফী মাযহাব অনুসারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোকদের পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর অবস্থা সৃষ্টি করছে। কারো দ্বারস্থ হওয়া নয়, কারো মতামত বা সহযোগিতা নয় প্রত্যেককেই হতে হবে ‘আহলে হাদীস’! নিত্যদিনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিটি জিজ্ঞাসার জবাব ব্যক্তিমাত্রকেই সরাসরি হাদীস থেকে খুঁজে বের করে তবেই আমল করতে হবে।এমনই উদ্ভট এবং ভয়াল এক বিতিকিচ্ছি অবস্থার জন্ম দেয়া হচ্ছে।

সঙ্গত কারণেই হকপন্থি উলাময়ে কেরাম ইলেকট্রিক মিডিয়ার প্রতি সর্বদাই অনীহ ছিলেন। ছিদ্র-সন্ধানী আহলে হাদীসরা এই সুযোগটাকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। যাদের ইলম এবং শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা যায় প্রচুর। যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং নিতান্ত অখ্যাত সেই লোকগুলো মিডিয়ার সুযোগে মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য এবং বিভ্রান্তির তিক্ত বাষ্প ছড়াচ্ছে। মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল আযহারীর ভাষায় “মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে আসা অনেক পরিচিত বন্ধু-বান্ধবকে যাদেরকে ইতোপূর্বে আমরা অনেক আশার দৃষ্টিতে দেখতাম লক্ষ করলাম, ঢাকায় ফিরে তাঁরা একান্তই জড়বাদী চিন্তা-চেতনার পরিচয় দিচ্ছেন। কোথায় বাড়ি কিনবেন, কোথায় দোকান করবেন এগুলোই যেন তাদের চিন্তার কেন্দ্র। জাতীয় প্রয়োজন, ইসলামের প্রয়োজনে এখানে কী করণীয় তা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনোই মাথাব্যাথা দেখা গেল না।… হ্যাঁ, দু’চারজন অনেক চেষ্টা-তদবির করে মুবাল্লিগের চাকরি জুটিয়ে বিনা তাবলিগেই সৌদি বেতন-ভাতা গুণতে লাগলেন। তাও আবার মওদুদী চিন্তাধারার বা তথাকথিত সালাফী না হলে সে চাকরি পাওয়া বা রক্ষা করা দুরূহ। তাদের খেদমত বা করণীয় অশিক্ষা, কুশিক্ষা, নাস্তিকতা, দুর্নীতি বা হাজার হাজার বিদেশি সাহায্য প্রতিষ্ঠান এনজিও) কর্তৃক এদেশের ধর্ম ও সভ্যতা বিনাশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম নয়। তাদের সংগ্রাম ও সব সাধ্য-সাধনা এ দেশ থেকে হানাফী মাযহাব দূর করে কীভাবে ‘সালাফিয়্যাত’ তথা গয়রে মুকাল্লিদ একটা সৌদি তল্পিবাহী সমাজ গড়ে তোলা যায়।
_______________________________________________________

তাদের মধ্যে অন্নতম একজন আলেম মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে আসা মতিউর রহমান মাদানী অন্যজন গাইরে আলেম যার দীনি শিক্ষার সাথে কোন শিক্ষিত নয় ডাঃ জাকির নায়েক
এই দুইজন ব্যাক্তি উম্মতে মুহাম্মাদির ৭৩ নং ফিরকা ।যার প্রমান আমরা তাদের ভিডিও লিঙ্কে দেকতে পাই ।তার দৃষ্টান্ত আল্লামা তাফসিরে কুরতুবী ভিবিন্ন সুরাতে করে গেছেন তা নিম্নে দেওয়া হল
বনী ইসরাঈলের মাঝে ছিল ৭২ ফিরক্বা। এর মাঝে ১টি ফিরক্বা ছিল জান্নাতী। আর ৭১ টি ফিরক্বা ছিল জাহান্নামী।
আর এই উম্মতের মাঝে হবে ৭৩টি ফিরক্বা। এর মাঝে ১টি ফিরক্বা হবে জান্নাতী আর ৭২টি ফিরক্বা হল জাহান্নামী।
নবী কারীম সাঃ ইরশাদ করেছেন-পূর্বের উম্মত যাই করেছে এই উম্মতও তাই করবে নাফরমানীর দিক থেকে। তথা ওরা যত পদ্ধতিতে নাফরমানী করেছে এই উম্মতও সেই পদ্ধতীতে নাফরমানী করবে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করার ৭১টি পদ্ধতিওয়ালা বাতিল ফিরক্বা পূর্ব উম্মত থেকে গ্রহণ করবে এই উম্মত। তথা ৭১টি বাতিল ফিরক্বার মত ও পথ পূর্ব উম্মতের মত এই উম্মতেও থাকবে।
আর জান্নাতী ছিল পূর্ব উম্মতের ৭২ ফিরক্বার মাঝে একটি ফিরক্বা। সেটিও এই উম্মতে পূর্ব পদ্ধতি অনুযায়ী থাকবে। শুধু বাড়বে একটি বাতিল ফিরক্বা এই উম্মতে। যেই বাতিল ফিরক্বার কোন নজীর পূর্ব উম্মতের মাঝে ছিল না। সেই বর্ধিত বাতিল ফিরক্বাটি কারা? আল্লামা কুরতুবী রহঃ তার প্রণীত তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-


. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء ، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة.( الجامع لأحكام القرآن
المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفى : 671)
যেই ফিরক্বাটি উম্মতে মুহাম্মদীদে বাড়বে তারা হল-ওলামাদের সাথে শত্রুতা করবে, আর ফুক্বাহাদের প্রতি রাখবে বিদ্বেষ। এই গ্রপটি পূর্ব উম্মতের মাঝে ছিল না। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}
স্বীকৃত বুযুর্গদের যারা মুশরিক বলে, যারা বেদআত ও শিরকের বিরুদ্ধে আমরণ করে গেছেন জিহাদ সে সকল জগত বিখ্যাত আলেম ও ফক্বীহদের যারা শিরক ও বিদআতের দোষে দুষ্ট করতে চায় ওরা যে, এই উম্মতের বাতিল ফিরক্বা একথা বুঝতে নিশ্চয় কষ্ট হবার কথায় নয়।
______________________________________________________________________________________________
এই দলটা কারা? আল্লামা কুরতুবী রঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-

وقد مضى في “آل عمران” معنى قوله عليه السلام : “تفرقت بنو إسرائيل على اثنتين وسبعين فرقة وأن هذه الأمة ستفترق على ثلاث وسبعين” . الحديث. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء ، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة.( الجامع لأحكام القرآن

المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفى : 671)

প্রথম উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ ছিলনা। তাই ইজতিহাদের দুশমনও ছিলনা। এই উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ আছে। তাই ইজতিহাদের দুশমনও আছে। আর এই উম্মতের অতিরিক্ত জাহান্নামী ফিরক্বা হল ইজতিহাদের দুশমন ফুক্বাহায়ে কিরামের দুশমন দল। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}

এই ফুক্বাহাদের দুশমন জাহান্নামী ফিরক্বা বাড়বে উম্মতে মুহাম্মদীতে।

আল্লাহ তায়ালার কাছে ফুক্বাহাদের মর্যাদা

আল্লাহ তায়ালা কতটা মর্যাদা দিয়েছেন ফুক্বাহায়ে কিরামকে, হাদীস কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা দেখলেই তা আমাদের বুঝে আসে।

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}

মন্তব্যসমূহ

  1. আসলে আমরা নানা দলে বিভক্ত হয়েচি!মানবো কোনটা আর কোনটা মানবো না>

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হক্কানী উলামায়ে কেরাম পীরমাশায়ীখ দের ও আহলে সুন্নাত অয়াল জামাত এর উপর মিথ্যারুপ ভণ্ডামির জবাব

তথাকথিত আহলে হাদীসদের ভন্ডামী

আখেরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু'আ মনির হুসাইনের বিশ্ব ইজতেমা বিরুধী পোস্টের জবাব ০১